নিয়োগ থেকে বেতন সব কিছুই বেসরকারীকরণ ! আখেরে লাভ না ক্ষতি ! 

ছাত্র



যে মুহূর্তে দীর্ঘ দুই বছর পর কচিকাঁচারা বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছে, আবার পঠন পাঠন শুরু হচ্ছে বিদ্যালয়ে সেই মুহূর্তে বাইরে বেড়িয়ে এলো সরকারী বিদ্যালয় গুলি বেসরকারীকরণের পথে। রাজ্য সরকার শিক্ষাক্ষেত্র থেকে এবার হাত গুটিয়ে বেসরকারিকরণের পথে যাচ্ছে ! বেসরকারি বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে সরকারি শিক্ষাঙ্গনের জমি, বিল্ডিং সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তুলে দেওয়া হবে। PPP মডেলে রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রকে কীভাবে তুলে দেওয়া হবে তার জন্য খসড়া নীতি তৈরি করেছে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। এমনই খবরে জেরবার স্যোসাল মিডিয়া । কিন্তু কি এই PPP মডেল?



পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) নতুন উন্নয়ন কৌশলে একটি ফ্যাশনেবল স্লোগান হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে গত কয়েক দশকে। এটিকে একটি উদ্ভাবনী ধারণা হিসাবে প্রক্ষিপ্ত করা হয়েছে বেসরকারি সম্পদকে ব্যবহার করা এবং জাতীয় উন্নয়নে বেসরকারি খাতের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য। যখন জনসম্পদ চাহিদা পূরণের জন্য অপর্যাপ্ত বলে অনুমান করা হয় তখন PPP আরও জোরপূর্বক সমর্থন করা হয়। PPP ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন খাতে গৃহীত হচ্ছে, যেমন বিমানবন্দর, রেলপথ, রাস্তাঘাট ইত্যাদির উন্নয়ন। তবে PPP Model এখন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মানব উন্নয়ন খাতেও প্রসারিত করা হচ্ছে।




সম্প্রতি গণশক্তি'তে প্রকাশিত খবর অনুসারে- শিক্ষাক্ষেত্রকে বেসরকারি হাতে দেওয়ার খসড়া নীতির নাম দেওয়া হয়েছে,‘ স্কুল ইন পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (PPP) মোড, ২০২২’। ইতিমধ্যেই স্কুল শিক্ষা দপ্তরের তৈরি করা খসড়া গাইডলাইন পাঠানো হয়েছে শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন বিভাগে। শিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব চিঠি দিয়ে খসড়া নিয়ে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর, কারিগরি শিক্ষা, নগরোন্নয়ন দপ্তর, কলকাতা কর্পোরেশন, সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তর ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের প্রধান সচিবদের কাছে মতামত চেয়ে পাঠিয়েছে। ৩১জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। এরমধ্যে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলিতে মতামত পৌঁছে গেছে শিক্ষা দপ্তরে।



খসড়া নীতিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্য সরকার বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে তুলে দেবে জমি, বাড়ি। বেসরকারি সংস্থাকে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি ও বাড়ি তুলে দেওয়ার জন্য সময়ে সময়ে প্রস্তাব তৈরি করবে। যার মূল উদ্দেশ্য হিসাবে স্পষ্টতই বলে দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পিপিপি মডেলে স্কুল তৈরির জন্য সরকারের তরফে প্রস্তাব (রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল) আসার পর বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা তাতে অংশগ্রহণ করবে। কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারি স্কুলের জমি ও বাড়ি তা ঠিক করার সময় বিনিয়োগে আগ্রহী সংস্থার শিক্ষাজগতে কাজের গুণগত মান ও আর্থিক ক্ষমতা বিচার করবে সরকার। ৮০শতাংশ প্রযুক্তিগত দিকের সঙ্গে ২০শতাংশ আর্থিক সক্ষমতা থাকলেই সরকারি সম্পত্তি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে।

এরফলে একদিকে যেমন সরকার শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নেবে, তেমনই সামান্য অর্থের বিনিময়ে শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের বাধ্য করা হবে শিক্ষাদানে। পিপিপি মডেলে স্কুলে কত শিক্ষক নিয়োগ হবে তার সংখ্যাও ঠিক করার দায়িত্ব বর্তানো হয়েছে বিনিয়োগকারীদের ওপরই।বেসরকারি হাতে যাওয়া স্কুলের পড়ুয়াদের ‘ফি’ ঠিক করবে বিনিয়োগকারী সংস্থাই। খসড়া নীতিতে সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি বিদ্যালয়ের ওপরই- এমনটাই গণশক্তি' পত্রিকায় বলা হয়েছে।



কিন্তু কেন এই উদ্যোগ গ্রহন রাজ্যের? রাজ্য সরকারের তরফে যুক্তি সাজানো হয়েছে, স্কুল শিক্ষা দপ্তরের অধীনে থাকা অব্যবহৃত পরিকাঠামোকে ব্যবহার করে রাজ্যে পিপিপি মডেলে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।


আর এই খবর বাইরে বেড়িয়ে আসতেই বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। তবে এই পিপিপি মডেল রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাতে লাভজনক না ক্ষতিকারক তা নিয়েই কিন্তু দ্বিধাবিভক্ত শিক্ষিত মহল। 


তথ্যসূত্র: গণশক্তি