Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

কুসংস্কার! আজও মাটিতে ঠাঁই গ্রামবাসীদের

কুসংস্কার! আজও মাটিতে ঠাঁই গ্রামবাসীদের

village house





দক্ষিণ দিনাজপুর: 


ইতিহাসকে ঘিরেই কুসংস্কার আর সেই কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে এখনও পর্যন্ত কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে কেউই ঘুমোন না দক্ষিন দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর ব্লকের বেলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরপাল গ্রামের গ্রামবাসীরা।কাঠের নয় মাটিরই তৈরি খাটে অথবা মাটিতে ঘুমোন গ্রামবাসীরা।




এলাকার গ্রামবাসী ও ইতিহাসবিদের মুখে শোনা যায় ১৭০৭ সালে পীরপালের মাটিতে ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির দেহ সমাধিস্থ করা এরপর তিনি দেবতা বা পীর রুপে আবির্ভূত হন বলে বিশ্বাস গ্রামবাসীদের। বীর যোদ্ধাকে মাটিতে সমাধিস্থ করার পর থেকে গ্রামবাসীরা খাটে বা চৌকিতে ঘুমোলে তাদের স্বপ্নাদেশে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হতো।এই ভয়ে বিগত কয়েকশো বছর থেকে পীরপালের গ্রামের মানুষ চৌকি বা কাটে শোন না।আর কেউ যদি ঘুমোন তাহলে সেই পরিবারের সকলে অসুস্থ হয়ে পরে বলে এমনটাই মত গ্রামবাসীদের।


village house




তবে ইতিহাসবিদের দাবি বখতিয়ার খলজিকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গ্রামবাসীরা মাটিতে থাকেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর, হরিরামপুর,তপন কুশমন্ডিতে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার মধ্যে গঙ্গারামপুরের পীরপাল অন্যতম।জেলার ইতিহাসবিদ ও গ্রামবাসীদের মুখে শোনা গেছে ১৭০৭ সালে সুলতানি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে বখতিয়ার খলজি পাল বংশের লক্ষন সেনকে পরাজিত করে সংগ্রামপুর, দেবীকোট সহ গোটা গৌড় দখল করে নেন। লক্ষন সেন প্রান নিয়ে পালিয়ে তৎকালীন বঙ্গে পালিয়ে যান এবং তার সৈনরা পরাজিত হয়ে নদিয়া শহর পর্যন্ত ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। 





অন্যদিকে,তিব্বত ও কামরূপ অভিযান বিফল হলে বখতিয়ার খলজি দেবীকোটে ফিরে তিব্বত অভিযান বিফল এবং সৈনবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতির ফলে লখনৌতির মুসলিম রাজ্যের প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ ও বিরোধ দেখা দিতে শুরু করে।এরই ফলে বাংলার ছোট ছোট মুসলিম রাজ্যগুলি দিল্লীর সঙ্গে সম্ভাব্য বিরোধের আগে থেকেই কোনঠাসা হয়ে এরকম নানাবিধ চিন্তা এবং পরাজয়ের গ্লানিতে বখতিয়ার খলজি প্রচন্ডভাবে অসুস্থ ও শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।এর অল্প কিছুদিন বাদে বাংলার ১২০৬ বঙ্গাব্দে ও ইংরেজি ১৭০৭ খ্রীষ্টাব্দে তিনি শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন কেউ কেউ অনুমান করেন বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পিছনে তার প্রধান সেনাপতি আলিমর্দান খলজির হাত ছিল।এরপর বখতিয়ারের মৃতদেহ পীরপালে সমাধিস্থ করা যেহেতু তিনি বীরযোদ্ধা ছিলেন তাই তিনি পীর রুপে আবির্ভূত হন বলে গ্রামবাসীদের মত।তারপর থেকে এলাকার বিশেষ করে বয়স্করা চৌকি অথবা খাটে ঘুমোন না।




এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষন করেন জেলার ইতিহাসবিদ সুমিত ঘোষ।তিনি বখতিয়ার খলজি যেহেতু বীরযোদ্ধা ছিলেন,তাই তাকে সম্মান জানাতে পীরপালের মানুষ মাটিতে ঘুমোয়।তবে ঐ এলাকার মানুষের মধ্যে কিছু কুসংস্কার আছে।যেহেতু বীরযোদ্ধা বখতিয়ার খলজি পীরপালের মাটিতে শায়িত আছেন তাই গ্রামবাসীরা কাঠের তৈরি চৌকি বা খাটে ঘুমোন না।তবে এই বিষয়ে পীরপালের বয়স্ক এক গ্রামবাসী রাজেন রায় বলেন,কয়েশো বছর আগে থেকো এই গ্রামের মানুষ মাটিতে ঘুমোয়।চৌকি বা খাটে ঘুমোলে স্বপ্নাদেশে তাদের ভয় দেখানো হয়।আর পরিবারের সকল সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ে।তাই এ গ্রামের মানুষেরা আজও মাটিতে ঘুমোন চৌকি বা খাটে কাউকে ঘুমোতে দেন না পাছে কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে এলাকার মানুষ ও গ্রামবাসীরা আজও মাটিতে ঘুমাই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code