সবাই যখন আলোর রোশনাইয়ে ওরা তখন অন্ধকারে - মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত নবম- দশম এবং একাদশ- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ

class 9 to 12 teacher




চলতি বছরের ৮ ই অক্টোবর থেকে কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃতীয়বারের জন্য পুনরায় ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত নবম- দশম এবং একাদশ- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ। 

২০১৬ সালে নবম- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য এস এল এস টি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে প্রকাশিত গেজেট লঙ্ঘন,অস্বচ্ছতা, মেধাতালিকা ভুক্ত সামনের সিরিয়ালে থাকা প্রার্থীদের বঞ্চিত রেখে অনেক পিছনের দিকে সিরিয়ালে থাকা প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি মেধাতালিকায় নাম না থাকা অযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক- শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলেও উঠেছে অভিযোগের তীর। যা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঐতিহাসিক নজির বলেই মনে করছে পরীক্ষার্থীরা। 

ফলে মেধা তালিকাভুক্ত বহু যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত হয়ে বার বার অনশন এবং ধর্ণায় বসতে হচ্ছে। তবুও মেধাতালিকা ভুক্ত বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনোরকম দ্রুত পদক্ষেপ স্কুল সার্ভিস কমিশন গ্রহণ করছে না। শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল, সেই গেজেট নামমাত্র বলে জানিয়েছেন- ধর্ণা মঞ্চের স্টেট কো- অর্ডিনেটর সুদীপ মন্ডল

সুদীপ মণ্ডল জানিয়েছেন-  "গেজেটের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অংশ সুকৌশলে কমিশন এড়িয়ে গেছে। গেজেটে চাকরি প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার নম্বর, একাডেমিক স্কোর, ভাইভার নম্বর প্রকাশের কথা উল্লেখ থাকলেও কমিশন চাকরি প্রার্থীদের নম্বর ভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি।পাশাপাশি সাবজেক্ট, ক্যাটেগরি গুলিতে গেজেটে উল্লিখিত ১:১.৪ অনুপাতে ডাকার নিয়ম ও লঙ্ঘন করেছে। আবার আপডেট শূন্যপদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়মে থাকা সত্ত্বেও আপডেট শূন্যপদে নিয়োগ করেনি কমিশন। 

যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল গুলি শিক্ষক অভাবে ভুগছে। প্রায় লক্ষাধিক শূন্যপদ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল গুলিতে। ছাত্র- শিক্ষক অনুপাতের ক্ষেত্রেও বিস্তর ফারাক রয়েছে স্কুল গুলিতে। লকডাউনে বহু শিক্ষক- শিক্ষিকার অবসর হয়েছে। জেনারেল টান্সফারের ফলে বহু স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি। অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ হচ্ছে না। তার ওপর শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি চাকরি প্রার্থীদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। 

নবম- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগের যে মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেই তালিকায় কেবলমাত্র চাকরি প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর, Rank নম্বরের উল্লেখ ছিল কিন্তু প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর গুপ্ত রাখা হয়েছিল। এখানেই দুর্নীতির রহস্য লুকিয়ে ছিল বলে দাবী করেছে ধর্না মঞ্চ।


শুধুমাত্র তাই নয়, মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও কোনো রকম কারণ না দেখিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রকাশিত মেধাতালিকায় নতুন কিছু চাকরি প্রার্থীদের নাম পরবর্তীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছে ধর্ণামঞ্চ। 

প্রসঙ্গত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এইরূপ বহুবিধ অস্বচ্ছতা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে অরাজনৈতিক ভাবে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ব্যানারে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধা তালিকাভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ ২৯ দিন ব্যাপী অনশনে বসেছিলেন। যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো- অর্ডিনেটর হলেন সুদীপ মন্ডল। উক্ত অনশন মঞ্চে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়  এসেছিলেন।  মুখ্যমন্ত্রী মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীগণ যাতে বঞ্চিত না হয় তার সুব্যবস্থা তিনি করবেন। প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করেও মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের সুব্যবস্থা করা হবে। উনার উপর চাকরি প্রার্থীদের ভরসা রাখার কথাও বলা হয়।

উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য অনশন কারীদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বলে জানা গিয়েছে। যে কমিটি বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের পাঁচ জন এবং প্রশাসনিক স্তরের পাঁচ জনকে নিয়ে গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন মাননীয়া। 

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে চাকরি প্রার্থীদের সমষ্টিগত সমস্যার সমাধান না করেই বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের একাংশ সহ তাদের ঘনিষ্ঠ চাকরি প্রার্থীদের Rank ব্রেক করে পিছনে দিকে থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ করেন কমিশন অথচ সামনের দিকের চাকরি প্রার্থীগণ আজও বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেছেন সুদীপ মণ্ডল। 

যার ফলেই বাধ্য হয়ে  শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আন্দোলন, অবস্থান বিক্ষোভ এবং অনশন। যা প্রায় ছয় মাস ধরে চলেছিল। এরপর বর্তমান স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর বার্তা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হয়। নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের সমস্যার বিষয়টি কমিশন পজেটিভ দিক থেকে দেখছে যাতে সমস্যার সমাধান হয়। প্রায় চল্লিশ দিন সময় নিয়েছিল কমিশন। কিন্তু উক্ত সময় অনেক দিন আগেই পেরিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে মেধাতালিকা ভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ মহামান্য হাইকোর্টের পারমিশন নিয়ে এই বছর ৮ ই অক্টোবর তৃতীয়বারের জন্য কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে শান্তিপূর্ণ ধর্ণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের স্টেট কো- অর্ডিনেটর সুদীপ মন্ডল জানিয়েছেন যে ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের ২৯ দিন ব্যাপী যে অনশন হয়েছিল, উক্ত অনশন মঞ্চে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন এবং মেধাতালিকা ভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের কথা দিয়েছিলেন যে মেধাতালিকা ভুক্ত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করেও হলে মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগের সুব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ২০২১ সাল শেষ হতে চলেছে এই সুদীর্ঘ সময়েও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস এখনও কার্যকর হয়নি। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে বার বার ধর্ণায় বসতে হচ্ছে। 

আজ যখন সকলে আলোর রোশনাইয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে আছেন তখন এক বুক আশা নিয়ে অন্ধকারে বসে আছেন চাকরী প্রার্থীরা।