মায়েদের মনে আর কোনো কালিমা নেই: ৫০ শতাংশ মা ডেটিং অ্যাপের পক্ষে
~ কলকাতার যুবক, যুবতীদের মায়েদের ৮৫ শতাংশ প্রেমের বিয়ের পক্ষে ~
কলকাতা, ৪ অক্টোবর, ২০২১:
বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়া অধিকাংশ ভারতীয় কয়েক লক্ষ বার মায়ের বিয়ে করার অনুরোধ, অর্থাৎ ‘সম্বন্ধ দেখা’-র অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছে। হোয়াটস্যাপে অসংখ্য সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর ছবি দেখা এবং ‘ঘটক মাসিমা’-র উদ্যোগে সেই ছবির মানুষটি ও তার পরিবারের সাথে আচমকা সাক্ষাতের ঘটনাও প্রায়ই ঘটে। তবে সারা দেশের ৫,০০০ যুবক, যুবতীকে নিয়ে করা এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে মিলেনিয়াল এবং জেনারেশন জি (Gen Z) ছেলেমেয়েদের মায়েদের ৫০ শতাংশ এখন বদলের হাওয়া গায়ে লাগাতে রাজি। ছেলেমেয়েরা তাদের চিরজীবনের সঙ্গী ডেটিং অ্যাপ থেকে খুঁজে নেবে, এ ব্যাপারে তাঁরা ক্রমশ স্বচ্ছন্দ হয়ে উঠছেন।
ট্রুলিম্যাডলি এই সমীক্ষা চালিয়েছিল ভারতে এই মুহূর্তে ডেটিংয়ের সাথে কী কী কলঙ্ক জড়িয়ে আছে তা খুঁজে বার করতে। এই সমীক্ষার ফল থেকে এ-ও জানা যাচ্ছে, যে কলকাতার ৮৫ শতাংশ মা ছেলেমেয়েদের বিয়ের জন্য ক্রমশই আরও বেশি করে প্রেমের বিয়েতে ভরসা করছেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার:
● ৪৫ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা বলেছেন বাবার চেয়ে মা তাঁর বিয়ে নিয়ে বেশি চিন্তায় আছেন। ছেলে, মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা সত্যি।
● টিয়ার ১ আর টিয়ার ২ শহরগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলা আর ৮০ পুরুষ উত্তরদাতা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাঁদের মায়েরা প্রেমের বিয়ের পক্ষে। অর্থাৎ এমন একটা সময়ে, যখন মিলেনিয়াল মেয়েরা শিক্ষা এবং কেরিয়ারে মন দেওয়ার জন্য বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছেন, তখন ‘থিতু হওয়া’-র ব্যাপারে তাঁদের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।
● Gen Z আর মিলেনিয়ালদের মায়েদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার জন্য ডেটিং অ্যাপের ব্যবহারে বিশ্বাস আছে। উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ তেমনই ইঙ্গিত করেছেন। এই ধারণা আরও জোরদার হয় এই তথ্য থেকে যে ২০ শতাংশেরও কম উত্তরদাতা বলেছেন তাঁদের মায়েরা ‘ডেটিং অ্যাপ সম্বন্ধে কিছু জানেন না’। আর মাত্র সাত শতাংশ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তাঁদের মায়েরা ডেটিং অ্যাপ পছন্দ করেন না।
● জয়পুর, ইন্দোর আর লখনৌয়ের মত নন-মেট্রো শহরগুলোর মায়েরা মেয়েদের পছন্দ প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে ক্রমশই অগ্রণী হয়ে উঠছেন। ওইসব জায়গার উত্তরদাতাদের ৫৫ শতাংশ বলেছেন ছেলেদের বিয়ের জন্য বেশি চাপ দেওয়া হয়। মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু আর কলকাতার মত মেট্রো শহরগুলোতে বেশি সংখ্যক মেয়ে কাজ করতে বেরোন। সেখানে ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন মায়েরা মেয়েদেরই বেশি চাপ দেন।
● ৬০ শতাংশ উত্তরদাতার ধারণা মায়েরা এখনো মেয়েদের কেরিয়ার এবং লেখাপড়ার তুলনায় বিয়েকে অগ্রাধিকার দেন, যেখানে ৪৬ শতাংশ বলেছেন ছেলের কেরিয়ার আর লেখাপড়ার তুলনায় বিয়েকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ৫৪ শতাংশ মনে করেন মায়েরা ছেলের কেরিয়ার আর শিক্ষা নিয়ে বেশি চিন্তা করেন।
● মায়েরা এখনো বিয়ে সংক্রান্ত আলোচনায় নিরাপত্তা, বয়স এবং সমাজের প্রশ্ন তোলেন। ‘আমরা আজ আছি কাল নেই’, ‘এরপর কাউকে পাবে না’ আর ‘লোকে কী বলবে’।
● মায়েরা সময়ের সাথে সাথে বদলালেও ২২ শতাংশ উত্তরদাতা ডেটিং অ্যাপ নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপারে সঙ্কোচ বোধ করেন, অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মা ব্যাপারটা মেনে নেবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
স্নেহিল খানোর, কো-ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, ট্রুলিম্যাডলি, বললেন “আমরা ডেটিং নিয়ে ভারতে যে কলঙ্ক এবং আশঙ্কাগুলো আছে সেগুলো বোঝার জন্য এই সমীক্ষা করতে নেমেছিলাম। কিন্তু একেবারে বদলে যাওয়া মানসিকতার সন্ধান পেলাম। শুধু তরুণ প্রজন্মের নয়, তাদের বাবা-মায়েদেরও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই বিবর্তনের অনেকটাই ঘটেছে আমাদের সমাজে মহিলাদের অধিকার নিয়ে লড়াই করার অবিরাম প্রচেষ্টা, লিঙ্গ বৈষম্য কমানো এবং লিঙ্গ সম্বন্ধে স্টিরিওটাইপিংয়ের বিরুদ্ধে সংবেদনশীলতা তৈরি করার প্রয়াসের ফলে। তাছাড়া ফিল্ম আর সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক বেশি স্বাধীনচেতা কনটেন্ট দেখার ফলে মায়েরা সন্তানদের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করার ক্ষেত্রে মানানসই হওয়া এবং বিশ্বাসকে অগ্রাধিকার দিতে পারছেন। সমীক্ষার এই ফলাফলগুলো একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেয়, সেটা হল, যে মায়েদের প্রায়শই মনে করা হয় শতাব্দী প্রাচীন সামাজিক বিধিনিষেধে বাঁধা পড়ে আছেন, তাঁরা সেই বাঁধন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন। মায়েরা বিয়ে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। অতএব এই ধারণা করা নিরাপদ, যে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানটার প্রতি যে তরুণ প্রজন্ম বিরূপ হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছিল, তারা আসন্ন বছরগুলোতে ওটা নিয়ে আরও সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করবে। আমরা সেই যাত্রার অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊