স্বাধীনতা ৭৫'র ভাবনায় সেজে ওঠা পূজোর উদ্বোধন করলেন শহীদের মা
কোলাঘাট,সুজিত মণ্ডল
কোলাঘাট নতুন বাজারে সংকেত ও ছাত্র সংঘ'র দূর্গা পূজো এবার ৪৯তম বর্ষে পদার্পণ করল। এখানে মন্ডপ , পূজো অঙ্গন এবং প্রতিমা গড়ে তোলা হয়েছে দেশের স্বাধীনতা পঁচাত্তর কে সামনে রেখে জাতীয়তাবোধের ভাবনায়।
এই আয়োজনের উদ্বোধন করলেন কাশ্মীরের উরি কান্ডে নিহত ভারতীয় জওয়ান গঙ্গাধর দোলুই'র মা শিখা দোলুই। উপস্থিত ছিলেন শহীদের বাবা ওঙ্কারাথ দোলুই এবং একমাত্র ছোট ভাই বরুন দোলুই। বিশেষ অতিথি সম্মানে আমন্ত্রিত ছিলেন ভারতীয় সুরক্ষাবাহিনীর কয়েকজন প্রাক্তন সৈনিক সহ একজন প্রাক্তন কর্নেল সাহেব।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ১৮ই সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরিতে যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করে পাক সেনা ও জঙ্গিরা অতর্কিত হামলা চালালে ১৯জন ভারতীয় সেনা নিহত হন। এরমধ্যে ছিলেন হাওড়া জেলার আমতা থানার বাইশ বছরের অবিবাহিত যুবক বিহার রেজিমেন্টের সিপাহী গঙ্গাধর দোলুই। মধ্যবিত্ত ঘরে দুই ভাইয়ের বড়ভাই গঙ্গাধর দেশকে ভালোবেসে এবং জীবীকার জন্যই দেশের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় গঙ্গাধরের প্রানহীন দেহ কফিনবন্ধি হয়ে আমতার বাড়িতে এসেছিল এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানে চির বিদায় জানানো হয়।
তার পরেই ভারতের পক্ষে যোগ্য জবাব দিতে পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মাটিতে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে"র মাধ্যমে আক্রমণ করা হয়েছিল।
কোলাঘাটে এদিন শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে শহীদের মা শিখা দেবী অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, " চোখ বোঝালেই যেন ছেলের মা মা ডাক শুনতে পাই। আমি যে মা, তা ভুলি কি করে! আমার ছেলে দেশের জন্য প্রান দিয়েছে। আপনারাও ওদের ভুলেননি। আজো এইভাবে স্মরণ করছেন। সন্তান হারা মা হয়ে এইটুকুই আমার পরম স্বান্তনা।"
উপস্থিত প্রাক্তন কর্নেল দেবজ্যোতি সিং বলেন,- পূজো উৎসব মানেই হৈ-হুল্লোড় আনন্দফূর্তি। তার মধ্যেই এখানে দেশমাতৃকার সেবায় নিবেদিত ও নিয়োজিত মানুষদের দারুনভাবে সম্মান জানানো হচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। দেশাত্মবোধের বার্তা দেওয়া হয়েছে। আমি অভিভূত।
এখানে দূর্গাবাহীনীর সাজ-সজ্বায়, মন্ডপে ও তোরণদ্বারে , মডেলে ও প্রদর্শনীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন অধ্যায় ও ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। এছাড়াও কোলাঘাট সংকেত ও ছাত্র সংঘের মন্ডপের অঙ্গ স্বজ্জায় মহামারি প্রতিরোধ, পরিবেশ দূষন, প্লাস্টিক বর্জন, নারী নির্যাতন, পথ নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সমাজ শিক্ষা ও সমাজ সচেতনতা মূলক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
আয়োজকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ দাস বলেন,-"আমরা এই পূজো কমিটির উদ্যোগে সারা বছরই বহুমুখী ও বিরামহীনভাবে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আর্তের সেবা ও জন-সচেতনতার কাজ করে চলেছি। এই বৎসর সম্পূর্ণ কোভিডবিধি মেনে সীমিত আয়োজনের মধ্যেই জাতীয়তাবোধ উদ্বুদ্ধকরণে স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষকে স্মরণ করছি"।
উদ্যোগক্তাদের পক্ষ আরো জানানো হয়েছে, সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ নিয়ে পূজোর কদিন পথ নিরাপত্তা বিষয়ক বসে আংকা, পোস্টার তৈরী, কুইজ , বক্তব্য , চিত্র প্রদর্শনের ও পথপরিক্রমা কর্মসূচী রূপায়িত হবে। বিতরণ করা হবে প্রায় বিশ হাজার মাস্ক , হাতশুদ্ধি ও করোনা প্রতিরোধক প্রচার পত্র।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊