বন্ধ হতে চলেছে পদ্মশ্রী সিনেমা- আক্ষেপের সুর চিত্রকর ও সঙ্গীত শিল্পী সৌমিতা সাহার কলমে
ইতিমধ্যেই কলকাতায় মিত্রা, এলিট, মালঞ্চ, রক্সি-র মতো জনপ্রিয় সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এইবার সেই নামের তালিকায় জুড়তে চলেছে ' পদ্মশ্রী '-র নাম। টালিগঞ্জের প্রথম সিঙ্গেল স্ক্রিন হলো 'পদ্মশ্রী'। সম্প্রতি এই হলটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেন হলের মালিক।
১৯৬০ সালে প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটর নারায়ণ সাধুখাঁ এই হলটির জন্ম দেন দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়া এলাকায়। এই হলের আসন সংখ্যা ছিল ৭২০।
উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত 'চাওয়া-পাওয়া' ছবির মধ্য দিয়ে এই হলের পথচলা শুরু হয়। ৫০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা অবধি টিকিটের দাম হতো এখানে। একসময় দর্শকদের লম্বা লাইন লেগে থাকতো হলের সামনে৷ ছবি দেখার জন্য হলের ভেতর জনসমুদ্র হতো।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে সেই যে তালা পড়লো, তারপর এখনও সেই তালা ঝুলেই আছে হলের সদর দরজায়৷ পদ্মশ্রী হলের মালিকরা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন- "মাল্টিপ্লেক্সের যুগে সিঙ্গেল স্ক্রিন চালানো ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। করোনা আবহে কার্যত সিঙ্গেল স্ক্রিন পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই হলটি বিক্রি করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। যে বা যারা এই হলটি কিনবেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন আদৌ এটা সিনেমা হল থাকবে কি থাকবে না।"
নেটপাড়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের মধ্যে দেখা যায় নস্টালজিয়া। কলাকুশলীদের মধ্যে, বিশেষ করে দক্ষিণ কলকাতা নিবাসী কলাকুশলীদের মধ্যে ও একই প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়।
স্বনামধন্যা গায়িকা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত চিত্রকর সৌমিতা সাহা তার ফেসবুক অফিসিয়াল পেইজ এ লেখন "দেখতে দেখতে আমার শহরটা কেমন যেন পাল্টে গেল। রাস্তার ধারে দোকান ভাঙ্গা পড়ে চৌরা হল রাস্তা। চোখ ধাঁধানো আলো। কত বাড়ি ভেঙ্গে হল ফ্ল্যাট। কত নতুন লোক এলেন, আমাদেরই একজন হয়ে উঠলেন। স্কুল জীবনে শুনেছিলাম এক সময় ডাবড় কম্পানি ছিল, ওই জায়গায় তৈরি হল শপিং মল ও হাউসিং সোসাইটি। সেই সোসাইটির একটিতে বার কয়েক আমি শো করেছি। কিন্তু হই " যাক পুরাতন স্মৃতি"-র শ্রোতে গা ভাসানো যে সুখকর হতেই হবে, এমন কি বলা যায়?
যেদিন 'পদ্মশ্রী' বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা কানে এলো কেমন যেন একটা মন খারাপ করা শুরু হল। আমি প্রগতিশীল নাগরিক হলেও ওই কি যেন বলে .... "Mordern.... Mordern না" । আমি মাল্টিপ্লেক্সে যাই সিনেমা ও দেখি, তবে এই ছেলেবেলার মূহুর্ত গুলোর উপর বুলডোজার চলবে , গড়ে উঠবে নতুন কিছু , ভাবলে কেমন ভারাক্রান্ত হয় মন। জীবনে প্রথম সিনেমা পদ্মশ্রীতেই দেখেছিলাম, শেষ দেখেছিলাম 'lootera' । জীবনের একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। লেখাপড়ার চাপ, ব্যাক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন, একটা টক্সিস রিলেশনশিপ সব মিলিয়ে মাল্টিপ্লেক্সে যাওয়ার সামর্থ পকেটেই থেমে থাকে, তৈরি হয়ে গাড়ি চড়ে যাওয়ার মনের জোর আর ছিলনা। মন খারাপের ওষুধ সেই ' সিনেমা ' , দেখলাম ' পদ্মশ্রী '-তে। এই সিঙ্গল স্কৃন হলটা আর থাকবে এটাই বাস্তব। কিন্তু মন মানতে চায়না কি করব dil to bachcha hai ji..."
তিনি আরও বলেন " একসময় পার্কস্ট্রিটের এক বিক্ষাৎ মিউজিক স্টোর কফি শপে পরিনত হওয়ায় বাবা ও তার জেনেরেশনের শিল্পীদের আক্ষেপ দেখেছি খুব কাছ থেকে, আজ বোধহয় রিলেট করতে পারি।"
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊