রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাসের উত্তরসূরী কবি শঙ্খ ঘোষ




কবিতারা আজ স্তব্ধ। মৃত্যু কেড়ে নিল বাংলা সাহিত্য জগতের বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষকে। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।


কয়েকদিন আগেই করোনা আক্রান্ত হন তিনি। গত ১২ই এপ্রিল থেকে সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। পরে করোনা পরীক্ষা করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রিপোর্ট পজিটিভ আসলেও হাসপাতালে ভ্র্তি হতে চাননি তিনি। ছিলেন বাড়িতেই, নিভৃতবাসে। হোম আইসোলেশনেই চলছিল চিকিৎসা। আজ সকালেই তাঁর প্রয়াণ হয়। শক্তি-সুনীল-শঙ্খ-উৎপল-বিনয়, জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতার এই পঞ্চপাণ্ডবের বাকি চার জন চলে গিয়েছিলেন আগেই। এবার চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষও।


১৯৩২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশের বর্তমান চাঁদপুরে জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। শঙ্খ ঘোষ বড় হয়েছেন পাবনায়। আসল নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। তার পিতা মনীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং মাতা অমলা ঘোষ। ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।


বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন।দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও জীবনানন্দ দাসের উত্তরসূরী ছিলেন।


শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা, কবিতাসংগ্রহ, এখন সময় নয়, গোটাদেশজোড়া জউঘর, হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ, প্রতি প্রশ্নে জেগে ওঠে ভিটে, প্রিয় ২৫ : কবিতা সংকলন, বহুস্বর স্তব্ধ পড়ে আছে। প্রেমের কবিতা, শঙ্খ ঘোষর কবিতাসংগ্রহ সহ একাধিক কাব্যগ্রন্থ পাঠকের মন ছুঁয়ে গিয়েছে। আপামর বাঙালি তাঁকে রাখে মননে। শুধু তাই নয় কবিতার মুহূর্ত, ছন্দময় জীবন, ইচ্ছামতির মশা : ভ্রমণ সহ একাধিক গদ্যগ্রন্থ রয়েছে তাঁর। শিশু কিশোরদের জন্য লেখা একাধিক গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। 


বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিঃ লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। এছাড়াও পদ্মভূষণ পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার-সহ আরও একাধিক পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। 


আজ ২১শে এপ্রিল ২০২১, বুধবার চিরতরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন রেখে গেলেন তাঁর লেখা অজস্র লেখনী। যাকে বুকে ধরেই বাঁচবে বাঙালী।