অবশেষে স্বপ্নপূরণ, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের দয়ানন্দ গরানী



অবশেষে স্বপ্নপূরণ, ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের দয়ানন্দ গরানী 


নিজস্ব সংবাদদাতা, শচীন পাল 

কোলাঘাট তথা পূর্ব মেদিনীপুরের ক্রিকেট মহলে খুশির হাওয়া। থ্রো ডাউন বোলার কাম সহকারী ম‍্যাসিয়র হিসেবে ভারতীয় সিনিয়র ক্রিকেট টিমে সুযোগ পেলেন পূর্ব মেদিনীপুরে জেলার কোলাঘাটের দয়ানন্দ গরানী। ১২ নভেম্বর,২০২০ বৃহস্পতিবার ভারতীয় দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে উড়ে যাচ্ছেন দয়ানন্দ। ভারতীয় দলে তাঁর এই সুযোগে খুশির হাওয়া গোটা অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা বাংলার ক্রিকেট প্রেমী মহলে। এবারের আই.পি.এল. এ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব টিমে ও বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে অন্ধপ্রদেশ রঞ্জি টিমে তাঁর লাগাতার ভালো পারফরম্যান্স তাঁকে এই সুযোগ এনে দিল। 


আর তাঁর এই যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না। সচরাচর গ্রামীণ এলাকায় ডিউস বল খেলার চর্চা প্রায় নেই বললেই চলে। সেরকম একটা জায়গা থেকে একেবারে গ্রামীণ পরিবেশ থেকে আজ ভারতীয় টিমে জায়গা করে নেওয়াটা শুধু কঠিন কাজ নয়, যেকোনো কারো জীবনের একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আজ ওঁর এই সাফল্য গ্রাম বাংলার ছেলেদের ভাবাতে শেখাবে, যে একান্ত নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কঠিন অধ্যাবসায়, নিজের প্রতি বিশ্বাস, নীরবে অনুশীলন করার ক্ষমতা, মনের জোর থাকলেই দেশের হয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখা যায়। ঠিক এভাবেই আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকে ভারতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নৈছনপুর এক্সপ্রেস অশোক দিন্দা। দুজনেই যে গ্রামীণ পরিবেশ থেকে উঠে এসেছেন তা মোটেও ক্রিকেটের অনুকূল ছিল না। 


দয়ানন্দের এই সুযোগ শুধু ওর নিজের গ্রাম পূর্ব মেদিনীপুররের কোলাঘাট জামিত্যার কাছেই নয় গোটা পশ্চিমবঙ্গ বাসীর কাছেও আনন্দের ও গর্বের ।বাংলার ক্রিকেট ইতিহাস থেকে মোটামুটি ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এর আগে কোনো বাঙালি ম্যাসিয়র কাম থ্রো ডাউন বোলার হিসেবে ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি। যদিও থ্রো ডাউন বোলাররা বর্তমান ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিয়েছে। দয়ানন্দ ডান হাতে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার এবং বাম হাতে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে থ্রো ডাউন বল করতে পারেন। দু হাতে লাগাতার বল ছোঁড়া ও ফিটনেস ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন এক কাজ, যা তিনি নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তা ধরে রেখেছেন।




আজ থেকে প্রায় পনেরো- ষোল বছর আগে জামিত্যা গ্রাম থেকে একটি কমবয়সী ছেলে "কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাব ৮০ " তে এসেছিল নেহাতই ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য। ছিপছিপে দেহের গড়ন। অসম্ভব বডি ফিটনেস। ছোট থেকেই নিজের ইচ্ছাতেই খুব সুন্দর ম্যাসাজ করতে পারতেন। মিডিয়াম পেস বল করতেন।সেই সুবাদে কলকাতায় যাওয়া। পরবর্তীকালে পুলিশ ক্লাবের সাথে যুক্ত হওয়া। মাঝে নিজেকে মূল খেলা থেকে সরিয়ে স্পোর্টসের ফিটনেস ট্রেনিং এর দিকে অর্থাৎ ম্যাসিয়র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব‍্যস্ত ছিলেন। ইতিমধ্যে স্ট্রেংথ অ্যান্ড স্ট্যামিনা সংক্রান্ত কোর্স করে নিয়েছিলেন। তারপরেই অন্ধ্রপ্রদেশ রঞ্জি টিমে ফিল্ডিং কোচ কাম ফিজিও হিসেবে সুযোগ পাওয়া তাঁর জীবনের প্রথম সাফল্য। আর এই সাফল্যের পেছনে বাংলা রঞ্জি দলের ট্রেনার সঞ্জীব দাস (হারুদা) তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তারপর ২০২০ সালে আই.পি.এল এ এবং ভারতীয় দলে সুযোগ। সারা পৃথিবীময় এক কঠিন সময়ে দয়ানন্দের এই জোড়া সাফল্যে খুশি তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। "কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাব ৮০" সাথে যুক্ত দু-দুজন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অংশ হয়েছেন।তাই গর্বিত ক্লাবের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সদস্যরা। 



বর্তমান সময়ে "কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাব ৮০",আর অন‍্যান‍্যদের মতো জেলার ক্রিকেটকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। কৌশিক ভৌমিক (লাট্টু দা) "কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাব ৮০" এর কোচিং এর দায়িত্ব নিজে কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বিগত ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁর তত্ত্বাবধানেএই কোচিং সেন্টার চলছে। দয়ানন্দর মতই বহু ছেলে এখান থেকে শুরু করছ জীবন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আর কোলাঘাট তথা জেলার ক্রিকেটকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন লাট্টুদার পাশাপাশি দয়ানন্দ, অশোক দিন্দা, বিদর্ভ রঞ্জি টিমে সুযোগ পাওয়া ঋত্বিক চ্যাটার্জী, ঝাড়খন্ড রঞ্জি টিমে সুযোগ পাওয়া নন্দন অথবা ভিভিএস লক্ষ্মণ এর সঙ্গে কাজ করতে থাকা দেবল চৌহানের মত ছেলেরা। যেমন ভাবে স্বপ্ন দেখিয়েছিল বর্তমান লন্ডন নিবাসী অমিত প্যাটেল, গোপাল ভূঁইয়া। এমনকি গত বছর কোলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দাত্তু ফাদকার ট্রফি রানার্স হওয়ার পেছনেও লাট্টুদার ভূমিকা অনস্বীকার্য।


মাটিতে পা রেখে চলা এবং প্রচারের আড়ালে থেকে নিঃশব্দে এগিয়ে চলা দয়ানন্দ যাতে তাঁর সাফল্য ধরে রাখতে পারেন,সেই কামনাই করছেন ক্রীড়াপ্রেমী শিক্ষক, তথা দয়ানন্দকে খুব কাছ থেকে দেখা তাঁর অন‍্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী সুজন বেরাসহ অন্যান্য শুভানুধ্যায়ীরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ