বিশ্ব পর্যটন দিবসে ফিরে দেখা উত্তরের কিছু পর্যটন কেন্দ্র 





করোনা কালে লকডাউনের ফলে সর্বনাশ ঘটেছিলো পর্যটন শিল্পে (Tourism)। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো বাংলার শীর্ষ পর্যটনস্থল দার্জিলিং (Darjeeling) থেকেই তরাই-ডুয়ার্সের পর্যটন কেন্দ্রগুলি। করোনায় যে শিল্প গুলি সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পর্যটন শিল্প ছিলো তার মধ্যে অন্যতম।

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবসে  এক বুক আসা নিয়ে স্বপ্ন দেখছে এবার পূজায়  পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে আবার পর্যটকরা আসা শুরু করবে। আবার আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবে পর্যটন কেন্দ্র গুলি। 

আসুন আজ বিশ্ব পর্যটন দিবসে (world tourism day) দেখা নেওয়া যাক উত্তরের (north bengal tourist spot) কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র। 



চিলাপাতা


উত্তরবঙ্গের মোহময়ী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমন পিয়াসী মানুষদের বারবার আকৃষ্ট করে। তার উপর যদি ডুয়ার্স হয়, তাহলে তো কোন কথাই নেই। আলিপুর দুয়ার জেলা সদর থেকে ২০ কিমি দূরে ডুয়ার্সের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চিলাপাতা।  


এই বনটি জলদাপাড়া ও বক্সা জাতীয় উদ্যানের মধ্যবর্তী হাতি করিডোর। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু দেখা যায়।  আগে গণ্ডার দেখা যেত-এখন এখানে গণ্ডার দেখা না গেলেও চিতাবাঘ দেখা যায়। রাভা উপজাতির মানুষেরা এই জঙ্গল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

এখানকার প্রধান পর্যটনের আকর্ষণ হল নলরাজার গড়। এটি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত যুগে নির্মিত স্থানীয় নল রাজাদের দুর্গ।

চিলাপাতাকে ঘিরে পর্যটন গড়ে ওঠার পেছনে বাংলা চলচ্চিত্র 'মনের মানুষ' এর একটা বড় অবদান রয়েছে। চিলাপাতার বানিয়াদহ নদীর পারেই গড়ে উঠেছিল মনের মানুষ সিনেমার সেট। দীর্ঘদিন অভিনয়ের ফলে এখানে লোক সমাগমের সাথে সাথে সাধারণ মানুষের আকর্ষনের কেন্দ্র হয়ে উঠে। বানিয়াবস্তি নাম পাল্টে হয়ে যায় 'মনের মানুষ' পিকনিক স্পট।

গড়ে উঠেছে বেশ কিছু সরকারি এবং বেসরকারি রিসর্ট। যেখানে থেকে সহজেই চিলাপাতা অরণ্যে কাটান যেতে পারে অবসর। প্রকৃতির কোলে নিরিবিলিতে আদিবাসি মানুষের সংস্পর্শে সুন্দর একটা সময় কাটাতে চাইলে অবশ্যই চিলাপাতা হয়ে উঠতে পারে আদর্শ একটা পর্যটন কেন্দ্র।


রূপকথার জয়ন্তী

রূপকথার জয়ন্তী



শহর থেকে দূরে ঘন জঙ্গলে ঢাকা আঁকাবাঁকা রাস্তা যেন কোনও অচিনপুরের পথ। সে পথে হারিয়ে যাওয়ার আনন্দই আলাদা। আলিপুরদুয়ার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বক্সা জঙ্গলের (buxa tiger reserve forest) ধার ঘেঁষা জয়ন্তী (jayanti) বর্তমানে এক জনপ্রিয়, মনোলোভা পর্যটন কেন্দ্র। ভারত-ভূটান সীমান্তবর্তী পাহাড়ে ঘেরা জয়ন্তী নদীর (jayanti river) ধারে এককালে কোনও গ্রাম ছিল বলে শোনা যায়। এখন তার অস্তিত্ব না থাকলেও ব্রিটিশ আমলের রেলপথের চিহ্ন এখনো বিদ্যমান।


বর্তমানে নদীর পারে (jayanti river) সারি সারি হোম স্টে অপেক্ষায় থাকে পর্যটকদের। জয়ন্তিতে (jayanti) যারা ঘুরতে আসেন তারা প্রথমেই খোঁজ নেন ছোট মহাকালের (mahakal)। তবে শুধু ছোট মহাকাল নয় এই জয়ন্তিতেই রয়েছে আরও এক প্রাচীন ধর্মীয় স্থান। নাম পুকুরি মা (pukuri maa) যা বর্তমানে পুকুরি লেক (pukuri lake) নামে সুপরিচিত।

পর্যটকরা যখন এখানে (pukuri lake or pukuri maa) ঘুরতে আসেন তখন অবশ্যই মুড়ি নিয়ে আসেন। কারন এখানে এই বিরাট পবিত্র পুকুরে রয়েছে অসংখ্য বৃহদাকারের মাগুর মাছ। পুকুরের ধার থেকে মুড়ি ছিটালেই তা খাওয়ার জন্য হামলে পড়ে। শুধু মাগুর মাছ নয় রয়েছে অসংখ্য কচ্ছপও।



জয়ন্তীর সমতল থেকে পাহাড়ি পথে প্রায় প্রায় ১ কিমি পথ। তারপরেই পাহাড়ের কোলে এক পবিত্র বৃহৎ জলাশয়। যাকে আমরা সাধারণত পুকুর বলে চিনি, তেমনি এক পুকুর রয়েছে এখানে। পুকুর কে মাতা হিসাবে পূজা করা হয়। তবে পুকুরের পারে ফাঁকা স্থানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্যকরা যায়। বৌদ্ধ পূর্ণিমায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন পূজা দিতে। বুদ্ধ পূর্নিমায় জনসমাগমে মুখর থাকে এই দেবভূমি। তবে শুধু বৌদ্ধরা নন মাঘী পূর্নীমায় হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরাও পূজা দিতে আসেন এই পবিত্র স্থানে।


এখানে একদিকে যেমন পুকুর মাতার পূজা হয়, তেমনি বৌদ্ধদের একটি বেদী রয়েছে এখানে, রয়েছে হনুমানের মূর্তি, শিব ঠাকুরের মূর্তি , রয়েছে কালরাত্রী মা বা মা চন্ডী এবং গনেশ মূর্তিও।


সবমিলিয়ে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এই জলাশয় ঘিরে রয়েছে প্রচুর লোককাহিনী। লোক বিশ্বাসে এক পবিত্র স্থান হয়ে ওঠেছে পুকুরি মা বা পুকুরি লেক ।

চলবে...