এখনো কিছু স্বাধীনতা বাকি পড়ে আছে
আশিস চক্রবর্তী
প্রাগৈতিহাসিক একটা চেতনা সমস্ত জীব কূলের অন্তরেই বিদ্যমান, আর তা হলো পূর্ন স্বাধীনতা। প্রকৃত পক্ষে স্বাধীনতা একটি শর্ত, যেখানে জনগণ মুক্ত বিহঙ্গের মতো পাখা মেলে মাঝ আকাশে উড়তে পারবে। কোন মতেই তা উৎশৃঙ্খলতা অবশ্যই নয়। আমার দেশ বিদেশী রাজশক্তির ক্ষমতার থেকে রক্তক্ষয়ী লড়াই , অহিংসা, অসহযোগ ,আইন অমান্য প্রভৃতি আন্দোলনর পরিনাম হিসেবে মুক্তিলাভ করলেও দীর্ঘ কয়েকটা বছরে আমরা নিজেরাই নিজেদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলেছি।টেনে হিঁচড়ে এনে, হাজারো পরাধীনতার বেড়ি পড়িয়েছি দেশ তথা নিজেদের পদ যুগলে।সেই কষ্টার্জিত মুক্তির স্বাদ কে স্মরণ উপলক্ষে বাহ্যিক আড়ম্বর পূর্ন পনেরোই আগস্ট এ দেখেছি অনুষ্ঠান, উৎসব ,পিকনিক,বিভিন্ন অফিস আদালত বাড়ি ঘরের ছাদে ,ক্লাব ঘর ইত্যাদি স্থানে পতাকা উত্তোলন, ঘোরাঘুরি আর শেষ টাই জাতীয় সংগীত এবং শহীদদের উদ্দেশ্যে এক মিনিটের নীরবতায় এসে থমকে গেছে আমার স্বাধীনতা। অজান্তেই এই নীরবতায় আজ ছেয়ে আছে বিস্তীর্ণ ভারতে। দর্শিত হয়েছে কেবল মিথ্যা কয়েকটি আস্ফালন আর প্রতিশ্রুতির বন্যা। আরও পড়ুনঃ আগামী নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে মিড ডে মিলে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের নির্দেশিকা
অদ্ভুত এক মৌনতা - নিষ্ক্রিয়তা দেখেছি, যখন দেশ মাতৃকার উৎসবে মাতোয়ারা যে জন তারই পিতা- মাতা আজ বৃদ্ধাশ্রমে বিনিদ্র রজনী পাত করছে। যে ব্যক্তি পাতাকা উত্তোলন করলেন তার গৃহ কর্মে নিযুক্ত করা হয়েছে স্কুল বিমুখ এক দরিদ্র শিশু সন্তানকে। এই উৎসব মুখর পরিবেশ থেকে সহাস্যে বাড়ি ফিরে গিয়ে কেউ শুনবে নির্জন রাস্তায় তার কন্যা সন্তান ধর্ষিত হয়েছে অথবা চির হতাশায় নিমগ্ন হয়ে তার কর্মপ্রার্থী পুত্র আত্মহত্যার পথ কেই বেছে নিয়েছে। এই নিষ্ঠুর ভারত ভূমি দেখবার জন্য কি বিপ্লবীরা প্রাণ রূপ পুষ্পার্ঘ নিবেদন করে ছিলেন ভারত মাতার চরণে? অনশন ক্লিষ্ট শরীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া সেসব বাস্তব কাহিনী আজও কি আমাদের বিবেক কে দংশাবে না ? এখনো স্বাধীনতার স্বাদ নেবার আগেই কন্যা ভ্রূণ অভিশাপের মতো উপরে ফেলেছি আমরা। কুসংস্কার আর অশিক্ষার বেড়া জাল টপকে মেলে ধরতে পারিনি আমার পুণ্য ভূমি ভারত কে। কঙ্কাল সার চেহারায় সুসজ্জিত হয়ে দন্ডায়মান আমার দেশ, আমার মা পেড়িয়ে এসেছে স্বাধীনতা র এতো কটা বছর। নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন কারী কৃষকেরা অপূরণীয় স্বপ্ন , ঊর্বর জমি ফেলে ,পরিবার সমেত অকালে ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে।দিগন্ত বিস্তৃত সোনা রাঙা ধান জমছে গিয়ে কোথায় ?কে রাখে তার হিসাব !!
একান্নবর্তী পরিবারে ভাঙন, প্রতিবেশী সমাজের বিষক্রিয়ায় সঙ্গে লড়ে চলেছে আমার ভারত। ক্রমে ক্রমে পঙ্গু করে ফেলেছি আমার ভুমিকে ষষ্ঠ রিপু ক্রিয়ায়। যে শিশু আজই ভূমিষ্ট হলো প্রবল সম্ভাবনার ভাগ্য চক্র হাতে নিয়ে তাকে চিকিৎসার নামে তুলে দেয়া হচ্ছে গড়ল। প্রশ্বাসে সে টেনে নিচ্ছে দূষণ । মাঝে মাঝে সোচ্চার হচ্ছে ভারত ভঙ্গের উচ্চ নিনাদ।এ সুযোগে প্রতিবেশী রাষ্ট্র আজ হাত বাড়িয়ে নৃশংস লীলা খেলায় মেতেছে বারংবার। যদিও প্রতিহত করছে আমার ভারত মাতার বীর সন্তানেরা। সহস্রাধিক প্রণামও এ ক্ষেত্রে কৃপণতা দর্শন হবে সেই শ্রদ্ধেয় মানুষ দের নিকট।। তবে কিসের স্বাধীনতা অর্জনের অহংকারে মত্ত আমরা?
এক মুঠো অন্ন, একটা লজ্জা আবরণ কি একটা মাথা গোঁজাবার ঠাঁই করায়ত্ত করবার প্রয়াসে তীর্থের কাকের মতো বসে রয়েছে আমার ভারতের প্রজাকূল। অন্ধকার নামলে আমার ভারতের কন্যারা গৃহ বন্দি হয়, কিসের ভয়ে? সেখানে স্বাধীনতা কই? ভন্ড রাজনীতির নিশান এখনো কি নামাতে পেরেছি? তাহলে কোথায় বাক স্বাধীনতা? জাতপাত বর্ণ বিদ্বেষে আমার ভারতকে প্রতিনিয়ত চূর্ণ বিচূর্ণ হতে দেখছি! অর্থের রকম ফেরে এখনো জেগে আছে মাৎসন্যায়। সুস্বাস্থ্য , পুষ্টি লাভের আশায় অবহেলায় পড়ে থাকতে দেখছি পথ শিশু কে। স্বাধীনতা মানে তো আর একটি নির্দিষ্ট সীমারেখার অধীন স্বায়ত্তশাসিত ভূখন্ডকে বোঝায় না। তার অন্তর্গত জীব কূল, প্রকৃতি সর্বোপরি মানব সম্পদ দের শ্রী বৃদ্ধিতেই স্বাধীনতা পরিলক্ষিত হয়।। ! অথচ নিজ গৃহে আজ যেন আমরা অসংখ্য অদৃশ্য ঘেরাটোপে পরাধীন।
তবু ঘোর তমসা বিদীর্ণ করে ঊষার আগমনের ইঙ্গিত লুকায়িত আছে এই ভারত ভূমিতেই। এখনো কিছু স্বাধীনতা বাকি পড়ে আছে।আমাদের সুকর্মের মাধ্যমেই এগিয়ে যাবে ভারত। পূর্ব পুরুষ রক্তের বদলে যে কার্য সিদ্ধি করে গেছেন তার বহমান রথের চাকা গড়ানোর ভার এবার আমাদের হাতে ।ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, শিক্ষা,-আমাদের মজ্জায়, শিরায় , সঞ্চালিত করে ভারতের যুব শক্তিকে শানিত অস্ত্রের মত এই শৃঙ্খল মোচনে এগিয়ে আসতে হবে। নিজের সাথে লড়াই টাই সব চেয়ে বড় লড়াই। আত্ম সমালোচনায় নিমগ্ন হওয়া বড় প্রয়োজন আজ ভারতবর্ষের।
দেশীয় প্রতিভা যারা অর্থ খ্যাতির বিনিময়ে স্বদেশ ছেড়ে পর দেশে বিকীর্ণ করছে আপন আলো তাদের ঘরে ফেরার দিন এসেছে। দীর্ঘ বলিদানে প্রাপ্ত স্বাধীনতা সম্পূর্ণ মর্যাদা প্রদানের সময় এখনো ফুরিয়ে যায় নি।প্রয়োজন রাজা প্রজার সু সম্পর্ক।ভবিষ্যৎ ভারত যেন পূর্ন স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে সে সংকল্প নিতে হবে আমাদের।পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নেমে আসুক দেহে , মননে, প্রকাশ ভঙ্গিতে, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, অগ্রগতি তে। বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে আমাদেরকেই স্বাধীনতার পূর্ন সংজ্ঞা। মাতপূুজা স্বরূপ মাতৃ ভূমির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আজ শৃঙ্খল মোচনের সব চেয়ে বড় উপকরণ।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊