পৌরাণিক রাখী আজ সম্প্রীতির স্মারক 


আজ রাখী পূর্ণিমা। এই রাখী পূর্ণিমা নিয়ে একাধিক পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। শোনাযায় কোন এক যুদ্ধে কৃষ্ণের কব্জীতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে দ্রৌপদী নিজের শাড়ির আঁচল ছিড়ে ক্ষতস্থান বেঁধে দেন। এই ঘটনায় কৃষ্ণ অভিভূত হন। দ্রৌপদীকে বোন বলে ঘোষণা দেন এবং এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হন। ঘটনাচক্রে আমরা দেখতে পাই, পাশাখেলায় কৌরবরা যখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণে রত তখন কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্ভ্রম রক্ষা করেছিলেন। 

একই সাথে বলিরাজা এবং লক্ষ্মীর রাখীবন্ধনের গল্পও যেমন প্রচলিত তেমনি গনেশের মেয়ে সন্তোষী মাতার দুই ভাই শুভ এবং লাভের হাতে রাখী পরানোর গল্পও শোনা যায়। 

এতো গেলো পৌরাণিক আখ্যান। আর ঐতিহাসিক আখ্যানে রাখী নিয়েও অনেক ঘটনা রয়েছে। একটি কিংবদন্তী অনুযায়ী, আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করলে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোজানা রাজা পুরুকে একটি পবিত্র সুতো পাঠিয়ে তাঁকে অনুরোধ করেন আলেকজান্ডারের ক্ষতি না করার জন্য। এবং পুরু সেই রাখীকে শ্রদ্ধা করে যুদ্ধক্ষেত্রে আলেকজান্ডারেকে আঘাত করেননি। একই রকম আর একটি ঘটনার কথা জানা যায় রানি কর্ণবতী ও সম্রাট হুমায়ুন কে নিয়ে।   বাহাদূর শা চিতোর আক্রমণ করলে চিতোরের রানি কর্ণবতী  হুমায়ুনকে রাখী পাঠিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। তবে এই রাখী পাঠানোর কথা সমকালীন ঐতিহাসিকেরা সন্দেহ প্রকাশ করলেও মধ্য-সপ্তদশ শতকের রাজস্থানী লোকগাথায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। 

তবে পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক রাখীপূর্ণিমাকে এক অন্য মাত্রা দেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯০৫ সাল। বাংলাকে ভাগ করবার ষড়যন্ত্র চলছে। আর তখন বাংলা ভাগ প্রতিরোধ করবার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখী বন্ধন উৎসব কে এক অন্য আঙ্গিকে উপস্থাপন করলেন। কলকাতা, ঢাকা, সিলেট সহ বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার হিন্দু ও মুসলিম ভাই-বোন  বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার উদ্দেশ্যে একতার প্রতিক হিসাবে সেদিন রাখী উৎসবে সামিল হয়েছিলেন। রাখী উৎসব কে স্মরণীয় করা রাখতে কবিগুরু লিখলেন-
"বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল--
পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান ॥
বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ--
পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক, পূর্ণ হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির পণ, বাঙালির আশা, বাঙালির কাজ, বাঙালির ভাষা--
সত্য হউক, সত্য হউক, সত্য হউক হে ভগবান ॥
বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন--
এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান ॥" 

এইভাবে শ্রাবণের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয়ে আসা রাখী উৎসব বর্তমানে বোন বা দিদি  দাদা বা ভাই কে রাখী পরিয়েই শুধু পালিত হয় না, সম্প্রীতির স্মারক হিসাবেও রাখী উৎসব পালিত হয়।