স্বাধীনতা যেমন চিরস্থায়ী নয়; তেমনি স্বাধীনতার শত্রুদের সাথে লড়াই ও কখনো শেষ হবার নয়



বিশ্বজিৎ দাস 

ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতা লাভ করেনি,তখন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সারাদেশে বিভিন্ন বিপ্লব মঞ্চ গড়ে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ক্রমাগত আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে ইংরেজরা তাদের 200 বছরের রাজত্ব ভারতীয় আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।সে ব্যাপক আন্দোলনের ফল হিসাবে 1947 সালের 15 ই আগস্ট ভারতবাসীর ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব পালিত হয়। তাই প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে সেই বীর সৈনিকদের দের আমরা সম্মান জানায়। এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যারা দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাদের আমি সেলাম করি। আরও পড়ুনঃ  আগামী নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে মিড ডে মিলে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের নির্দেশিকা


কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় স্বাধীনতাবোধ পঙ্গু হয়েছে শুধু; নাকি আমাদের লড়াই স্বাধীনতার শত্রুদের সাথে দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে একই সঙ্গে? আসলে স্বাধীনতা যেমন চিরস্থায়ী নয়; তেমনি স্বাধীনতার শত্রুদের সাথে লড়াই ও কখনো শেষ হবার নয়। স্বাধীনতার আদি শত্রুরা বিলুপ্ত তো হয়নি বরং তা ফুলেফেঁপে ব্যাপক বংশবিস্তার করেছে।অন্যদিকে যোগ হয়েছে নতুন নতুন ধরনের, আকারের এবং আকৃতির শত্রু; আর কিছু নয়। সর্বগ্রাসী দূর্নীতি, সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি ইত্যাদি হচ্ছে এই উত্তর একাওর স্বাধীনতার শত্রু। যা একটু একটু করে মুছে দিচ্ছে স্বাধীনতার স্বাদ; নষ্ট করে দিচ্ছে স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা শব্দটির ব্যপ্তি অনেক। আমি স্বাধীন দেশেই জন্মেছি। ইতিহাসে পড়া ব্রিটিশদের দ্বারা পরাধীনতার গ্লানি পড়ার পরও একটা প্রশ্ন থেকেই যায় প্রকৃতঅর্থে কী আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক?। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে পারা। চোখের সামনে একজন অসহায় মানুষকে দেখলে তার দিকে সাহায্যের হাত কারও অনুমতি ছাড়াই বাড়িয়ে দিতে পারার মধ্যে আমি স্বাধীনতা খুঁজে পায়। যেখানে সমাজের কিছু বিকৃত মনস্ক মানুষ শিশু কিংবা নারীর ওপর নির্যাতন চালায়, যেখানে স্বাধীনতা আমাকে প্রতিবাদ করতে শেখায়।

স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভেতরে উপরে দাঁড় করানো। দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থান, যোগ্য স্থানে চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সাথে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞান বিষয়ক দিকে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতা বিরুদ্ধচারণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্য পরায়ন হওয়া।

স্বাধীনতা শব্দটি শোনামাত্রই হৃদয়ের মধ্যে এক অনন্য অনুভূতি জাগ্রত হয়। আর এই স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য পৃথিবীর সকলেই প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে। বিশ্বে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি স্বাধীনতা চান না। শুধু মানুষ নয় ;পশুপাখিরাও পরাধীনতার ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চাই। কষ্টে থাকলেও সেখানে যদি স্বাধীনতা থাকে তাহলে সেটাই ভালো।আর মহা সুখে থেকে যদি পরাধীন থাকা যায়; তাহলে সেখানেও ভালো লাগার কথা নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরে এসেও বলতে হচ্ছে আমরা যে জন্য লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি সেটা পুরোপুরি হয়নি।

আমরা এমন একটা 'স্বাধীনতা' চাই যেখানে থাকবে না কোন খুন, অত্যাচার, নির্যাতন, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের অপকৌশল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল আর মহামারীর দৃশ্য, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, জুলুম, অবিচার, আইনের পক্ষপাতিত্ব। আমরা চাই একটি সুখী-সমৃদ্ধশালী ভারত বর্ষ।