স্বাধীনতা এমন একটা প্রক্রিয়া যা সচেতন নাগরিককে অর্জন করে চলতে হয়
ভ্রমর দত্ত দেবনাথ
প্রাক্তন জাতীয় মহিলা ফুটবলার, বর্তমানে AFC Coach
দূর্গাচক, হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
স্বাধীনতা বলতে কি বোঝায় সেটা আগে বোঝা দরকার।স্বাভাবিক ভাবে বুঝতে গেলে বুঝি, বাঁধা হীন ভাবে কিছু পাওয়া বা অর্জন করা। স্বাধীনতার বিপরীত পরাধীনতা অর্থাৎ ব্যক্তি,গোষ্ঠী বা রাষ্ট্রের অধীনে থাকা।
তাই বলে স্বাধীনতা মানে যা খুশি করা নয়।প্রশ্ন হতেই পারে স্বাধীনতা কি কেউ কাউকে দেয়?বা স্বাধীনতার কি বিনিময় সম্ভব?স্বেচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাই কি স্বাধীনতা?এতো প্রশ্নের জবাবে সঠিকভাবে সব উত্তর পাওয়া কি সম্ভব?তবু খোঁজার চেষ্টা করি। আরও পড়ুনঃ আগামী নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলিতে মিড ডে মিলে খাদ্য সামগ্রী বিতরণের নির্দেশিকা
প্রতিষ্ঠান যা সিদ্ধান্ত নেয় তার পেছনে থাকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রকাশ।
ধরুন পুতুল নাচ,পুতুল নিজে থেকে নাচতে পারে না ,কেউ তাদের নাচায় তার নিজের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে বা মর্জি মতো।পুতুলকে কিভাবে নাচাবে, সুতোতে সেইভাবে টান দেয়।আর দর্শক সেই কাহিনীর মধ্যে ঢুকে পড়ে।এই সুতো নিয়ন্ত্রণ যে করছে সে প্রতীক মাত্র।তার স্থানে আমরা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বসিয়ে দিতে পারি।সেই রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু।
স্বাধীনতা হলো একটা খোলা মাঠের মতো,যার সীমা আছে পরিসর ও আছে।
স্বাধীনতা হলো আসলে ক্ষমতা হস্তান্তর।আমরা দীর্ঘ সময় ধরে ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে ছিলাম অনিচ্ছাকৃত ভাবে।আমাদের দেশে সুদীর্ঘ আন্দোলন এবং সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ভারতের লড়াকু মানুষ এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলো যে আমাদের দেশ আমরাই শাসন করবো।আর আমরাই যাবতীয় কার্যকলাপের সিদ্ধান্ত নেব।এর নামই স্বাধীনতা ।দেশের প্রতিটি নাগরিক গর্জে উঠে,অনেক প্রাণের বিনিময়ে ইংরেজদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা আনতে সক্ষম হয়েছিলো।
তাহলে কি বলতে পারি যে এই স্বশাসিত ক্ষমতাই কি স্বাধীনতা?
যে দেশ নতুন করে নতুন ভাবে ভুমিষ্ট হলো লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ খুশির আনন্দে দেশের পতাকা উত্তোলন করে যেন এক নতুন স্বপ্নের দেশে পদার্পণ করলো।তাদের চোখের জল নিমেষে বুঝিয়ে দিলো স্বাধীনতার আনন্দ।
তাহলে স্বাধীনতা কি কোন ব্যক্তির?
এখনকার ছেলে মেয়েরা বিজ্ঞান বা জ্যোতিষে মগ্ন তারা কি আনুগত্যের কাছে বন্দি নয়?আসলে স্বাধীনতার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই।নানা ভাবে নানা কারণে আমরা সবাই বন্দি।ব্যক্তি বিশেষ বা সামাজিক বিধিনিষেধ বলুন নানা ধরনের লাল চোখ আমাদের বন্দি করে রেখেছেবা পাহারা দিচ্ছে নানা উপায়ে।
এখন তো আবার
কি খাব কি খাবোনা,
তা হবে না তা হবেনা।
মানে অনেক ফতোয়া জারি।সাহিত্য, বিজ্ঞান, সাংস্কৃতিক চর্চা সব কিছুরই নিদিষ্ট কোন ভৌগোলিক সীমারেখা নেই।যেমন এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে বা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করা যায়।তাই স্বাধীনতার আসল রূপ কিন্তু এরকমই।দেশের প্রতিটি সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া এবং সবসময়ই প্রহরীর কড়া নিরাপত্তা।তা সত্ত্বেও মানুষ এপার ওপার করছে আপনজনকে বা স্বজনদের একটু দেখার জন্য।
দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে অনেক অনেক প্রাণ।রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নাগরিকদের জীবন এবং ভূখণ্ড রক্ষা করে।সেই স্বাধীন দেশে থাকবে সমাজ, ধর্ম সংস্কার আর সর্বোপরি নাগরিকবৃন্দ এবং তাদের পরিচিতি।রাষ্ট্র একটা কাঠামো।এখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকারের গুরুত্ব সমান।সমাজের প্রয়োজনে নিয়ম সৃষ্টি করা হয়।সমাজ তার রক্ষক সৃষ্টি করে অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করে শৃঙ্খলার নির্নায়ক এবং পরিচালক ।যাকে আমরা সরকার বা গভর্নমেন্ট বলি।প্রত্যেক নাগরিক রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতা,অধিকার এবং রক্ষক হলো রাষ্ট্র।দেশ এবং দেশবাসীর জীবনের স্বাধীনতা রক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান।অনেক সময় দেখা যায় রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠান যন্ত্রের মতো নাগরিকদের অধিকার হরণ করতে থাকে অর্থাৎ দেশের কিছু নাগরিক ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন।সেই মুহূর্তে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব আর স্বাধীন থাকে না।তখন আসে দায়িত্ব ও কর্তব্য বোধ।
অর্থাৎ স্বাধীনতা মান কেবল শাসন প্রক্রিয়ার হস্তান্তর করা নয়।স্বাধীনতা এমন একটা প্রক্রিয়া যা সচেতন নাগরিককে অর্জন করে চলতে হয়।
স্বাধীন দেশে ভোটাধিকার পাই এবং প্রতিনিধি নির্বাচন করি।শুধু ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না।
স্বাধীনতা প্রতিটি নাগরিককে অর্জন করতে হয়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊