একদিকে অর্থসংকট অন্যদিকে মানসিক চাপ- তবুও সাফল্য- এ এক অন্য কালামের জীবন কথা
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়াঃ মা ক্যান্সারাক্রান্ত, বাবা মানসিক ভারসাম্যহীন। চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছে কালামের পরিবার। এমনই দিন গেছে যে চিকিৎসার পেছনে খরচা হয়ে গিয়েছে সবই। ফলে খাবারের যোগান তেমন একটা নেই। অসুস্থ মা নিজেই কাতর যন্ত্রনায়। তাই কখনো কখনো বাবা-মাকে রান্না করে খাওয়াতে হয়েছে কালামকে। দিনের পর দিন কেটেছে হাসপাতালের করিডোরে। সেখানেই চালিয়েছে পড়াশোনা। একদিকে অর্থসংকট অন্যদিকে মানসিক চাপ। এতসব উপেক্ষা করেও মাধ্যমিকে ৬৮০ পেল বাগনানের সেখ আব্দুল কালাম।
বাগনান হাই স্কুলের ছাত্র কালাম স্কুলের দ্বিতীয় স্থানাধিকারী হয়েছে। জেলার মধ্যে চতুর্থ। তবে আর মাত্র কয়েকটা নাম্বারের জন্য রাজ্যের মেধা তালিকায় ঢুকতে না পারার আক্ষেপ তার রয়ে গেল। আগামী দিনে পড়াশোনা করে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হতে চাই কালাম। কিন্তু আর্থিক অবস্থা যা তাতে এখন স্কুলে ভর্তি হওয়ার টাকা নেই তাদের। প্রতিবেশীরা ও শিক্ষকদের সাহায্যেই হয়তো তাকে ভর্তি হতে হবে স্কুলে। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তার ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হতে পারা নিয়ে।
কালাম জানায়, পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগেও মাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। পড়ার সময় অনেকটাই কম পেয়েছে সে। টাকার অভাবে নিতে পারেনি কোনো গৃহশিক্ষক। কোচিংয়ের কয়কেজন শিক্ষকের কাছে পড়ত সে। আবার স্কুলের শিক্ষকরা তাকে পড়াতেন বিনা পয়সাতেই। এই অবস্থাতেও কালাম মাধ্যমিকে বাংলায় পেয়েছে ৯৪ , ইংরেজিতে ৯৬, অঙ্কে ১০০, ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে ৯৭, জীবনবিজ্ঞান ৯৯ এবং পদার্থবিজ্ঞানে ৯৮।
কালামের মা আরসেদা বেগম জানান ২০১৬ সালের শেষের দিকে তার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং বর্তমানে তা আরো ছড়িয়ে গিয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে। ২০১৮ সালে চিকিৎসক জানান তার চতুর্থ স্টেজ চলছে ক্যান্সারের ফলে জীবন সরু সুতোর উপর দিয়ে ঝুলছে। শেষ মাস তিনেক ধরে ক্যান্সারের চিকিৎসা ও ঠিকঠাক করতে পারছেন না তারা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বাবা সেখ সইফুদ্দিন আহমেদের শেষ জমানো টাকাও শেষ হয়ে গিয়েছে স্ত্রীর চিকিৎসায়। কোন রকমে পেনশনের টাকায় চলে কিন্তু ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ হয়ে যায় সেই টাকা। তাই তারা সামলে উঠতে পারছেন না।
আরসেদা জানান প্রায় সারাদিনই যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। ফলে ছেলের প্রতি নজর তিনি দিতে পারেননি। তাই বলা চলে সংসার সামলানো পড়াশোনা সবকিছুই কালামের নিজেকেই করতে হয়েছে। সঙ্গে তাকে সাহায্য করেছে কলেজ পড়ুয়া তার দিদি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊