SER-23,বাঁকুড়া ২৪জুন: যখন বিভিন্ন প্রকল্পগত দক্ষতা, নারী ক্ষমতায়ন, জনজাতিদের উন্নতি, ভাতা বন্টন, স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি পরিচ্ছন্ন অডিট, একশো দিনের কাজ প্রকল্প সহ সহ নানান কাজের ভিত্তিতে সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বাঁকুড়া জেলা । আর তখনই এর উল্টো দিকে এক অন্ধকারময় দারিদ্র অসহায়তার চিত্র ধরা পড়ল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাধানগর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে লায়েকবাঁধ গ্রামে ।এই গ্রামেরই এক বাসিন্দা তপন বাউরি। বেশ কিছু বছর আগে তপন বাবুর স্ত্রী, ছেলে অভীর মেয়ে উমাকে রেখে সংসার ত্যাগ করেন ।
অভাব অনটনকে নিত্য সঙ্গী করেই অনেক কষ্টে শিশু অবস্থা থেকে বড়ো করে তুলেন তার ছেলে ও মেয়েকে। আজ তারা ষষ্ঠ ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে । তপন বাবুও বেশ কয়েক বছর থেকে অপুষ্টি জনিত কারণে কর্মক্ষম । বেশ কয়েকবার পুত্র অভীর, বাবা তপন বাউরিকে বাঁকুড়া হসপিটালে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করলেও, লকডাউনের জেরে বেশ কয়েক মাস ধরেই বন্ধ রয়েছে তার চিকিত্সা । এখন তিনি শয্যাসায়ি, স্বভাবতই সংসারের হাল টানতে হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তপন বাবুর পুত্র অভীর বাউরিকে ।
যে বয়সের কচি কোমল হাত দুটি কলমের নানা রঙের কালী দিয়ে খাতার পাতা ভর্তি করে , আজ সেই বয়সের কচি হাত দুটিই তুলে নিয়েছে কোদাল , শাবল, কুঠার , কাটারি । কারণ এগুলোই অভীরের পরিবারের মুখে অন্ন জোগায় , সংসার খরচ চালাতে সাহায্য করে ।স্কুল যেতে ভালো লাগে , নামও আছে ষষ্ঠ শ্রেণীর খাতায় । কিন্তু স্কুলে যাওয়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে সংসারের চরম দারিদ্রতা। যদিও সরকার করেছিল, অনলাইন পড়াশোনার ব্যবস্থা । কিন্তু তপন বাবুর ভাঙাচোরা মাটির দেওয়ালে আঁকা ছিল টেলিভিশনের ছবি, তবে তাতে আর ফুটে উঠেনা অনলাইন ক্লাসের চিত্র। দেওয়ালে আঁকা টেলিভিশনে চোখ রেখেই শুরু থেকে শেষ হয় বিনোদনের পর্ব।মাটির বাড়ির ভাঙাচোরা টিনের ছাদ দিয়ে সূর্যের আলো আর আকাশের বৃষ্টি ঘরে প্রবেশ করে মেঝে জুড়ে খেলা করে ।
প্রতিদিন সকাল হলেই বই-খাতা ফেলে বনে যায় অভীর । সেখানে মাটি খুঁড়ে শুকনো গাছের শিকড় (মুড়া ) তুলে বাড়ি নিয়ে এসে সেগুলিকে খণ্ড খণ্ড করে আগুনে পুড়িয়ে কয়লা তৈরী করে , এবং সেগুলি কামার শালায় বিক্রি করে যা অর্থ আসে তা দিয়েই চলে সংসার, এভাবেই চরম দারিদ্রতা ধীরে ধীরে তপন বাউরিকে ছেলে অভীর ও মেয়ে উমা বাউরিকে যেন এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।
তপন বাউরি বলেন,সরকারী সাহায্য বলতে কিছু চাল আলু এবং একটা ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই পায়নি । কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদের খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাহায্য করেছে । কিন্ত এভাবে আর কত দিন চলে ?
এছাড়াও তার চিকিত্সা , এবং সন্তানরা যাতে লেখাপড়া করতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে প্রার্থনা জানান তপন বাবু।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊