সুজাতা ঘোষ:
'সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে ।
শরণ্যে ত্রম্ব্যকে গৌরি নারায়নী নমস্তুতেঃ।।
সৃষ্টি-স্থিতি বিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোহস্তুতে॥
শরণাগত দীনার্ত পরিত্রাণ পরায়ণে।
সর্বস্যার্তি হরে দেবী নারায়ণী নমস্তুতে ।।'
বাংলার আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে আরম্ভ করে দশমীর মধ্যে যে শনিবার ও মঙ্গলবার পড়ে সেই বারে এই বিপত্তারিণী পুজো করা হয় । মূলত বিপদ থেকে রক্ষা পেতেই এই পুজো করে থাকেন হিন্দুরা ।মনে করা হয় বিপত্তারিণী একান্তভাবেই লৌকিক দেবী। তবে পুরাণেও এই দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায় । 'দেবীপুরাণ' থেকে জানা যায়, বিপত্তারিনী বা সংকটতারিণী দেবী দুর্গার ১০৮ টি রূপের অন্যতম ।এই পুজোতে ১৩ রকমের ফুল, ১৩ রকমের ফল, ১৩ টা পান,১৩ টা সুপারি এবং ১৩ গাছা লাল সুতাতে ১৩ গাছা দূর্বা দিয়ে ১৩টি গিট বেঁধে দিয়ে পুজো করার নিয়ম রয়েছে ।


এই পুজোর একটি কাহিনি রয়েছে। বলা হয় যে, বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজবংশের এক রানির এক নিম্নবর্ণের সখি ছিলেন। তিনি জাতে মুচি। এই মহিলা নিয়মিত গোমাংস খেতেন। রানিও একদিন কৌতূহলী হয়ে গোমাংস খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। প্রথমে তিনি নিমরাজি হন। পরে তিনি রানির আদেশ রক্ষার্থ গোমাংস আনেন। অন্তঃপুরে গোমাংস প্রবেশ করেছে— এই খবর রাজার কাছে পৌঁছে যায়। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে রানিকে শাস্তি দিতে উদ্যত হন। রানি গোমাংস তাঁর বস্ত্রের আড়ালে লুকিয়ে রেখে দুর্গাকে স্মরণ করতে থাকেন। রানিকে তল্লাশ করে রাজা দেখতে পান তাঁর বস্ত্র আড়াল থেকে গোমাংস নয়, রয়েছে একটি লাল জবা। রানী‌ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর থেকেই থেকেই বিপত্তরিণীর পুজো প্রচলিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 

মূলত পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এই পুজো করে থাকেন হিন্দু মহিলারা।