তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা? ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে 

লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনার সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছে বলে এএনআই সংস্থা দাবি করেছে। রাত ১০টা নাগাদ সংস্থার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গুরুতর জখম কমপক্ষে ১৭।




সোমবার রাতে গালোয়ান উপত্যকায় অতর্কিতে ভারতীয় সেনার উপর আক্রমণ চালায় চিনের সেনা। ভারতীয় সেনার তরফে এ দিন জানানো হয়, পারস্পরিক শান্তি চুক্তি মেনে সেনা সরিয়ে আনা হয়। সেনা সূত্রে খবর, গোলাগুলি নয়, পাথর, রড নিয়ে হামলা চালায় চিনের জওয়ানরা। পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। চিনের তরফে দাবি করা হয়েছে, তাদের ৫ জওয়ান নিহত হয়েছে। এই ঘটনার উল্লেখ করে আমেরিকার একটি সংবাদ সংস্থা প্রতিবেদনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন। 



সম্প্রতী চীন এবং ভারত, দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে  সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে এবং লাদাখ অঞ্চলে। দুটি দেশই রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রেডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দু'পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। সেখানে সামরিক মহড়াও দিয়েছে দুই দেশ। কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 



বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে - "বর্তমানে ভারত এবং চীনের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, সেটা বিশ্বজনীন প্রেক্ষাপটে সেটা বেশ বৈরি। বিশ্ব রাজনীতিতে এই দু্‌ই দেশের অবস্থান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে। আন্তর্জাতিকভাবে চীনের সেই অর্থে কোন মিত্র নেই। তাদের একটি মিত্রদেশ হচ্ছে পাকিস্তান। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০ বছর ধরে বলা যায় ভারতের মিত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৯-২০০০ সাল হতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে। এর মধ্যে সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারটিও রয়েছে। এই সহযোগিতা গত দুই দশকে অনেক দৃঢ় হয়েছে। ভারত বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি সামরিক জোটের অংশগ্রহণ করেছে।

অন্যদিকে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক গত কয়েক বছরে বেশ বৈরি হয়ে গেছে, ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতাকে তাই তারা মোটেই পছন্দ করছে না। চীন এবং ভারতের মধ্যে বৈরিতার এরকম একটা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন-ভারত সম্পর্ক ক্রমশ শত্রুভাবাপন্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আলোকে দেখতে গেলে এই সীমান্ত বিরোধ তাদের মধ্যকার শত্রুতার একটি প্রকাশ মাত্র।" 

বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তাব বলেন, সীমান্তের নিয়ম অনুযায়ী এলএসির ভেতরেই রয়েছে ভারত। আমাদের আশা চিনও সেটাই করবে। ভারত চায় এলাকায় শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে। যে সমস্যা রয়েছে তা আলোচনার মধ্যমে মিটিয়ে ফেলা হবে। পাশাপাশি, ভারতের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপোস করা হবে না।



বেশ কিছুদিন ধরেই লাদাখের প্যাংগন লেক ও গালওয়ান উপত্যকায় দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে। এনিয়ে দুদেশের কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে ঠিক হয়, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে নেওয়া হবে।

সোমবার সকালে দুদেশের ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ে বৈঠক হয়।তারপরের রাতেই এই
ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। প্রসঙ্গত, আগেই ঠিক হয়েছিল, দুদেশ তার বর্তমান অবস্থান থেকে দু কিলোমিটার পিছিয়ে আসবে। সঙ্গে সমস্যা নিরসনে আলোচনা চলবে।



একদিকে যখন সমগ্র বিশ্ব করোনা ভাইরাসের জন্য চীনের দীকে আঙুল তুলছে,  সেই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক কালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যেমন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল এবং ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে। ভারতের এসব দেশের সামরিক সহযোগিতা বেশ ঘনিষ্ঠ। কাজেই এসব দেশ হয়তো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিকভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে। অন্যদিকে চীনের সেরকম আন্তর্জাতিক মিত্র নেই। রাশিয়া চীনের বন্ধুরাষ্ট্র, কিন্তু মনে রাখতে হবে অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতেরও ঘনিষ্ঠ মৈত্রী ছিল। ১৯৬২ সালে রাশিয়া কিন্তু চীনের বদলে ভারতকেই সমর্থন করেছিল। কাজেই প্রত্যেকটি দেশ হয়তো ভারতকেই সমর্থন করবে। 



কিন্তু পরিণাম ? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি সত্যিই শুরু হয়- কিংবা ভারত-চীনের মধ্যেও যদি সংঘর্ষ  ব্যাপক আকার ধারণ করে, তার পরিণতি যে খুব একটা ভালো হবে না কোন দেশের পক্ষেই তা দুই দেশই জানে।  তবে পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞ মহল।