লকডাউন এর জেরে সমস্ত ছাত্র ছাত্রী পঠনপাঠন থেকে প্রায় অনেকাংশেই বিরত। যদিও কেউ কেউ অনলাইন গাইড এর দ্বারস্থ হয়েছেন। অপরদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রটে যাওয়া পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তির ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পরীক্ষার সময়, মান ও গঠন পরিবর্তন নিয়ে উল্লিখিত রয়েছে। যদিও  কর্তৃপক্ষের দাবি পরীক্ষা পরিচালনা সংক্রান্ত কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। 

এই বিষয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্রছাত্রী সংসদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে " রাজ্য সরকারের নির্দেশিকাতে শুধু পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে সময়, মান ও গঠন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে ঘোরা বিজ্ঞাপনগুলি ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্তি ঘটাচ্ছে। ১০ ই জুন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা। না খোলা অবধি এ বিষয়ে জানানো যাচ্ছে না।"

তবে ইতিমধ্যে পরীক্ষা সংক্রান্ত একাধিক দাবী নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে একদল স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠরত ছাত্র-ছাত্রী। তৈরি হয়েছে  #againstexam নামের ডিজিটাল প্লাটফর্ম। যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পিটিশন দাখিল করছে। 
তাদের বক্তব্য,
1) কলেজ থেকে অনেক দূরে বাড়ি থাকা শিক্ষার্থীরা সাধারণত কলেজের নিকটবর্তী মেস / ভাড়া বাড়িতে থাকেন। লকডাউনের কারণে বর্তমানে সমস্ত শিক্ষার্থী তাদের বাড়িতে রয়েছেন যার ফলস্বরূপ নির্দিষ্ট একটা সংখ্যক শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বে যদি দ্রুত পরীক্ষা নেওয়া হয়। 

2) সরকারি ঘোষনা  হিসাবে সামাজিক দূরত্ব (10/12 ফুট) বজায় রাখার জন্য ডাব্লুএইচওর গাইডলাইন সম্পর্কে সচেতন থাকার পাশাপাশি COVID-19 প্রতিরোধে জমায়েত বন্ধ করতে বারবার ঘোষণা দিচ্ছে, আমরা পরীক্ষার সময় কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে এবং বাইরে এই নিয়ম বজায় রাখতে পারবো কিনা - তা একটা ভয়ের কারন। 

3) এমন অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন যারা স্নাতক শেষ করে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীর স্বপ্ন দেখে দেরীতে পরীক্ষা হলে এক্ষেত্রে বাঁধা তৈরি হতে পারে। আবার যারা স্নাতক শেষ করে পেশাগত জীবন শুরু করার সুযোগ পেয়েছেন, তাদের জীবিকার ক্ষেত্রেও বাঁধা হতে পারে। 
    
৪. ট্রেন বা বাসের মতো নিয়মিত এবং সময়মতো  ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা শুরু হওয়ার কোন খবরও নেই।
এটি আমাদের জন্যও একটি বিরাট উদ্বেগের কারণ। 

৫. এই পর্যায়ে কলম এবং কাগজ পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে  ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আবার অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে একটি বিরাট প্রশ্ন রয়েছে কারণ হোম সেন্টারগুলিতে যাওয়ার পরেও উপরে উল্লিখিত সমস্ত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেওয়াও সম্ভব নয় কারণ অনেকেরই উপায় নেই বা যথাযথ ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

১ বছর অতিক্রম করলো সংবাদ একলব্য। আপনাদের সহযোগিতায় এভাবেই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। প্রতিটা মুহূর্তে আপনাদের সাথে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার সংবাদ একলব্য’র। আপনার আশেপাশে ঘটেচলা ঘটনা জানান আপনি, আপনিই আপনার এলাকার মুখপত্র। আমাদের ফেসবুক পেজে SMS করুন ঘটনার বিবরণ ছবি/ভিডিও সহ।

আমাদের ফেসবুক পেজের টপ ফ্যানদের মধ্যে লাকি কয়েকজনকে প্রতিমাসে দেওয়া হবে উপহার। তাই নিয়মিত লাইক-কমেন্ট-শেয়ার করুন।


৬. দীর্ঘমেয়াদে লকডাউনের জন্য প্রত্যেকের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও চাপে পড়েছে তাই এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেওয়ার ফলে তাদের ফলাফলের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

ইতিমধ্যে হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় দুটি নমনীয় বিকল্পের সাথে শংসাপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেমন পরীক্ষার ছাড়াই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত গড় নম্বর বা শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের পরে পরীক্ষা দেওয়া।  দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ও ওপেন বুক এক্সামের চিন্তাভাবনা করছে- এক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী বিরোধিতা করেছে বলে জানা গেছে। আবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আনন্দ বাজার পত্রিকার সংবাদ অনুসারে শংসাপত্র দেওয়ার আগে অনলাইনে মূল্যায়নের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীদের বিচার করার জন্যচিন্তা ভাবনা করছে। 

স্নাতকোত্তর স্তরের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানাগেছে- দিনদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের রাজ্যে একাধিক জেলায় রয়েছে রেড জোন। এমন পরিস্থিতিতে যে অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে তা সবার পক্ষেও নেওয়া সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে যদি পরীক্ষা নেওয়া হয় তবে তা কখনোই ঠিক হবে না। তাই তাদের দাবী এই পরিস্থিতিতে কোনভাবেই পরীক্ষা নয়।

ইতিমধ্যে UGC গতকাল  একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবইসাইটে ছাত্রছাত্রীদের অভাব-অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই জন্য UGC এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।  কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু পরীক্ষা নয়, পড়াশুনা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানাতে পারবে। ইতিমধ্যে (সংবাদ লেখা পর্যন্ত) ৬২৫৭ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সব থেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

করোনা মহামারী আটকাতে যে লকডাউনের ব্যবস্থা হয়েছে, এই গৃহবন্দী থাকবার ফলে বর্তমান সময়ে আর একটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেটি মানসিক। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকতাও বর্তমান সময়ে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। এরফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি মূল্যায়নের ব্যবস্থা হয় তবে তা কতটা সঠিক মূল্যায়ন হবে সেক্ষেত্রেও উঠছে প্রশ্ন।

আবার এভাবে যদি শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে যেতে থাকে তবে সেক্ষেত্রেও তৈরি হবে সমস্যা। তাই বিকল্প কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়- এখন সেটাই দেখার।