Future of work: What to expect after coronavirus crisis blows over

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের কড়াল গ্রাসে দিশেহারা মানবসভ্যতা। অদৃশ্য এক শক্তির সাথে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয় পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের। লকডাউনকেই এই যুদ্ধে একটা বড়সর অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করে। 

'লকডাউন' শুরু হতেই বন্ধ হয়ে যায় কল-কারখানা-অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজ সহ সমস্ত জনবহুল স্থান। কিন্তু করোনার কারনে কাজ বন্ধ থাকলে চলবে কি করে! তাই শুরু হয় বাড়িতে বসেই কি করে ডিজিটাল মাধ্যমে কাজ করা যায় তার চিন্তাভাবনা।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম- অর্থাৎ এতদিন বাড়িতে বসেই যে আয়ের/ কাজের ব্যবস্থা ছিল-সেই পদ্ধতিতেই শুরু হয় প্রায় সমস্ত কাজ কর্ম। অনলাইনে বিভিন্ন অফিসের কাজকর্ম যেমন চলতে থাকে তেমনি শুরু হয় অনলাইন পাঠশালা। অনলাইন জব পোর্টাল ইনডিড-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ওই খোঁজ বেড়েছে ৩৭৭ শতাংশের বেশি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত চার মাসে ‘রিমোট’, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ প্রভৃতি শব্দবন্ধের ব্যবহার করে চাকরির খোঁজ বেড়ে গিয়েছে। ইনডিড ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে যত চাকরির সন্ধান করা হয়েছে তার মধ্যে বাড়ি বসেই কাজের সন্ধান ৩৭৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একই ভাবে নিয়োগকর্তাদের তরফ থেকেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা বাড়িতে বসেই করা যাবে এমন কাজের পোস্টিং বেড়েছে ১৬৮ শতাংশ!

ইনডিড ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ডিরেক্টর শশী কুমারের কথায়, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের অনেকের কাজের ধরন বদলে দিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়িতে বসে কাজের প্রক্রিয়া চালু হয়ে গিয়েছে এবং আগামী দিনে এটাই ‘নিউ নর্ম্যাল’ হতে চলেছে। কর্মীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখা এবং যে সমস্ত কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাঁদের দক্ষতা বাড়ানো বা দক্ষ কর্মী নিয়োগ করার কথা বিবেচনা করতে হবে সংস্থাগুলিকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফিসে কর্মীদের উপস্থিতি বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটাই কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সংস্থাগুলি। আমাদের নতুন ব্যবস্থায় পারদর্শী হওয়ার সময় এসেছে।’

বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রায় সব বড় প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা দূর থেকে কাজ করার বিকল্প সুবিধা দিয়েছে।এখন বিশ্ব এই ‘নতুন সাধারণ’ নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। কীভাবে কাজ সম্পাদন করা হবে, এর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আলাদা ধারণা নিয়ে তৈরি হচ্ছে। বৃহত্তম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং জায়ান্ট ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি কোনো একসময় কর্মীদের স্থায়ীভাবে দূরে বসে কাজ করার আবেদন গ্রহণ করতে শুরু করবে।

জাকারবার্গ বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছি যে কর্মীরা চাইলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাড়িতে বসে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে কোভিড–১৯ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এর মেয়াদ আরও বাড়বে।’

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘দ্য ভার্জ’কে এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে আমরা কর্মীদের বাড়িতে থেকে কাজের সুযোগ দিতে অনুরোধ গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এটা নতুন একটি সংস্কৃতি। এতে ভৌগোলিক সীমারেখা পার করে ফেসবুক বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেধাবী কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারবে। এটি কেবল নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, কর্মী ধরে রাখার ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। কারণ, অনেক কর্মী অবস্থানগত কারণে চাকরি ছেড়ে দেন।

কর্মীদের মধ্যে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে জাকারবার্গ বলেন, কোম্পানির প্রায় ৪০ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করতে আগ্রহী।

ঘরে বসে এই নতুন কাজের অনুশীলনটি কর্মীদের উৎপাদনশীলতায় প্রভাব ফেলছে কি না, তা নিয়ে যখন অনেকেই দুশ্চিন্তা করছেন, তখন জাকারবার্গ মনে করেন, এটি তাঁদের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে ইতিবাচক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে অবাক করে দিয়েছে, তা হচ্ছে কর্মীরা বাড়িতে প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি উৎপাদনশীলতা দেখিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করেছেন। কিছু মানুষ মনে করেছিলেন, সবকিছু ভেঙে পড়বে। তা ঘটেনি। অনেক মানুষ বলছেন, তাঁরা আগের চেয়ে বেশি উৎপাদনশীল।’

জাকারবার্গ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘বাড়ি বসে বেশি কাজের কথাটি আমার জন্যও প্রযোজ্য। আমি অবশ্যই মনে করি, বাড়িতে বসে আমি দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। আমি যতটা ভেবেছিলাম, এটা তার চেয়েও বেশি উৎপাদনশীলতার কাজ হয়েছে।’

এখন দেখার করোনা উত্তর পৃথিবীতে কাজের ধরণ কেমন করে পাল্টে যায়। "কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।"