করোনার দাপট চলছে সারা বিশ্বে। সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতসহ বহু দেশেই চলছে লাগাতর লক ডাউন। করোনা ত্রাসে সুপারম্যানের ভূমিকায় ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রথম সারির যোদ্ধাদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সামনে থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে নার্সরা। বিশ্ব নার্স দিবসে নেট দুনিয়ায় নার্সদের সম্মান জানিয়েছে আপামর নেটবাসী। পাশাপাশি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সম্মান জানিয়েছে তাঁদের। এমনি এক নার্সের কাছে জানা গেল করোনা যুদ্ধের অভিজ্ঞতা। 

জোমি পি ম্যাথিউস, কলকাতার অ্যাপোলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালের কোভিড-১৯ ওয়ার্ডের একজন নার্স। অতি সম্প্রতি তাঁর একটি দারুণ সন্তোষজনক অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি একজন বয়স্ক রোগীকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও অন্যান্য উপসর্গ থেকে সুস্থ করে তুলে বাড়ি পাঠাতে সফল হয়েছেন।

সেই দিনটার একই সঙ্গে দুটি মাহাত্ম্য ছিল। একদিকে মার্দার ডে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নার্সেস ডে। এমন এক দিনে ওয়ার্ডে তাঁর কাজের ব্যস্ততাও ছিল ভীষণ। সে ব্যাপারে বলতে গিয়ে জোমি বলেন, একজন অসুস্থ মানুষকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে বাড়ি পাঠানোর মধ্যে যে অপরিসীম পরিতৃপ্তি আছে, তা তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকেই শিখেছেন। তাঁর মা ও একজন সহকারী নার্স। 

৬৮ বছর বয়সী ওই পুরুষ রোগী আসাম এর শিলচর থেকে এসেছিলেন অ্যাপোলো তে ভর্তি হতে। ওনার মুখের ক্যান্সারের সমস্যা ছিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোভিড টেস্ট হবার পর দেখা যায় যে উনি কোভিড পজিটিভ এবং তখন তিনি জোমির ওয়ার্ডে ভর্তি হন। 
ওই রোগীর এর আগে গল ব্লাডার ক্যান্সার, করোনারি বাইপাস অপারেশন ও উচ্চ রক্তচাপের রেকর্ড আছে, যা কিনা ওনাকে হাই-রিস্ক রোগী হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত, হসপিটালে থাকাকালীন তিনি মোটামুটি স্থিতিশীল ছিলেন। "ওনাকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিবায়োটিক্স দেওয়া হয়েছিল। উনি ডায়াবেটিক ডায়েটে ছিলেন। যখনি আমরা ওনাকে ওষুধ বা খাবার দিতে যেতাম, উনি খুব সহযোগিতা করতেন আমাদের সাথে। অবশেষে, ওনার পরপর দুটি কোভিড টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এলো এবং গত সপ্তাহে ওনাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হলো", কেরালার মালাপ্পুরমের মেয়ে, জোমি বললেন। 

তিনি বিবরণ দিলেন যে কোভিড ওয়ার্ডে একটানা ছয় ঘন্টা ওই পিপিই পরে থাকা কত কঠিন কাজ। "তিনটি মাস্কের ভিতর দিয়ে শ্বাস নেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ে একেক সময়ে। দুপারে দুটি সার্জিকাল মাস্কের মাঝখানে একটি এন-৯৫ মাস্ক, এইভাবে তিনটি লেয়ার পরে থাকতে হয়। আমার অতিরিক্ত ঘাম হয় আর মাঝে মাঝে খুব পিপাসাও পায়, কিন্তু কখনোই আমরা জল খেতে বা টয়লেটে যেতে পারি না। একেক সময় গগলস গুলি খুব ঝাপসা হয়ে যায়, ভালো করে কিছু দেখতেও পাই না আমরা। প্রথম দু-তিন দিন ভীষণই কঠিন ছিল। তারপর আস্তে আস্তে আমরা এই "নিউ নরমাল"-এ অভ্যস্ত হয়ে যাই।  

"কিন্তু, যখন কোনো রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন ও বাড়ি যেতে পারেন, বিশেষত তিনি যদি এরকম বয়স্ক মানুষ হন, যাঁর অনেক রকম অন্যান্য উপসর্গ ও আছে, তখন মনে হয় আমরা আমাদের প্রচেষ্টার সঠিক দাম পেলাম।"

ক্লাস টুয়েলভ পাস্ করার পর জোমি বিএসসি নার্সিং পড়ার জন্যে মৌলানা কলেজ অফ নার্সিং এ ভর্তি হন। এটি তাঁর বাড়ি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে, পেরিনথালমান্নায়। জোমি বলেন, অসুস্থ মানুষের সেবা করার প্রতি এই টান তিনি পেয়েছেন তাঁর মা-এর কাছ থেকেই, যিনি একটি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জুনিয়র নার্স। 

"এটি একটি অপূর্ব অনুভূতি, যখন আপনি মানুষের জীবনে একটু হলেও অবদান রাখতে পারেন," জোমি বললেন, আর মাস্কের পিছন থেকে তাঁর চোখ দুটি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।