সুরশ্রী রায় চৌধুরি: 

আমফাণের তাণ্ডব নিয়ে চিন্তা ছিল সবারই। ১৩০ কিমি বেগে আসা আমফানের জেরে ঠিক কী কী ক্ষতি হতে পারে তার আন্দাজ কেউ করতে পারে নি। তাই চিন্তা ছিল শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্কের ক্ষতি নিয়ে। কিন্তু ১৩০ কিমি বেগে আসা আমফান টালাকে একফোঁটা আঁচড় কাটতে পারেনি। শুধু তাই নয় জল পরিষেবাও কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে স্বাভাবিক রাখা গেছে। যে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ঝড় আসার আগে কলকাতা পুরসভার আধিকারিকদের কপালে জমেছিল, সোমবারের মধ্যেই তা উধাও।কারণ ট্যাংক কে বাচানো পুরোপুরি সম্ভব হয়েছে। ১৩০ কিমি বেগে আসা আমফানের জেরে শতাব্দী প্রাচীন ট্যাঙ্কের ক্ষতি হতেই পারত। তাছাড়া এখনও এ ট্যাঙ্কের মেরামতির কাজ চলছে। ঝড়ের দিন দুপুরের পর থেকেই আবহাওয়া ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। তা দেখেই মেয়রকে জানিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেন ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক। এমনিতে হাইড্রোলিক সিস্টেমে টালা ট্যাঙ্কে অনবরত জল ওঠানামা করে। কখনই ট্যাঙ্কে জল জমা থাকে না। কিন্তু আমফানের তাণ্ডব আঁচ করতে পেরে আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নেন, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্রি পর্যন্ত কোনও জল নামতে দেওয়া হবে না। বাড়ানো হবে ট্যাঙ্কের ওজন। দ্রুত চাবি বন্ধ করে জল নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। টালার ট্যাঙ্কে জল ধারণ ক্ষমতা ৯ মিলিয়ন গ্যালন। দ্রুত ৮ মিলিয়ন গ্যালন জল পূর্ন করে ফেলা হয়। ট্যাঙ্কের ওজন দাড়ায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যাকে ছুঁতে পারলেও এতটুকু নাড়াতে পারল না আমফান।

টালা ট্যাংক শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ট্যাংক। টানা ১০০ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কলকাতার মানুষকে পরিশুদ্ধ খাবার জল সরবরাহ করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে এই টালা ট্যাংক। বিশ্বের বৃহত্তম এই জলের ট্যাংকটি তৈরি হয়েছে গ্যালভানাইজড লোহার চাদর দিয়ে। ১১০ ফুট উচ্চতায় এই ৩২১ ফুট পরিধি বিশিষ্ট ট্যাংকটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ৯০ লাখ গ্যালন জল ধারণ করে। ট্যাংকটির গভীরতা ১৬ ফুট। দিনের ২৪ ঘণ্টাই একদিক দিয়ে জল সরবরাহ করা হয়, অন্যদিক দিয়ে উত্তর শহরতলির পলতা থেকে পরিশুদ্ধ জল এসে ভর্তি করে ট্যাংকটি। আর সেই জল ভূগর্ভস্থ পাইপের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় উত্তর শহরতলির সিঁথি থেকে দক্ষিণ কলকাতার (কলকাতা) ভবানীপুর পর্যন্ত গৃহস্থের ঘরে ঘরে। ব্রিটিশরাই শুধু লোহালক্কড় দিয়ে তৈরি করেছিল ওই বিশালাকার ট্যাংকটি। ১৯০৯ সালে এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়। অবিভক্ত বাংলার তত্কালীন লেফটেন্যান্ট গভর্নর অ্যাডওয়ার্ড বেকার এর ভিত্তি স্থাপন করেন। ওই প্রকল্পের কাজ করেছিল ইংল্যান্ডের লিডসের বিখ্যাত ক্লেটন সন অ্যান্ড কোম্পানি। ট্যাংকটি তৈরি করতে সেই যুগে খরচ হয়েছিল পাঁচ লাখ রুপি। সময়ের ব্যবধানে টালা ট্যাংক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কলকাতার গর্বের এই ট্যাংক সম্পুর্ন সুরক্ষিত।

পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, “প্রথমত, জল ধরে রেখে ওজন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ট্যাঙ্কের। ফেল হাওয়ার ধাক্কা সেভাবে লাগেনি। দ্বিতীয়ত, ট্যাঙ্ক মেরামতির কাজে বিদেশ থেকে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে ক্রেন আনা হয়েছিল। সেটা নিয়েও চিন্তা ছিল। তবে সেদিনের জন্য ক্রেনটিকে ফিক্সড না রেখে মুভবেল করে দেওয়া হয়। ফলে সেদিন হাওয়ার গতি যেদিকে ছিল ক্রেনও সেদিকেই মুখ করে ছিল। কোনও সমস্যা হয়নি।” সোমবার সব পরীক্ষা করে পুর আধিকারিকরা বলেন যে আমফান কোনো ক্ষতি করতে পারে নি টালার।