কেয়ার অফ করোনা এবং লক ডাউন উত্তর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলবে ! 
শুভাশিস দাশ 


সারা বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের দেশেও করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে আর যে জন্য চলছে লক ডাউন । এনিয়ে ভেবে সাধারণ মানুষের লাভ নেই তবে লক ডাউনে গরীব এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত দের যে কী দশা তা সময়ই বলে দেবে ।

এর মধ্যেই বেড়ে গেলো লক ডাউনের মেয়াদ । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে হয়তো আবারও বাড়তে পারে এই লক ডাউন । কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায় । আমাদের দেশের 

দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের সংখ্যা মোট জন সংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ । পরিসংখ্যান গত দিক দিয়ে বিচার করলে এই চল্লিশ শতাংশ মানুষের কিন্তু এই কদিনেই নাভিশ্বাস উঠেছে । লক ডাউন শুরুর দিন থেকে সেই মানুষগুলোর জমানো বা মজুত কি কিছু ছিল ? ছিল না ।

এখন দেখা যাক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাদের সমাজের চিত্রটা । সমীক্ষা বলছে আমাদের অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় এগারো লক্ষ মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে এই সংকট মুহুর্তে । আর এর জেরে জেরবার হবে আমাদের অর্থনীতি । রাজ্যের আর্থিক যোগান যে রাজস্বের মধ্য দিয়ে আসে তা লক ডাউন পরবর্তী সময়ে আদায়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে । এমনিতেই সরকারের ঋণ পরিশোধ করতে রাজস্বের একটা বড় অংশ চলে যায় তারউপর এই সংকটময় পরিস্থিতি আরো সংকটে ফেলে দেবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।

উত্তরের পরিস্থিতি আরো ভয়ানক । একদিকে বাগান বন্ধ অন্যদিকে পর্যটন শিল্পের একটা বড় অংশের ক্ষতি যাতে যুক্ত রয়েছে বহু শ্রমজীবী মানুষ ।

লক ডাউনের সময় সীমা বেড়ে যাবার কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে । চা শিল্পে পঁচিশ পার্সেন্ট শ্রমিক কে কাজে লাগানো যাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে । কিন্তু প্রশ্ন হলো এই ভাবে চললে বাকী শ্রমিকরা কী করবে ? আবার ছোট শিল্প গুলোতে শ্রমিকরা তাঁদের কারখানায় থেকে কাজ করতে পারবে । 

বাইরের রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয় । সেই সব পারিযায়ী শ্রমিক ঘর মুখী হতে শুরু করেছে ।

গ্রামীণ শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে । করোনা ভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব রাখতে গিয়ে লোকে সেফ থাকার জন্য কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছে না ফলে বাড়ি তৈরির শ্রমিকরা , ফসল কাটার কৃষি শ্রমিকরা একেবারেই বিপদে পড়েছে ।

পরিসংখ্যান বলছে গ্রামে ফিরে যে সব শ্রমিক কাজের সন্ধান করবে তাঁদের হঠাৎ করে কেউ কাজেই নিতে চাইবে না । লক ডাউন উঠে গেলেও একটা আতঙ্ক মানুষকে তাড়া করে যে বেড়াবে তাতে করে সন্দেহ নাই । 
সংকট বাড়বে বই কমবে না । 
লক ডাউন পিরিয়ড উঠে গেলে প্রথমেই ধাক্কা খাবে যে মানুষগুলো তার ধাক্কা কিন্তু আমাদেরও পোহাতে হবে । 
এই দেড় মাসেই নাভিশ্বাস উঠে গেছে মানুষের । রেশনিং ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যে খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল । এই পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে সরকারের আরো বেশী করে খাদ্যের যোগান সচল রাখতে হবে । রেশনের বরাদ্দ বাড়াতে হবে যুদ্ধ কালীন পরিস্থিতিতে । আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিরাট ধ্বস নামবে করোনা উত্তর পরিস্থিতিতে । 

চৈত্র থেকেই শুরু হয়ে যায় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের বারো মাসে তেরো পার্বণ । আর এই পার্বণ কে ঘিরে গ্রাম বাংলায় চলে মেলা । মেলাকে কেন্দ্র করে শত শত মানুষ তাঁদের রুটি রুজির সন্ধান করে থাকে । করোনার ভয়ংকর ত্রাসে এবার সব বন্ধ তাই এই মেলার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর আয়ের পথ যে বন্ধ তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না । সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সব রকম গেদারিং বন্ধ ।

চৈত্রের চড়ক কিংবা বারুনীর মেলা , বৈশাখের মাসান দেবের মেলা , রথের মেলা এবং বাঙালির শ্রেষ্ট উত্সব দুর্গা পূজাও এবার নাকি বন্ধ । 
এই পার্বণের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু পরিবার । এসব বন্ধ হয়ে যাবার ফলে তারা আজ অর্থনীতির দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছে । সব কিছু স্বাভাবিক হতে আরো অনেক সময় লেগে যাবে । কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ গুলোর সামনে বিকল্প শুধু সরকারী সাহায্য ।

করোনা আতঙ্ক সহজে যাবে না মানুষের মন থেকে । এর ফলে আমাদের যাপনে এক অবিশ্বাস দানা বেঁধে মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে যে কারণে বাড়ি বাড়ি কাজ করা মানুষগুলো তাঁদের কাজ হারিয়ে বসবে । 
এই কাজের মানুষ গুলোর সংখ্যা কিন্তু কম নয় । শুধু গৃহ কর্মের সহায়িকারাই নন , বাড়িতে কামলা খাটা শ্রমিকরাও এর থেকে বাদ যাবেন না । ট্রেন চলাচল বন্ধ , খুললেও তার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা আগাম বলা যাবে না । ট্রেনের সেই সব হকার তাঁদের উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবেন । কেননা ট্রেন যাত্রীরা চট করে বাইরের কেনা খাবার কিনবেন না ।

সমাজে আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যাঁদের পেশা শুধু ছাত্র পড়ানো , তাঁদের অবস্থা ভাবুন তো । প্রাইভেট টিউটর রা কী করবেন ? 
একমাস হয়তো না পড়িয়ে ছাত্রদের অভিভাবকরা মাস মাইনে দেবেন কিন্তু এই লক ডাউন চলতে থাকলে তো অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয় । শুধু তাই নয় এসব মানুষরা তো সহজে কারো কাছে হাত পাততেও পারবেন না । 
এই মুহুর্তে লক ডাউন একেবারে উঠে যাচ্ছে না । ফলে কর্ম হারানো মানুষগুলোর যে কী দশা হবে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে ।

মানবিক দিক বিচার করে কি কেন্দ্র কি রাজ্য সরকার না বেছে প্রত্যেক পরিবার পিছু অন্তত দশ হাজার টাকা ব্যাংককে ঢুকিয়ে দিন । পাঁচশ কিংবা হাজার টাকায় যে কিচ্ছু হবে না ? 
আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষ গুলোর জন্য নতুন আর্থিক প্লান এখনই না করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হয়ে উঠবে এটা আজ দিনের মত সত্যি ।