দুনিয়া একটা গভীর অসুখে রয়েছে। একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কে বেশি কে কম সেটা বড় কথা নয়। আক্রান্ত সাধারনভাবে মানুষ। ইতালি কিংবা স্পেন কিংবা ফ্রান্স বা চিনা প্রতিদিন লাখে লাখে বাড়ছে। নোভেল করোনা ভাইরাস, বায়ুবাহিত নয় মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগে যেভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাতে মুক্ত নয় দুনিয়ার কোনও দেশ, মুক্ত নয় আমাদের ভারতবর্ষও। আমাদের গভীরভাবে দায়বদ্ধতা পালন করতে হবে এর কোনও বিকল্প এই মুহূর্তে থাকতে পারে না। এভাবেই জানালেন সি পি আই এম এর বিধায়ক  সুজন চক্রবর্তী ।

গতকাল একটি ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন- বলা হচ্ছে সোশ্যাল ডিস্টান্সিং, যার মানে কোভিড-১৯ এর যুদ্ধে মানুষকে জিততে হবে। এখানে এই সোশ্যাল ডিস্টান্সিং মানে হচ্ছে একটা সোশ্যাল বন্ডিং ফর ইউনিফাইডলি অ্যাক্সেপ্টিং মেন্টাল ক্লোসনেস ফর এ ফিজিক্যাল ডিস্টান্সিং। তিনি বলেন, ফিজিক্যাল ডিস্টান্সিং-মেন্টাল নয়। ফিজিক্যাল ডিস্টান্সিং মানে যেটা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং বলা হচ্ছে তার মানে লক ডাউন ঘরে থাকুন বাইরে বেরোবেন না। যারা জরুরী কাজের সাথে যুক্ত তাঁরা ছাড়া সকলেই ঘরে থাকুন। আমরা আবেদন করছি আপনারা তা পালন করুন। 

তিনি আরও বলেন- আমরা মানে আমাদের পার্টি ১৮ই মার্চ তখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী কেউই ঘোষণা করেননি যে লক ডাউন। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ১৯ তারিখ ও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ২৩ তারিখ ৫টা থেকে। আমরা তার আগে ১৮ তারিখ সচেতন ভাবে মিছিল মিটিং করবেন না বলেই জানিয়েছি। সমস্ত কর্মসূচী বাতিল করেছিলাম। কারণ ফিজিক্যাল ডিস্টান্সিং পালন করুন। 

কেন্দ্র সরকারের কর্মকান্ডকে তুলোধোনা করে তিনি বলেন- দিল্লী সরকার যখন বললেন তখন কেউ মান্য করেননি। ৫টার সময় খোল কড়তাল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন, যত বেশি থালা বাজাবেন তত তারাতারি করোনা পালিয়ে যাবে। চালু করলেন গোমূত্র, যা চূরান্তভাবে অবৈজ্ঞানিক। পশ্চিমবঙ্গ লক ডাউন মানুষ মান্য করতে চাইছেন তখন শাসক দল কি দায়িত্ব জ্ঞানের পরিচয় দিচ্ছেন? সর্বদলীয় সভায় আমরা বলেছিলাম হু ও আইসিএমআর এর গাইডলাইন মেনে সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে তা আমরা মেনে নেবো। বিতর্কের সময় এটা নয়। মেনে চলতে হবে মেনে চলবো। সাথে সাথে আমরা তিনটি কথা বলেছিলাম- ১। যারা বাইরের রাজ্যে আছেন তাঁরা বিপদে পড়ে গেলেন। সরকার ১৯ তারিখেই বলতে পারতেন ২৩ তারিখ থেকে লক ডাউন। যে যার বাড়ি ফিরে যাওয়া। না বলাতেই সমস্যায় পড়ল। শেষমেশ আমাদের চিঠি দিয়েছি তারপর মুখ্যমন্ত্রী বলেছে।

২। বিশেষ করে দিন আনি দিন খাই, গরীব মানুষ যারা ঘরে আটকে আছে তাঁদের খাবার পোঁছে দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু আমরা দেখছি রেশনের নামে ছেলে মানুষী হচ্ছে। বরং লক ডাউন প্রক্রিয়াটাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে রেশন। দিল্লী সরকার বলছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি রাজ্য সরকার বলছে চাল, আটা।। যা পরিমাণ দাড়াচ্ছে তা প্যাকেট করে রাখা হত লোক আসত নিয়ে যেত না হলে বাড়িতে পৌঁছে দিতাম। হল না। সারাদিন মানুষ রাস্তায় ঘুরে বেরোচ্ছে। কারণ, খাদ্য সামগ্রী যোগাড় করার চেষ্টায়। যা হচ্ছে সকালে বাজার খোলা, দুপুরে মিষ্টির দোকান খোলা, বিকাল বেলা রেশন খোলা। আমরা লক ডাউন রেখে বলছি যাও বাজারে যাও। প্রয়োজনীয় ছাড়া বাকি খোলা রাখার দরকার কি? দশটা টাইমে দশ রকম করার মানে কি? যেটা প্রয়োজনীয় সেটা খোলা থাকুক যেটা প্রয়োজনীয় নয় সেটা খোলা থাকবে কেন? 

৩। গরীব মানুষ। দিল্লী ওয়ালা বলছে মহিলা যদি জনধন হয় তবে ৫০০ টাকা করে দেবো। রাজ্য বলছে ১ হাজার দেবো ১৫ এপ্রিল দরখাস্ত করতে। ছ্যাবলামো হচ্ছে এটা ছ্যাবলামো। গরীব মানুষকে নিয়ে ছেলে মানুষী করা হচ্ছে। না এটা চলতে পারে না। দিল্লী সরকারকে আমরা বলছি জনধন বা গরীব অ্যাকাউন্টে ৫০০০ টাকা করে কেন ট্রান্সফার করা যাবে না? কেন রাজ্য সরকার ২০০০ টাকা করে ট্রান্সফার করা যাবে না। অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ করে, সকাল দুপুর সন্ধ্যে বাংলার কম্ম প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। খালি প্রচার প্রচার আর প্রচার। এসব বন্ধ করে গরীব মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকাটা পৌঁছে দিন। গরীব মানুষ লক ডাউন মানছে মানতে চায় শুধু চায় সরকার যেন তাঁদের খাদ্যের ওপর নজর দেয়। 

বর্তমান পরিস্থিতিতে যা ঘটছে তার উল্লেখ করে জানান- কিন্তু কি দেখছি আমরা। দিল্লী সুদের ওপর হার কমিয়ে দিল, বয়স্ক মানুষ গুলো মরুক। রাজ্য কি করছে? সবাই জানে ৭ জন মারা গেছে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মারা গেছে ৩জন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি এটা আপনার কাজ নয় এটা ডাক্তারের কাজ। হাওড়া বা নীল রতন সরকারে মারা যাওয়ার পর জানা গেল ওরা করোনা আক্রান্ত। কেন ডাক্তারের সুরক্ষার ব্যবস্থা ভালো মতো করা হচ্ছে না। এই সংকট কালে বাংলার গর্ব প্রচারের সময় এটা নয় এই সংকট কালে মুখ্যমন্ত্রীর অনুগামীরা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবেন, প্রচার করবেন, মাইক বাজাবেন এসব বন্ধ করুন। বরং মুখ্যমন্ত্রীসহ বাহিনী নিয়ে যেভাবে ঘুরে বেরাচ্ছেন। মানুষ গুলো বিপদে আছে আমরা মুখ দেখাই টিভিতে মুখ দেখাই। এটার মধ্য দিয়ে লক ডাউনের বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টা হচ্ছে। দয়া করে করবেন না। ফিজিক্যাল ডিস্টান্সিং মান্য করুন ঘরে থাকুন সরকার দায়বদ্ধ ভাবে খাবারটা পৌঁছে দিক আপনি ঘরে থাকুন। যদি না করতে পারে তবে সরকার সেটা সমাধানের চেষ্টা করুক। এই কঠিন সময় এটা যুদ্ধ আমরা সেই মনোভাব থেকে আমরা বলছি হু ও আইসিএমআর এর নিয়মে রাজ্য সরকার চলে আর রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুসারে সবাই আমরা চলি। মুখ দেখানোর সময় এটা না মানুষকে পাশে রেখে মানুষকে বাঁচানোর সময় এটা। সেটাই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।