কেউ বলেন ন্যাড়া পোড়ানো, ভেরার ঘর পড়ানো, কেউ বা বলেন চাঁচর, আবার কেউ বলেন ম্যাড়া পোড়ানো, কোথাও আবার বুড়ির ঘর পোড়ানো। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, ঘটনাটা এক। দোলের আগের দিন এই যে বহ্ন্যুৎসব, আদতে এ হল হোলিকাদহন।
স্কন্দপুরাণে হোলিকা ও প্রহ্লাদের গল্প আছে। হোলিকা দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বোন, প্রহ্লাদের পিসি। প্রচণ্ড নিষ্ঠুর ছিল দুই ভাইবোন। ব্রহ্মার আশীর্বাদে হিরণ্যকশিপু অপরাজেয় থাকার বর পেয়েছিল। তাই কোনও দেবতাকেই মানত না সে। বলত দেবতা নয়, পুজো তাকেই করতে হবে। কিন্তু হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিল বিষ্ণুর ভক্ত। সে তার বাবার আদেশ মানতে রাজি নয়। হিরণ্যকশিপু ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। নানা ভাবে ছেলেকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু ফল হল না। শেষে প্রহ্লাদকে ভুলিয়েভালিয়ে তাকে সঙ্গে নিয়ে জ্বলন্ত চিতায় বসল হোলিকা। নিজে গায়ে দিল অগ্নি-নিরোধক শাল। কিন্তু আগুন জ্বলে উঠতেই সেই শাল উড়ে গিয়ে ঢেকে ফেলল প্রহ্লাদকে। অগ্নিদগ্ধ হল হোলিকা। বিষ্ণুর আগমন ঘটল। তাঁর হাতে নিহত হল হিরণ্যকশিপু।
দহনের এই আগুন হল অশুভের বিরুদ্ধে শুভের জয়ের প্রতীক। এই উৎসবটির মধ্য দিয়ে ভালো কাজের জয় আর মন্দের ক্ষয়কেও বোঝানো হয়ে থাকে। আগুনকে শক্তির প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় এবং এর মধ্য দিয়ে অমঙ্গল বা কুপ্রভাবকে ধ্বংস করা হয়। হোলি শব্দটা এসেছে হোলিকা থেকে। হোলিকা দহনের পরের দিন আনন্দে রঙের খেলায় মেতে ওঠে সবাই। পালিত হয় হোলি।
তবে ডিজিটাল যুগে আর পাঁচটা সংস্কৃতির মতন এই বহ্ন্যুতসব হাড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। প্রত্যেক বৎসরের দোলযাত্রার আগের দিন বিভিন্ন গ্রামে ছোট শিশুদের দেখতে পাওয়া যেতো সকাল থেকে ভেরার বা ভেরা ঘর তৈরির কাজ। প্রথমে ভেরা ঘর তৈরী করে এবং সন্ধ্যায় তাকে পুজো দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সন্ধ্যার সময় সকল বন্ধু মিলে পিকনিকের আয়োজন করে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
আজ রবিবার জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের সাপ্টিবাড়ী ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশীরডাঙ্গা গ্রামে দেখতে পাওয়া যায় হারিয়ে যাওয়া সেই ভেরার ঘর এবং কাশীরডাঙ্গা গ্রামে বেশ কয়েকজন ছোট্ট শিশু সকাল থেকে উঠে পরে লেগেছে ভেরা ঘর তৈরী করার জন্য। তাদের জিজ্ঞেসা করলে তারা বলে, সকাল থেকে শুরু করেছি ভেরা ঘর তৈরির কাজ। এই কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সন্ধার সময় তাকে পুজো দিয়ে পুরিয়ে ফেলা হবে এবং রাতে সকল বন্ধু মিলে পিকনিকের আয়োজন করেছি।
(তথ্যঃ ইন্টারনেট/উইকিপিডিয়া)
বিস্তারিত রইলো ভিডিওতে
Social Plugin