গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ
অসম্মান ও বেতন বঞ্চনার বিরুদ্ধে পুনরায় রাস্তায় নামতে চলেছে বতর্মান সময়ের প্রেক্ষিতে লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকদের নয়নের মণি উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স'স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েসান যার সংক্ষিপ্ত নাম UUPTWA। আগামী ৬ ই নভেম্বর কোলকাতার যাদবপুর রেলস্টেশন সন্নিহিত ৮ বি বাসস্টান্ড থেকে বেলা ১২ টায় শুরু হবে তাদের অভিযান...লক্ষ্য তাদের অভিভাবক তথা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙগে দেখা করা তথা তাদের এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষন করা।সংগঠনের নেতৃত্ত্বের দাবী গত ২ বছর ধরে তাদের গণতান্ত্রিক অান্দোলনকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে থামানোর বহু চেষ্টা চলেছে।এমনকি তারা যাতে মাননীয় মন্ত্রীর সঙগে দেখা করে তাদের নায্য দাবীর ব্যাপারে কথা বলবে না পারেন তাই নবান্ন থেকে বিকাশ ভবন পর্যন্ত সর্বত্র ১৪৪ ধারা বলবৎ করেছে প্রশাসন।তাহলে কি একটি গণতান্ত্রিক দেশে নায্য দাবী তথা বঞ্চনা নিয়ে কথা বলা যাবে না? গণতন্ত্র প্রেমী সমস্ত মানুষকে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।



সারা দেশ জুড়ে প্রতিটি রাজ্য তাদের প্রাথমিক শিক্ষকদের নায্য বেতন( PB-4 পে স্কেল অর্থ্যাৎ বেসিক পে -৯৩০০, গ্রেড পে- ৩৬০০ হারে বেতন)দিয়ে আসছে অথচচ এক দশক ধরে পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক শিক্ষকরা পে স্কেলের দুই ধাপ নিচের বেতন (PB-2 পে স্কেল অর্থ্যাৎ বেসিক পে - ৫৪০০, গ্রেড পে ২৬০০ হারে বেতন) পেয়ে আসছেন।সুদীর্ঘ দিনের চরম এই বঞ্চনা নিয়ে সরকার তথা অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনের কোন হেলদোল লক্ষ্য করা যাইনি।অথচ এই রাজ্যে রেজিস্টারড্ প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় দশটি।এতো দিন ধরে পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক শিক্ষকদের জানানোই হয়নি যে তারা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সব দিক থেকে বিচার বিশ্লেষণ করলে প্রায় অর্দ্ধেকের কম বেতন পাচ্ছেন।যোগ্যতা এক হওয়া সত্ত্বেও বোদহয় সারা ভারতবর্ষে এরকম অসম্মানজনক বেতন বঞ্চনা নজিরবিহীন তথা বিরল।



বহু আলোচিত 'রামধনু জোটের' শিক্ষক সংগঠন তথা UUPTWA নামক হৃদয় ও আবেগ তৈরী একটি তথাকথিত ভুইফোঁড় প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের অকুতোভয় কয়েকজন বীর শিক্ষক এই অসম্মান ও বৈষম্যের কথা সারা রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকসম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরেন।যথেষ্ট সংখ্যক তথ্য ও যুক্তি কে হাতিয়ার করে গত দুই বছর ধরে ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে তারা সরকারের চোখে চোখ রেখে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তথা সংশোধিত বেতনের দাবী জানিয়ে এসেছেন।কিন্তু বিরাট সংখ্যক শিক্ষকদের কিঞ্চিত গ্রেড পে বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন সদর্থক ভূমিকা সরকারকে নিতে দেখা যায়নি।তবে নতুন বা সদ্য যোগদানকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেল PB-3 তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।কিন্তু তার সঙগে বিরাট সংখ্যক সিনিয়র বা পুরাতন শিক্ষকদের নায্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর সহ পে স্কেল পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি সরকার বাহাদুরের পক্ষ থেকে।অথচ UUPTWA সংগঠনের তরফ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন তথ্য ও যুক্তি দিয়ে নবান্ন থেকে বিকাশ ভবনের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আধিকারিকদের কাছে বারংবার দেখা করে সেই বহুচর্চিত ফিটমেন্ট  ফ্যাক্টর পাবার ব্যাপারে পাওয়া আশ্বাস এখন বিফলে গেছে।তাদের কাছ থেকে একটাই কথা শোনা গেছে যে ফাইল পাঠিয়েও ফাইনান্স থেকে এই ব্যাপারে কোন সদর্থক উত্তর তারা পাননি।তাহলে কি সুকৌশলে নতুন শিক্ষকদের সঙগে পুরাতন শিক্ষকদের বা মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙগে সাধারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের একটা দুরত্ব তৈরী করতে চাইছে প্রশাসন?প্রশ্ন তুলেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 





এদিকে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে পশ্চিম বঙগের লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকদের।কারণ তারা বুঝে গেছেন মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙগে মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের কোন বৈষম্য থাকবেনা বলে যে কথা দিয়েছিলেন তা হয়তঃ বাস্তবে নাও হতে পারে এমনকি নতুন প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙগেও বিস্তর বেতন বৈষম্য তাদের থেকে গেল!পেকমিশনের হতে চলা নতুন বেতনক্রমেও তাদের বেতন মাদ্রাসার প্রাথমিক শিক্ষদের বেতনের সঙগে বিরাট ফারাক তৈরী হওয়ার অশঙকা করছেন।তাই আর সময় নষ্ট করতে আগ্রহী নয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কারণ

UUPTWA সংগঠনের জন্ম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক/শিক্ষিকাদের বঞ্চনা তথা আত্মসম্মান ফিরিয়ে দেবার লড়াই করার জন্য তা সে বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে দেখা করা,আইনি লড়াই করা, আমরণ অনশন কিংবা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ কর্মসূচী কোন কিছুই আর বাদ রাখতে চান না নেতৃত্ব।কারণ পাখির চোখ পশ্চিম বঙগের কমবেশী ১,৮৬,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকদের নায্য বেতন তথা অাত্মসম্মান পুনরুদ্ধার।ইতিমধ্যে খবর আসছে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষকসম্প্রদায় সমাবেশকে ঘিরে নানা জায়গায় ছোট বড় মিটিং,মিছিল করছেন,সমাবেশকে সফল করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন।



           তাই আগামী ৬ই নভেম্বর আবারও লাল, নীল, সাদা, সবুজ, গেরুয়া  সব রং একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামছে এই সংগঠনের লক্ষাধিক সদস্য,সদস্যাগণ। প্রতিটি শিক্ষকই,শিক্ষিকাই তাদের ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক সত্ত্বা কে পিছনে রেখে অনায়াসেই মিশে যেতে চলেছেন এই 'রামধনু'র সাথে। এক বিরল প্রাথমিক শিক্ষক সমাবেশের সাক্ষী হতে চলেছে সমস্ত কলকাতা তথা রাজ্যবাসী। 

               সকল বঞ্চিত প্রাথমিক শিক্ষক/শিক্ষিকাকে এই সমাবেশে স্বাগত জানিয়েছেন সংগঠনের সম্পাদিকা পৃথা বিশ্বাস।এখন লক্ষনীয় বিষয় এই সমাবেশেকে ঘিরে প্রশাসন কিভাবে মোকাবিলা করতে চলেছে?