পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভের প্রথমদিনেই রেকর্ড জমায়েত হয়। একদিকে গান-স্লোগান-কবিতায় যেমন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন-তেমনি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা এসে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছেন। ইতিমধ্যে স্কুল বয়কটের ডাকও দিয়েছে মঞ্চ। এরই মধ্যে কেন্দ্রের হিউম্যান রিসর্স ডেভেলপমেন্টের PAB রিপোর্ট সামনে আশায় মুখ পুড়লো রাজ্যের। এই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনক্রম। কেন্দ্রের হিসেবে বর্তমানে ৬০% অর্থ পাচ্ছেন পার্শ্ব শিক্ষকরা।   বাকি টাকা কোথায় গেল সেই নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।   সরকার পক্ষের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই এখনো পর্যন্ত।
এই রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ একলব্য 

আন্দোলনকারীদের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে- "যদি সরকার আলোচনায় না আসে তবে তার পরিণাম ভয়ানক হবে। সারদার মত PAB এর টর্নেডো ধেয়ে যাবে সরকারের দিকে। মহামান্য হাইকোর্টে PAB কেলেঙ্কারির মামলা করবে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। শুধু তাই নয় এর সঙ্গে আরও একটি বিশেষ পদক্ষেপ নিতে চলেছে ঐক্য মঞ্চ , এককথায় আন্দোলনকে বাস্তবায়িত করার জন্য যা যা দরকার ঠিক তা তা করবে ঐক্য মঞ্চ।"

জানা যায়- ‘সমগ্র শিক্ষা মিশন পূর্বে যা সর্বশিক্ষা মিশন' নামে পরিচিত ছিল, তার অধীনে রাজ্যের সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক হিসাবে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়ে পঠন পাঠনের কাজে এই পার্শ্বশিক্ষকরা যুক্ত হন এবং ২০১০ সালের মার্চ মাসে এই নিয়ােগ বন্ধ হয়ে যায়। 

বর্তমানে প্রায় ৪৮,০০০ কর্মরত আছেন, কিন্তু প্রায় ১৫ বছরের অধিকাল কাজে নিযুক্ত থাকার পরও NCTE rule অনুযায়ী পার্শ শিক্ষকরা সকলেই উপযুক্ত যােগ্যতা (ডি.এল.এড.) অর্জন করলেও এখনও পর্যন্ত তাদের পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা প্রদান করা হয় না, পারিশ্রমিক বা ভাতা প্রদান করা হয়। অথচ, PAB (Project Approval Board) এ বেতন কাঠামাের উল্লেখ থাকলেও তা প্রদান করার ব্যবস্থা এখনাে পর্যন্ত শিক্ষা দফতর গ্রহণ করেনি। 

এছাড়াও বেশ কিছু সুযােগ সুবিধা থেকেও পার্শ্বশিক্ষকরা বঞ্চিত বলে ঐক্যমঞ্চের পক্ষথেকে জানানো হয়েছে। তারা পারিশ্রমিক হিসাবে যা পান,তা বর্তমানে মূল্য সূচকের অনেক নীচে। তার দ্বারা জীবন নির্বাহ করা সম্ভব নয়। এর ফলে গত ৩-৪ বছরে শতাধিক পার্শ্ব শিক্ষক শিক্ষিকা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন, নয়ত দরিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মেনে আত্মহত্যা করেছেন বলেও সংগঠন সূত্রের খবর। 

মঞ্চের পক্ষ থেকে একটি PAB রিপোর্ট লিফলেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে- 
"২০১৭-২০১৮ সালের PAB রিপাের্ট অনুযায়ীঃ প্রাইমারীতে প্যারা টিচারদের বেতন থেকে বছরে মােট ১৩,৪২,৪০,৬৫২ টাকা এবং আপার প্রাইমারীতে ২১,০২,৭০,৮১৬ টাকা কেটে বাকি টাকা ভাতা (Consolidated Pay) হিসাবে দিয়েছেন। আর ২০১৯-২০২০ PAB রিপাের্ট অনুযায়ী প্যারা টিচারদের Elementary teacher হিসাবে দেখানাে হয় এবং প্রাইমারীতে শিক্ষক প্রতি ১৫০০০ টাকা হিসাবে বছরে মােট ২৭,৪০,৬৫,০০০ টাকা এবং আপার প্রাইমারীতে শিক্ষক প্রতি ২০,০০০ টাকা হিসাবে বছরে মােট ৪৬,০২,৮০,০০০ টাকা কেটে রেখে আমাদেরকে ভাতা দিচ্ছেন।"
পার্শ্বশিক্ষক ভবেশ চন্দ্র সরকার এই বিষয়ে জানান- "কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থের থেকে রাজ্য 'কাটমানি' রেখে আমাদের বেতন দিচ্ছেন। আমাদের কেন্দ্রিয় হারে বেতন চালু না হয়া পর্জন্ত এই সংগ্রাম চলবে।'
তবে এখন দেখার পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ মহামান্য হাইকোর্টে PAB কেলেঙ্কারির মামলা করবে কিনা ।