গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ
আগামী ১৯ ও ২০ শে অক্টোবর পুরুলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বর্তমানে বৃহত্তম প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA এর প্রথম রাজ্য সন্মেলন।এই সম্মেলন ঘিরে উস্থিয়ান দের মধ্যে নতুন করে উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছে।উস্থির গত দুবছর ধরে করে আসা আন্দোলনের ফল ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছেন কমবেশী প্রায় ১,৮৬,০০০ শিক্ষক- শিক্ষিকা।তাদের বেতনের স্কেল PB-2 থেকে PB-3  হয়েছে সঙগে গ্রেড পে বৃদ্ধি।তাই একটি গণতান্ত্রিক ভাবে সংগঠিত সফল আন্দোলন কারী UUPTWA বা উস্থির নেতৃবৃন্দের উপর পাহাড় প্রমাণ প্রত্যাশার চাপ ও তাদের নিত্যনতুন শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনের ধারা লক্ষাধিক প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। পশ্চিমবঙগের লক্ষাধিক শিক্ষক- শিক্ষকা ইতিমধ্যে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন অনুষ্ঠিত হতে চলা সম্মেলনে কী কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে চলেছে? তাদের আশা এই সন্মেলন তাদের আগামীদিনে  শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থের লড়াইয়ে নতুন আশা যোগাবে,অান্দোলনের নতুন দিশা দেখাবে। ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রায় এক দশক ধরে চলে আসা অসম্মান ও অর্থিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে দুই বছর যাবৎ একক ভাবে লড়াই করে আসছে উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারী টিচার্স ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশান যার সংক্ষিপ্ত নাম UUPTWA।

প্রাথমিক ভাবে লড়াইটা শুরু করেছিল কোলকাতার টালিগঞ্জ সার্কেলে গুটিকয়েক অকুতোভয় ও দৃঢ়চেতা শিক্ষক-শিক্ষিকা।পরে  সেই সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা দের আহবানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্যোগী ও লক্ষ্যতে অবিচল শিক্ষক-শিক্ষিকারা সংগঠনে যোগদান করেন ও সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি করেন।অচিরেই লক্ষাধিক সদস্য-সদস্যা সংগঠনের সম্পদ হয়ে ওঠেন।আন্দোলনের শুরুতে নেতৃবৃন্দ শিক্ষা দপ্তরে সংশ্লিষ্ট অাধিকারিকদের কাছে আবেদন,নিবেদন করেছিলেন,দাবীর পক্ষে বিভিন্ন তথ্য তুলে দিয়েছিলেন।পরে শিক্ষা মন্ত্রীর সঙগে দেখা-সাক্ষাৎ করা,ডেপুটেশন দেওয়াতেও কোন রকম ইতিবাচক পদক্ষেপ সরকার বাহাদুরের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের কাছে অনুরোধ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রায় দশ বছর ধরে চলে আসা বেতন বৈষম্য,অসম্মান তথা সরকারী উদাসীনতার বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।কিন্তু প্রথমদিকে প্রায় কেউই সেরকম ভাবে এগিয়ে এসে তাদের পাশে  দাঁড়াননি বা অান্দোলনে সাহায্য করেননি।
পরবর্তীকালে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে বেশ কয়েকটি সংগঠন তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।গত দুই বছর যাবৎ নানা রকম ভাবে আন্দোলন সংঘটিত হয় এবং অবশেষে নায্য বেতন ও অনৈতিক বদলী হওয়া ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে তাদের পুরাতন জায়গায় ফিরিয়ে আনার দাবীতে নেওয়া ১৪ দিনের আমরণ অনশন কর্মসূচীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাদের দাবীর কিছুটা মেনে নেন এবং সরকারীভাবে বেতন বৃদ্ধির G.O প্রকাশ করেন।এই নির্দেশে নতুন যোগদানকারী শিক্ষক,শিক্ষিকাদের বেতনের স্কেল ও গ্রেডপে বৃদ্ধি হলেও পুরাতন শিক্ষকদের সেরকম বেতন বৃদ্ধি হয়নি কারণ যে ভাবে আশা করা হয়েছিল যে সরকার নতুন ও পুরাতন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বর্দ্ধিত বেতনের মধ্যে সমতা আনতে ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর দিয়ে ফিক্সেসান করার অাদেশ দেবেন।কিন্তু সেই আশা ক্রমশঃ নিরাশায় পরিনত হয়েছে।ফলে কিছু সংখ্যক নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকা  বাদে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে।কিন্তু UUPTWA সংগঠনের সুযোগ্য নেতৃবৃন্দ দিনরাত এক করে তাদের প্রাপ্য ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর সহ বেতনের দাবীর সপক্ষে সমস্ত তথ্য বিকাশভবন থেকে নবান্নতে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দিয়ে এসেছেন এবং সেই মতাবেক দাবীর পক্ষে জোরালো সাওয়াল করে এসেছেন।সম্প্রতি সরকার পে-কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তাতেও আশানুরুপ বেতন বৃদ্ধির ইঙগিত পাওয়া যায়নি।ফলে প্রাথমিক শিক্ষকসম্প্রদায় উভয় সঙ্কটে দিন গুজরান করছেন।তবে UUPTWA রাজ্য নেতৃত্ব বারবার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশ্বাস দিয়েছেন তারা ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর সরকারের কাছ থেকে যে কোন মূল্যে ছিনিয়ে আনবেন।এখন সকলে তাকিয়ে আছেন সরকার বাহাদুরের সদর্থক ভূমিকা নেওয়ার ব্যাপারে।যদিও সমস্ত শিক্ষকদের জন্য পে-কমিশনের নোটিশ জারি হয়েছে,ব্যাতিক্রম প্রাথমিক শিক্ষকদের।
তাই আশা করা যায় তাদের জন্য পে-কমিশনের নিয়মকানুনের নোটিশ কিছুদিনের মধ্যে বার হতে চলেছে।এমতাবস্থায় UUPTWA রাজ্য সম্মেলন ও সেখান থেকে উঠে আসা ভবিষ্যত কর্মসূচী কি দিশা দেখাতে চলেছে তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে জল্পনা ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে।সম্মেলন থেকে নেওয়া হতে পারে বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।আগামীদিনে নায্য বেতনের আন্দোলন ছাড়াও কি কি বিষয়ে আন্দোলন করা যেতে পারে সে বিষয়ে?তবে কি UUPTWA অন্যান্য সংগঠনের মতো কেবলমাত্র নায্য বেতনের দাবী ছাড়াও অন্যান্য নায্য দাবীর আন্দোলন করতে চলা পূর্ণাঙগ একটি সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে? আগামী দুইএক দিনেই তা জানা যাবে হয়তঃ।

সম্মেলনটি ‌মূলতঃ প্রতিনিধিত্ত্ব মূলক রাজ্য সম্মেলন হতে চলেছে।নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নতুন করে নির্বাচন করবেন সংগঠনের আগামীদিনের সভাপতি,সম্পাদক বা কোষাধক্ষ্য প্রভৃতিকে। সম্মেলনে পেশ করা হবে সংগঠনের বার্ষিক  হিসাবনিকেশ।উক্ত বিষয়ে রাজ্য নেতৃত্ব আগেই সমস্ত উস্থিয়ান দের অবগত করেছেন।পরে এই সম্মেলন থেকে উঠে আসা সমস্ত সিদ্ধান্ত সমস্ত উস্থিয়ানদের জানানো হবে।এখন দেখার UUPTWA মাত্র দুই বছরে এতটা জনপ্রিয় একটি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন হিসাবে আরো কতটা দায়িত্বশীল সংগঠনে পরিণত হয়।তাই সমস্ত প্রাথমিক শিক্ষক- শিক্ষিকা এমনকি অন্যান্য শিক্ষক সংগঠনগুলি  তাকিয়ে আছেন আগামীদিনে তাদের ভূমিকা ও কর্মপদ্ধতির দিকে।