রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী তুলবেন না। কিন্তু একটি ‘স্মার্ট কার্ড’ প্রয়োজন। এমন দাবি রয়েছে রাজ্যের বিত্তশালী মানুষদের। রেশন কার্ডকে একটি পরিচয়পত্র হিসাবে রাখতে চান তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিধানসভায় সর্বদল বৈঠকে স্বচ্ছল নাগরিকদের ডিজিটাল রেশন কার্ড প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়। সেই মতো খাদ্য দপ্তর ১০ নম্বর ফর্ম চালু করছে। এই কার্ডে নাম, ঠিকানা ছাড়াও জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। রাজ্য মনে করছে রেশন কার্ডকে এখন দু’টি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। যাঁরা গণবণ্টন ব‌্যবস্থার সুযোগ পেতে চান তাঁদের রেশন কার্ডের প্রয়োজন একটি কারণে। যাঁরা পরিচয়পত্র হিসেবে রেশন কার্ডকে ব্যবহার করতে চান তাঁদের প্রয়োজন এক ধরনের।

স্বচ্ছল পরিবারগুলিকে দেওয়া হবে ভর্তুকীহিন ডিজিটাল রেশন কার্ড, যা কি না সরকারি পরিচয়পত্রের ভূমিকা নেওয়ার পাশাপাশি গণবণ্টন বহির্ভূত গেরস্তালির জিনিসপত্র কিছুটা ছাড়ে কেনার সুবিধাও দেবে। নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের বহু প্রতীক্ষিত সেই রেশন কার্ডের জন্য আবেদনের দরজা খুলছে আগামী মাসেই। খাদ্য দপ্তরের খবর, ৫ নভেম্বর ভরতুকিহীন ডিজিটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট ১০ নম্বর ফর্ম পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট রেশন দোকান, খাদ্য দপ্তরের অফিসে। ফর্ম বিলি ও গ্রহণের জন্য রাজ্যজুড়ে বিশেষ শিবিরও চালু হচ্ছে সেদিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আবেদন করা যাবে অনলাইনেও।পশ্চিমবঙ্গ খাদ্য দপ্তরের ইতিহাসে এই প্রথম রেশন কার্ডের আবেদন অনলাইনে জমা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। দপ্তর জানিয়েছে, www.wbpds.gov.in সাইটে গিয়ে ১০ নম্বর ফর্ম ডাউনলোড করা যাবে। ফর্ম পূরণ করে তা হাতেহাতে জমা দেওয়ার পাশাপাশি পুরো পর্বটি কম্পিউটারে বা মোবাইলেই সেরে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।



সেক্ষেত্রে পরিচয়ের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ডের ছবি আপলোড করতে হবে। এবং আবেদনের তিরিশ দিনের মধ্যে ডাকযোগে বাড়িতে চলে আসবে ঝাঁ চকচকে ডিজিটাল রেশন কার্ড। সেটি হাতে পাওয়ার পর পুরনো কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। নতুন স্মার্ট রেশন কার্ড নিয়ে গ্রাহক ভরতুকিহীন জিনিসপত্র (তেল, সাবান, মশলা, টুথপেস্ট ইত্যাদি) কিনতে পারবেন। এমনকী এই কার্ড ব্যবহার করে বেসরকারি বিপণন কেন্দ্র থেকেও যাতে ছাড়ে গ্রাহকরা জিনিসপত্র কিনতে পারেন, সে ব্যাপারেও আলোচনা শুরু হয়েছে। সোমবার বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন খাদ্য দপ্তরের আধিকারিকরা। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আবেদনপত্র জমা পড়ার তিরিশ দিনের মধ্যে ডিজিটাল রেশন কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন বিত্তশালী মানুষজন। যে সমস্ত বিত্তশালী মানুষদের ২ টাকা কেজি চালের ডিজিটাল রেশন কার্ড আছে, তাঁদের অনুরোধ করা হচ্ছে সে কার্ড ছেড়ে দিয়ে ১০ নম্বর ফর্ম জমা দিতে।” ৫ নভেম্বর থেকে ডিজিটাল রেশন কার্ড সংক্রান্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের স্পেশ্যাল ক্যাম্প শুরু হচ্ছে রাজ্যজুড়ে। বিডিও অফিস, পুরসভা, কর্পোরেশনের বোরো অফিসে আবেদনপত্র জমা দেওয়া যাবে। সেখানেও সরাসরি হাজির হয়ে ১০ নম্বর ফর্ম জমা দিতে পারবেন বিত্তশালী মানুষজন। এছাড়াও ওই বিশেষ শিবিরে ডিজিটাল কার্ড সংক্রান্ত যে কোনও নাগরিক তিন থেকে নয় নম্বর পর্যন্ত ফর্ম জমা দিতে পারবেন। এর আগে ৯-২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের স্পেশ্যাল ক্যাম্পে ৯২ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। এবার ১০ নম্বরের জন্য কত ফর্ম জমা পড়ে, সেটাই দেখার।