বাসুদেব দাস, দিনহাটাঃ জীবনে বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো উন্নতি, সেটা মানসিক বা আর্থসামাজিক হোক কিংবা হোক প্রযুক্তিগত। আধুনিক জীবনে প্রযুক্তির অবদান একেবারে অনস্বীকার্য। সেটা বাড়ির সামনের এক চিলতে জমিতে শক সবজি ফলানো হোক কিংবা বিঘার পর বিঘা মিশ্র কৃষি পদ্ধতি হোক, সব খানেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির করাল থাবাতে একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে মানুষ। তবে এই বিজ্ঞানের সম্প্রসারন টা কৃষি ভিত্তিক করার প্রধান কারণ অপর্যাপ্ত খাদ্য ভান্ডার। ঘন অরণ্যে আদিমানবের চিৎকার করে লোক জানানোর পদ্ধতিটা পায়রা বা ঘোড়ায় করে চিঠির আদান প্রদানের যোগাযোগ ব্যবস্থা চূড়ান্ত উন্নতি লাভ করে আজকে satelite, tower, signal এর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। হাতে smartphone তারই এক প্রভাবশালী উদাহরন।
দার্শনিক কোপারনিকাস ,গ্যালিলিও দের যুগে ব্যবহৃত অপর্যাপ্ত টেলিস্কোপ গুলো আজ উন্নতি লাভের মাধ্যমে স্বমহিমায় বিরাজমান। লক্ষ লক্ষ তারার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে চলছে রোজ। জ্যোতির্বিদ্যার গননা থেকে সহজ হয়েছে, পূর্ণিমা-অমাবস্যা নির্নয় সহ নানান তিথির নির্ধারণ। এমনকি, যেকোনো মহাজাগতিক ঘটনার আগাম পূর্বাভাস দেওয়াটাও প্রযুক্তির উন্নতিকেই ইঙ্গিত করেছে।
পড়াশুনার জগতেও এসেছে এক আমূল পরিবর্তন, স্মার্টফোনে যে কোনো অজানা ব্যাপার সম্বন্ধে জানতে হলে Google App এ search করলে নিমেষেই ভেসে আসছে তার উত্তর। এছাড়াও social media এর দৌলতে হাতের কাছে চলে এসেছে দূরের বন্ধু- বান্ধব ও শিক্ষকেরা।বিভিন্ন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়ে গেছে স্মার্ট ক্লাস। হয়তো এটাই শিক্ষার ভবিষ্যত। ক্রমেই কম্পিউটার নির্ভর হতে উঠেছে পড়াশুনা। বিভিন্ন ধরনের চাকুরী সহ নানান পরীক্ষা হচ্ছে online mode এ। এরা সরাসরি প্রযুক্তিগত উন্নতির ভীত কে আরো শক্ত করে তুলেছে।
আগামী এক দু দশকের মধ্যে যে খাতা কলমের ব্যবহার উঠে যেতে পারে, তার সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করাও বোকামি হতে পারে।
"বিজ্ঞান শুধু বিশেষ জ্ঞানে থেমে নেই আজ। আর প্রযুক্তি ছাড়াচ্ছে যুক্তির আকাশ।" পৃথিবী ছাড়িয়ে সৌর মণ্ডলে, তথা মহা শূন্যে পাড়ি জমাচ্ছে আজকের সভ্যতা, আবিষ্কারের সুড়সুড়িটা আজও মানুষের মনে তেমনটা উজ্জ্বল যেমনটা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার। গ্রহানুপুঞ্জ দের ভৌত ও ঘূর্ণন ধর্মের উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে পৃথিবীর নানান মহাকাশ সংস্থা। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞান আজ সূর্যেও পাড়ি জমাচ্ছে। বিপুল শক্তিধারী সূর্যের গঠন ও উপাদান মানুষের জীবন চলা আরো সহজ করতেই পারে। গত বছরই NASA থেকে Parker Solar Probe নামক প্রানবিহীন সূর্য যানের প্রক্ষেপণ মানব মস্তিষ্কের ব্যাপক উন্নতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ । আমাদের দেশের মহাকাশ সংস্থা ISRO কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। অন্যান্য মহাকাশ সংস্থাকে রীতিমত টেক্কা দিয়েই একের পর এক সফল উৎক্ষেপণ করে চলেছে তারা। মঙ্গলযান, চন্দ্রযান, চন্দ্রযান-২ প্রভৃতি আমাদের দেশের মুকুট হয়ে রঞ্জিত হয়ে থাকবে সর্বদা।
বিজ্ঞান শুধু মহাকাশ অর্থাৎ বৃহৎ বস্তুদের নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে এমন ভাবার কোনো অবকাশ নেই। পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদেরা, তাদের নিজস্ব ভিত্তিতে বিভিন্ন অনু - পরমাণু তথা তাদের ভিতরের ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন আবিষ্কারে সমর্থ হয়েছে।সম্প্রতি আরও জানা গিয়েছে যে - প্রোটন বা নিউট্রন এদেরকে বিভাজন করা সম্ভব,প্রতিটি প্রোটন বা নিউট্রন একাধিক কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। মানবজাতির প্রভূত কল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বদা সচেষ্ট ভূমিকা নিয়ে এসেছে এবং এই উন্নতি আরও সম্প্রসারণের পথেই এগোচ্ছে।
একদা মানবজাতির দ্বারা আবিষ্কৃত বিজ্ঞান তার প্রযুক্তির উন্নতি ঘটিয়ে অদুর ভবিষ্যতে যাতে মানুষকেই অধম কোনো জীবে পরিণত না করে দেয় , এই আশা রেখে বিজ্ঞানের শুধু ধনাত্মক উন্নতি কামনাতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখছি।
" বিজ্ঞান তুমি ,
বিশেষ হয়ে আসো ।
যুক্তিবাণে বেধাও আজি ,
জানি হারবে মহাকাশও । "
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊