সংবাদ একলব্য, ৩১ আগস্টঃ অমৃতা প্রীতম সিং পাঞ্জাবি সাহিত্যে নারীদের মুখপাত্র এবং সেই সাথে বিংশ শতাব্দীর পাঞ্জাবের শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যিকদের একজন। এক কঠিন সময় ও কঠিন সমাজে জন্ম নেয়া অমৃতা প্রীতম সমকালীন অন্যান্য নারীর মতো জীবন কাটাননি, জীবন নিজের ইচ্ছেনুযায়ীই বেঁচেছেন। সমাজের বাঁধন পুরোপুরি ছিন্ন করতে পারেননি, কিন্তু নিজের যাপিত জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন- এভাবেও বাঁচা যায়, এভাবেও একজন নারী বাঁচতে পারে। "তিনি ভালোবেসেছেন, বিদ্রোহ করেছেন, পুরুষের প্রেমে নিমগ্ন হয়েছেন, আবার পুরুষের পরিসীমাটিও সচেতনভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার জীবনদর্শন ও হৃদয়ের গূঢ়তম কথাগুলো নিঃসৃত হয়েছে তার সাহিত্যে, তার কবিতার ছন্দে, ঝংকারে।" আজ তাঁর শততম জন্মদিনে গুগুল ডুডুলের মাধ্যমে জানিয়েছে শ্রদ্ধা। আসুন জেনে নেই অমৃতা প্রীতম সিং  এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত- 

অমৃতা প্রীতম সিং : পাঞ্জাবি মহিলা লেখিকা

(৩১শে আগস্ট, ১৯১৯ --- ৩১শে অক্টোবর, ২০০৫)
জন্ম ও জন্মস্থান :-
অমৃতা প্রীতম সিং ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে আগস্ট পরাধীন ভারতের পাঞ্জাবের গুজরানওয়ালা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।
পেশা :- লেখক (ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, কবি) ও পত্রিকার সম্পাদক।
গ্রন্থপঞ্জী :-
অমৃতা প্রীতমের কর্মজীবনের ছয় দশক ধরে তিনি ২৮টি উপন্যাস, ১৮টি গদ্য-সংকলন, ৫টি ছোটগল্প এবং ১৭টিরও বেশি কাব্য/কবিতা-সংকলন গ্রন্থ রচনা করেন।
উপন্যাস :-
১) "পিঞ্জর" ("Pinjar") ["কঙ্কাল"]
২) "ডাক্তার দেব" ("Doctor Dev")
৩) "কোরে কাগজ, উনপঞ্চাশ দিন" ("Kore Kagaz, Unchas Din")
৪) "ধরতি, সাগর অর সেপেন" ("Dharti, Sagar aur Seepian")
৫) "রঙ কা পাট্টা" ("Rang Ka Patta")
৬) "দিল্লী কি গলিয়োঁ" ("Dilli ki Galiyan")
৭) "তেরাহয়ান সূর্য" ("Terahwan Suraj")
৮) "যাত্রী" ("Yaatri")
৯) "জ্বিলাবতন" ("Jilavatan-১৯৬৮)
১০) "হারদত্ত কা জিন্দেগিলামা" ("Hondatt Ka Zindaginama")
১১) "রসিদি টিকিট" ("Rasidi Ticket"-১৯৭৬)
১২) "সাডোস অফ ওয়ার্ডস" ("Shadows of Words")
১৩) "এ রেভিনিউ স্ট্যাম্প" ("A Revenue Stamp")
১৪) "Kagaz Te Kanvas" ["The Paper and The Canvas"] ("কাগজ তে ক্যানভাস"-১৯৮১)
ছোটগল্প :-
১) "কাহানি জো কাহানি নহী" ("Kahaniyan jo Kahaniyan nahi")
২) "কাহানি কি অঙ্গন মে" ("Kahaniyan ke Angan mein")
৩) "স্টেন্চ অফ কেরোসিন" ("Stench of Kerosene")
কাব্য/কবিতা-সংকলন :-
১) "Amrit Lehran" ("অমৃত লেহরেঁ"-১৯৩৬)
২) "Jiunda Jiwan" (১৯৩৯)
৩) "Trel Dhote Phul" (১৯৪২)
৪) "O Gitan Valia" (১৯৪২)
৫) "Badpam De Laa li" (১৯৪৩)
৬) "Sanjh de Laali" (১৯৪৩)
৭) "Lok Peera" ("লোক পীড়া"-১৯৪৪)
৮) "Pathar Geetey" (১৯৪৬)
৯) "Punjub Di Aawaaz" (১৯৫২)
১০) "Sunchade" ("সুনেহে"-১৯৫৫)
১১) "Ashoka Cheti" (১৯৫৭)
১২) "Kasturi" (১৯৫৭)
১৩) "Nagmani" (১৯৬৪)
১৪) "Ik si Anita" (১৯৬৪)
১৫) "Chak Nambar Chatti" (১৯৬৪)
১৬) "Uninja Din" (১৯৭৯)
বিখ্যাত বিষাদধর্মী কবিতা :-
১) তিনি "Ajj aakhaan waris shah nu" ("অজ্জ আখাঁ ওয়ারিশ শাহু নূ") নামে একটি বিষাদধর্মী কবিতা রচনা করেন, যেখানে ভারত বিভক্তির সময়কার বিপর্যয়ের প্রতি তাঁর ক্ষোভ ও রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ :-
১) অমৃতা প্রীতমের প্রথম বই অভিনীত হয়েছিল ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে "Dharti Sugar te Sippiyan", as "Kadambari" ("ধরতি সাগর তে সেপেন", অ্যাজ "কাদম্বরী")।
২) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম উপন্যাস "Pinjar" ("পিঞ্জর") ["কঙ্কাল"] অভিনীত হয়েছিল। যেখানে দেখানো হয়েছে নারী যারা বারবার ভুক্তভোগের শিকার হয়, দাঙ্গার সংকটের কাহিনী।
৩) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অভিনীত হয় তাঁর "Daaku" ("ডাকাত") রচনাটি, যেটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন বসু ভট্টাচার্য।
পত্রিকা সম্পাদনা/পত্রিকার সম্পাদক :-
১) অমৃতা প্রীতম ৩৩ বছর ধরে "Nagmani" ("নাগমনি") নামে একটি পাঞ্জাবি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন, যা তিনি ইমরাজের সঙ্গে একসঙ্গে দৌড়ে সম্পাদিত করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা :-
১) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "সুনেহে" ("Sunchade") নামক দীর্ঘ কবিতা (কবিতা-সংকলন)-র জন্য "সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার" লাভ করেন।
২) ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "পদ্মশ্রী পুরস্কার"-এ ভূষিত হন।
৩) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে : Ordre des Arts et des letters" (officer) থেকে "International Vaptasarov পুরস্কার" পান।
৪) ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "কাগজ তে ক্যানভাস" ("Kagaz Te Kanvas"-১৯৮১) ["The Paper and The Canvas"] উপন্যাসের জন্য "জ্ঞানপীঠ পুরস্কার" পান।
৫) অমৃতা প্রীতম "পাঞ্জাব রত্ন পুরস্কার" প্রথম প্রাপক পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং দ্বারা অর্পিত হয়।
৬) ১৯৮৬-১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে : রাজ্যসভার একজন সদস্য হিসাবে মনোনীত হন।
৭) ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে : ফরাসী সরকার দ্বারা "প্রজাতন্ত্রের বুলগেরিয়া" এবং "অফিসার ডিগ্রি" পান।
৮) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে : তিনি "পদ্মবিভূষণ পুরস্কার"-এ ভূষিত হন।
৯) ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে : "সাহিত্য আকাদেমি ফেলোশিপ" নির্বাচিত হন।
১০) অমৃতা প্রীতমের জীবনের শেষের দিকে তাঁকে পাকিস্তানের "পাঞ্জাবি একাডেমী পুরস্কার" প্রদান করা হয়। যা তিনি মন্তব্য করে বলেছিলেন --- "Bade dinto baad mere maike ko meri yaad aayi". (আমার মাতৃভূমি আমাকে একটি দীর্ঘ সময় পর মনে করেছে) এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাবি কবি হিসাবে তাঁকে একটি Chaddar (চাদর) পাঠানো হয়।
মৃত্যু:
অমৃতা প্রীতম সিং দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১শে অক্টোবর ৮৬ বছর বয়সে ভারতের নতুন দিল্লী শহরে মৃত্যুবরণ করেন।


তথ্যসূত্রঃ ১। উইকিপিডিয়া 
২। http://bengalisoumya.blogspot.com/2019/01/blog-post_77.html
৩। https://roar.media/bangla/main/biography/amrita-pritam-a-poet-of-love-progress-and-revolt/