Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ইতিহাস বিস্মৃত বাংলাদেশ ! বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ

ইতিহাস বিস্মৃত বাংলাদেশ ! বিজয় দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহ

Narendra Modi, Bangladesh protest, Dhaka University, Modi effigy burning, Victory Day controversy, Bangladesh anti-India sentiment, Bangladesh politics, Hasina government fall, 1971 war history, India Bangladesh relations
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নরেন্দ্র মোদির কুশপুতুল দাহকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা শুধু একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, ভারত-বিরোধী আবেগের উত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ঘিরে নতুন টানাপোড়েনের প্রতিফলন।

বিজয় দিবসে মোদির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বাংলাদেশের নাম না থাকায় একদল ছাত্র অভিযোগ তোলে যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নাকি ‘বাংলাদেশের বিজয়কে খাটো’ করেছেন। সেই অভিযোগের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে তাঁর কুশপুতুল দাহ করা হয়। মধুর ক্যান্টিনের পাশে মোদির ছবি-সহ একটি স্টিকার লাগিয়ে সেটিকে পদদলিত করার আহ্বান জানানো হয়। স্লোগানে ভেসে আসে ভারত-বিরোধী নানা বক্তব্য, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে ক্রমশ তীব্র হয়ে ওঠা রাজনৈতিক আবহেরই প্রতিচ্ছবি।

মোদির পোস্টে তিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতীয় সেনার বীরত্ব ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। এই বিষয়টিকেই কিছু ছাত্র সংগঠন ইচ্ছাকৃত অবমাননা হিসেবে ব্যাখ্যা করে। যদিও পোস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য ছিল না, এবং ভারতের বিজয় দিবসের প্রেক্ষিতে ভারতীয় সেনার ভূমিকা তুলে ধরা নতুন কিছু নয়। তবুও বাংলাদেশের কিছু মহল দাবি করে, এই পোস্ট নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে ‘ছাপিয়ে যাওয়ার’ চেষ্টা।

হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী আবেগ দ্রুত বেড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে শেখ হাসিনার সরকারের প্রধান সমর্থক হিসেবে দেখা হতো। সেই কারণে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারতকে ‘অতীতের অপশাসনের মদদদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে ইসলামপন্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠনগুলো ভারত-বিরোধী বক্তব্যকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভারতের ভূমিকা নিয়েও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা ছড়ানো শুরু হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও দাবি উঠছে যে ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় গোয়েন্দাদের ভূমিকা ছিল—যা ইতিহাসবিদরা ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ভূমিকা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ভারতীয় সেনার অংশগ্রহণ, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করা, এবং প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া—সবই ইতিহাসের অংশ। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে কিছু গোষ্ঠী এই ইতিহাসকে পুনর্লিখনের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদির কুশপুতুল দাহ সেই বৃহত্তর প্রবণতারই একটি প্রকাশ, যেখানে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নটি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রে চলে এসেছে।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট যে বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী আবেগ এখন আর শুধু কূটনৈতিক বা নীতিগত মতভেদে সীমাবদ্ধ নেই; এটি ক্রমশ পরিচয়-রাজনীতি ও ইতিহাস-রাজনীতির অংশ হয়ে উঠছে। বিজয় দিবসের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে এমন উত্তেজনা তৈরি হওয়া সেই পরিবর্তিত বাস্তবতারই ইঙ্গিত দেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code