সাবেক ছিটমহলবাসীদের ক্ষোভ: SIR ফর্মে ২০০২ এর ভোটার লিস্টের তথ্য চাওয়ায় BLO-দের ফেরাল বাসিন্দারা
ভোটার তালিকা সংশোধনের (Special Summary Revision - SSR) প্রথম দিনেই বড়সড় বাধার মুখে পড়লেন ব্লু লেভেল অফিসাররা (BLO)। সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা বাড়ি বাড়ি আসা বিএলওদের ফর্ম নিতে অস্বীকার করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের মূল দাবি, এই ফর্মগুলিতে ২০০২ সালের তথ্য চাওয়া হচ্ছে, যা তাদের বর্তমান নাগরিকত্বের প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক এবং বিভ্রান্তিকর।
সাবেক ছিটমহলবাসীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এসআইআর ফর্মে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা মূলত ২০০২ সালের। বাসিন্দাদের দাবি, ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ভারত সরকার তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করেছে। এর আগে তারা সকলেই বাংলাদেশি ছিটমহলের নাগরিক ছিলেন।
পোয়াতুর কুঠির বাসিন্দা জিনাত আলী জানান, "বিএলও আমার বাড়িতে এসআইআর-এর ফর্ম দিতে এসেছিলেন। ফর্ম পড়ে দেখলাম ২০০২ সালের তথ্য দিতে হবে, না হলে ফাঁকা ফর্ম জমা করতে হবে। আমি ২০১৫ সালে ভারতের নাগরিক হয়েছি। তার আগে ছিটমহলের বাসিন্দা ছিলাম। আমি কেমন করে ২০০২ এর তথ্য দেব? সেই কারণে ফরম গ্রহণ না করে বিএলওকে ফেরত দিয়েছি।"
করলা ছিটমহলের বাসিন্দা রহমত আলীও একই কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট ভারত সরকারের জারি করা নোটিফিকেশনের ভিত্তিতেই ২০১৬ সালে তিনি ভোটার কার্ড পান। তাদের জন্য নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সাধারণ ১১টি নথির কোনটিই নেই।
সাবেক ছিটমহলবাসীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন তাদের জন্য বিশেষ নিয়ম ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা কোনো ফর্ম জমা করবেন না। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনকে ঘোষণা করতে হবে যে ছিটমহলবাসীদের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের নথিপত্র দেখালেই এসআইআর তালিকায় নাম উঠবে।
পোয়াতুর কুঠির আরেক বাসিন্দা সাহেব আলী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "ছিটমহলের মানুষরা দুই দিন অপেক্ষা করবে। তারপরে যদি নির্বাচন কমিশন আমাদের জন্য বিশেষ নিয়ম ঘোষণা না করে, তাহলে আমরা জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও করবো।"
পোয়াতুর কুঠি গ্রামের বিএলও বিপুল মোদক জানান, তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে বাড়ি বাড়ি ফর্ম দিতে এসেছিলেন, কিন্তু ছিটমহলের বাসিন্দারা ফর্ম নেননি। তিনি বলেন, "ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।"
দীর্ঘ আন্দোলন এবং বহু প্রতীক্ষার পর ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়। সেই সময় ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ২০১৫ সালের ১লা আগস্ট থেকে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নোটিফিকেশন জারি করে। সেই নোটিফিকেশনের ভিত্তিতেই পরবর্তীকালে তারা ভোটার কার্ড পেয়েছেন।
বর্তমানে, নির্বাচন কমিশনের সাধারণ ফর্মের কারণে উদ্ভূত এই জটিলতা দ্রুত সমাধানের জন্য সাবেক ছিটমহলবাসীরা নির্বাচন কমিশনের বিশেষ ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছেন।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊