প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আশীর্বাদ: তিস্তা পাড়ের পলি-মাটিতে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা
উত্তরবঙ্গ, নভেম্বর ৩ (সম্ভাব্য তারিখ): কয়েকদিন আগের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনও টাটকা। হঠাৎ আসা তিস্তার জলে ঘর-বাড়ি ও চাষের জমি ভেসে গিয়েছিল তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের। তবে, প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেয়ালে সেই বন্যার জলই এখন পরিণত হয়েছে আশীর্বাদে। বন্যার জল নামতেই জমিতে জমে থাকা নতুন পলি-কে কাজে লাগিয়ে রবিশস্য চাষের জন্য কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন তিস্তা তীরবর্তী হাজার হাজার কৃষক।
নদীর ধারে বসবাসকারী এই মানুষগুলির কাছে বন্যা মানে চরম সর্বনাশ। কিন্তু, এই অঞ্চলের কৃষি ইতিহাস বলছে, নদীর বন্যায় বয়ে আনা পলিমাটিই তাদের জমিতে যোগ করে এক নতুন উর্বরতা। তিস্তার পানি সরে যাওয়ার পর এবারও বিস্তীর্ণ জমিতে জমেছে সেই মূল্যবান পলি। এই পলি মিশ্রিত মাটি, যা বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির, তা রবিশস্য (যেমন আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, বিভিন্ন সবজি, বাদাম, সরিষা) চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
চাষীরা জানাচ্ছেন, বন্যার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হলেও, এই পলিমাটি তাদের জন্য নতুন জীবনের দিশা দেখাচ্ছে। কারণ, পলিযুক্ত জমিতে চাষের জন্য কম সার-এর প্রয়োজন হয় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণও তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে, চাষের খরচ অনেকটাই কমে যায়, যা কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
ইতিমধ্যেই চাষাবাদের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কৃষকরা নতুন পলিমাটিকে চাষের উপযোগী করে তোলার কাজ শুরু করেছেন।
- জল সেচ ও পলি মেশানো: কৃষকরা প্রথমে জমিকে নতুনভাবে জল সেচ করছেন। এরপর জমির উপরিভাগে থাকা নতুন পলিকে চাষের মাধ্যমে মাটির গভীরে প্রবেশ করানো হচ্ছে, যাতে জমির উর্বরতা বাড়ে।
- সার প্রয়োগের প্রস্তুতি: পলি থাকায় যদিও সারের প্রয়োজনীয়তা কম, তবুও ফসলের ভালো ফলনের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে সার দিয়ে জমিকে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুত করার কাজ চলছে।
তিস্তা পাড়ের একাধিক কৃষকের ধারণা, নতুন পলি থাকার কারণে এ বছর অন্যান্য বারের তুলনায় ফসল অনেক ভালো হবে। এই আশাই তাঁদেরকে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সাহস জোগাচ্ছে।
গত কয়েক বছরে নদীর ভাঙন ও বন্যার কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিস্তা পাড়ের কৃষকরা। জমি এবং ঘরবাড়ি হারানো এই মানুষগুলির কাছে রবিশস্যের বাম্পার ফলন অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র সুযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর চরে এবং পাড়ে পলি-মিশ্রিত মাটিতে রবিশস্য চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং তা লাভজনক। যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ার মতো সমস্যাগুলি থাকলেও, আপাতত নতুন পলিতে ভরা জমিতে শীতকালীন ফসল চাষ করে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্নে বিভোর তিস্তা পাড়ের চাষীরা।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊