দিল্লি বিস্ফোরণ: ২০০ ধর্মীয় স্থানে হামলার ছক, তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য
দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর জঙ্গি ষড়যন্ত্রের চিত্র। দুই বছর ধরে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে আইইডি-র মাধ্যমে ২৬/১১-এর মতো দেশজুড়ে প্রায় ২০০টি ধর্মীয় স্থানে হামলার পরিকল্পনা করেছিল অভিযুক্তরা। রামমন্দির, কাশীধাম, অযোধ্যা-সহ বহু পবিত্র স্থানে হামলা চালিয়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা সৃষ্টি করাই ছিল মূল লক্ষ্য। রাজধানীর লালকেল্লা, ইন্ডিয়া গেট, কনস্টিটিউশন ক্লাব এবং গৌরীশঙ্কর মন্দিরের মতো স্থানে বিস্ফোরণের ছক কষা হয়েছিল। পাশাপাশি গুরুগ্রাম, ফরিদাবাদ, দেশের বড় রেলস্টেশন ও শপিং মলে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল।
এই হামলার জন্য কাশ্মীরের পুলওয়ামা, শোপিয়ান এবং অনন্তনাগের কিছু চিকিৎসককে ব্যবহার করা হয়েছিল, যাতে তারা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। ফরিদাবাদের OL10CK0458 নম্বরের একটি গাড়ি উদ্ধার হয়েছে, যার সঙ্গে মূল অভিযুক্ত ড. উমর নবির যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা। আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বিস্ফোরক মজুত ও পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। দিল্লি পুলিশ সন্দেহ করেছিল, উমরের দুটি গাড়ি ছিল, যার মধ্যে একটি লাল ফোর্ড ইকোস্পোর্ট। বুধবার সন্ধ্যায় ফরিদাবাদের খাণ্ডাওয়ালি গ্রামের কাছে গাড়িটি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায়। ফরেনসিক টিম রাতেই গাড়ি থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
এদিন দিল্লির গোবিন্দপুরী মেট্রো স্টেশনের কাছে বাস স্ট্যান্ডে একটি গাড়ি থেকে দুটি বন্দুক, চারটি মোবাইল এবং নগদ-সহ দুজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। সেই গাড়িতেও বিস্ফোরক থাকার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বিস্ফোরণে উমর নিহত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া দেহাংশ শনাক্ত করতে তার মায়ের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রায় ৪০টি নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক বিশ্লেষণ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভুটান সফর থেকে ফিরে LNJP হাসপাতালে যান এবং আহতদের খোঁজখবর নেন। রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিহতদের স্মৃতিতে দু-মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং দোষীদের শাস্তির প্রস্তাব গৃহীত হয়। যদিও সীমান্তপারের সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার নিজেই নিজের বক্তব্যের ফাঁদে আটকে গিয়েছে, কারণ আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সীমান্তপারের সন্ত্রাসকে ‘অ্যাক্ট অফ ওয়ার’ হিসেবে দেখা হবে।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণটি আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলা ছিল না, কারণ গাড়িটি কোনও ভবনে প্রবেশ করেনি বা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেনি। বিস্ফোরণের ধরন ও প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ছিল। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে বিস্ফোরণ নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে এবং গোটা ঘটনায় জইশ-ই-মহম্মদ-এর যোগ থাকার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊