পাকিস্তানে ২৭তম সংশোধনী পাসের পর সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে
পাকিস্তানের রাজনীতিতে আবারও সেনাবাহিনীর প্রভাব চরমে পৌঁছেছে। ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের সংসদে পাস হয়েছে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী, যার মাধ্যমে সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” পদে উন্নীত করা হয়েছে। এই পদটি তাকে দেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর একক সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই সংশোধনী শুধু সামরিক কাঠামো নয়, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও বিচারব্যবস্থার ভারসাম্যও বদলে দিয়েছে। সংশোধনীর ফলে:
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত হয়েছে, কারণ এখন থেকে রাষ্ট্রপতি সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষা প্রধানদের নিয়োগে স্বাধীন নন।
- সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছে, কারণ সেনাপ্রধানকে আজীবন আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, এমনকি তার পদত্যাগের পরও।
- চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি (CJCSC) পদ বিলুপ্ত হয়েছে, যা আগে তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করত।
এই পরিবর্তনকে অনেক বিশ্লেষক “সংবিধানিক অভ্যুত্থান” হিসেবে অভিহিত করছেন। এটি এমন এক “নরম অভ্যুত্থান” যা গণতন্ত্রের কাঠামোকে ভেঙে দিয়ে সেনাবাহিনীর আধিপত্যকে আইনি বৈধতা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অনেকেই “পুতুল সরকার” বলছেন, যারা এই সংশোধনীকে সমর্থন করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে।
আসিম মুনিরের এই উত্থানকে অনেকেই জিয়া-উল-হক ও আয়ুব খানের যুগের সঙ্গে তুলনা করছেন, যেখানে ধর্ম, রাষ্ট্র এবং সেনাবাহিনী একত্রে শাসন কাঠামো গঠন করেছিল। তবে মুনিরের কৌশল আরও সূক্ষ্ম, আইনি কাঠামোর ভেতর দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে, যা পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য উদ্বেগজনক।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—পাকিস্তান কি আবার সেনা শাসনের দিকে এগোচ্ছে? যদিও সরাসরি সামরিক অভ্যুত্থান হয়নি, কিন্তু আইনি ও সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী এখন কার্যত দেশের শাসনক্ষমতায়। আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত, এই পরিবর্তনের দিকে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊