Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনের এক সত্যি ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে জড়িয়ে নবদ্বীপের পোড়ামাতলা

পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনের এক সত্যি ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে জড়িয়ে নবদ্বীপের পোড়ামাতলা

নবদ্বীপের পোড়ামাতলা কালী মন্দির, পান্নালাল ভট্টাচার্য, মা কালী,


মা কালীর রূপ কল্পনা করে আজও এখানে পুজো হয় ঘটে। নদিয়ার নবদ্বীপের এই জাগ্রত পোড়ামাতলা মন্দিরের সঙ্গে জুড়ে আছে বাংলার শ্যামা সঙ্গীতের সাধকশিল্পী পান্নালাল ভট্টাচার্যের জীবনের এক আশ্চর্য পর্ব।

তখন পান্নালাল ভট্টাচার্য অনেক ছোটো। মা অন্নপূর্ণা দেবী আর বড়ো বৌদি - বড়ো দাদা, সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্যের স্ত্রী পুষ্পরানি ভট্টাচার্যের সঙ্গে পান্নালাল গিয়েছিলেন পোড়ামাতলা মন্দিরে। অন্নপূর্ণা দেবীর উদ্দেশ্য ছিল সংসারের মঙ্গল কামনায় পোড়ামাতলায় এবং ভবতারিণী মন্দিরে পুজো দেওয়া।

অন্নপূর্ণা দেবীর বড়ো বৌমা পুষ্পরাণি ছিলেন নবদ্বীপের বাগচী বাড়ির বিভূতিভূষণ বাগচীর একমাত্র কন্যা। আবার এই নবদ্বীপেই বিয়ে হয়েছিল নবদ্বীপ রায় পরিবারের সুধাংশু রায়ের সঙ্গে পান্নালাল ভট্টাচার্যের সেজদি ভগবতী দেবীর। এই দুটি সংযোগের কারণে বছরে এক- দুবার নবদ্বীপে আসতেন অন্নপূর্ণা দেবী। সঙ্গে আসতেন পান্নালাল।

সেবার মায়ের মন্দিরে পুজো দেওয়ার সময় হঠাৎই দেখা গেল পান্নালালের এক অদ্ভুত অবস্থা। কথা বলতে পারছেন না পান্নালাল। শুধু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁট দুটো অল্প অল্প নড়ছে। মা এবং বৌদি দুজনেই চিন্তিত হয়ে পড়লেন এই ঘটনা দেখে।

ছোটো ছেলের এই অবস্থা দেখে কেঁদে ফেললেন অন্নপূর্ণা দেবী। কান্না শুনে এগিয়ে এলেন মন্দিরের পুরোহিত। তিনি বেশ কিছুক্ষণ দেখলেন সেদিনের পান্নালালকে। তারপর বললেন, তুই কেন এলি বাবা? তোর তো এখানে আসার কথা ছিল না!...

পান্নালাল ভট্টাচার্যের মা এবং বৌদি দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন পুরোহিতের দিকে। পুরোহিত মশাই নিজেই বললেন তাঁদের, তোরা ভাগ্যবান মা। ও মস্ত বড়ো সাধক। কিন্তু ও তো বেশিদিন থাকবে না রে।

এগারো ভাই-বোনের মধ্যে কনিষ্ঠতম ছিলেন পান্নালাল। তিনি যখন সাত মাসের মাতৃগর্ভে, তখন তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অকালে প্রয়াত হন। সুরেন্দ্রনাথ নিজে ছিলেন হাওড়ার পায়রাটুঙ্গির জমিদার - ভাদুড়ী বংশের সন্তান। বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে তাঁরা ভট্টাচার্য উপাধি পান। সুরেন্দ্রনাথ সেই ভট্টাচার্যই ব্যবহার করতেন। পারিবারিক মতান্তরের কারণে জমিদারির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন সুরেন্দ্রনাথ। সেই সম্পত্তিতে দখল নেওয়ার কথা একবারও ভাবেননি অন্নপূর্ণা দেবী তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পরবর্তীকালীন দুর্দিনেও। পরে অবশ্য সুদিন ফেরে। সুরকার হিসেবে তাঁর বড়ো ছেলে প্রফুল্ল ভট্টাচার্য এবং সংগীত শিল্পী হিসেবে মেজো ছেলে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য প্রতিষ্ঠা পান। এই দুই দাদার চেষ্টা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণাতেই একসময় পান্নালাল হয়ে ওঠেন বাংলা শ্যামা সংগীত ধারার ভগীরথ।

ভাদুড়ী মহাশয় অর্থাৎ পরমহংস নগেন্দ্রনাথ ভাদুড়ী ছিলেন তাঁদের বংশপুরুষ। নগেন্দ্রনাথের পরমার্থ সংগীত শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ। সাধনা আর সংগীতের সেই পারিবারিক ধারা বহন করেছিলেন মহর্ষি নগেন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র ননীলাল ভাদুড়ী - সিদ্ধসাধক ধ্যানপ্রকাশ ব্রহ্মচারী। এবং সুরেন্দ্রনাথও। সেই উত্তরাধিকার বহন করেছিলেন পান্নালালও।

মাত্র ৩৬ বছরের জীবনের শেষ পর্বে মায়ের আরাধনা ছাড়া আর কিছুই বুঝতেন না পান্নালাল। মা ভবতারিণীর দর্শন পাওয়ার গভীর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে গুপ্ত সাধনা করতেন গঙ্গার ঘাটে - ঘাটে, শ্মশানে - শ্মশানে।

১৯৬৬ -তে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চলে যান পান্নালাল। সত্যি হয় নবদ্বীপের সেই পুরোহিতের ভবিষ্যদ্বাণী। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পান্নালাল ভট্টাচার্যের বড়দা, সুরকার প্রফুল্ল ভট্টাচার্যের দৌহিত্র ড. শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নিজের জীবনের একেবারে শেষ এক-দু বছর শ্মশানকেন্দ্রিক সাধন জীবনে প্রবেশ করেছিলেন ছোট দাদু। তখনও গান গাইতেন তিনি। তবে সে গান তিনি গাইতে চাইতেন শুধু মা ভবতারিণীর জন্য। তারপর এল ১৯৬৬। সত্যি হলো সেদিনের পুরোহিতের ভবিষ্যদ্বাণী। সবাইকে কাঁদিয়ে মায়ের কাছে ফিরে গেলেন মায়ের ছেলে। অকালেই। এ এক আশ্চর্য ব্যাপার।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code