উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে চলছে মা ভান্ডানি পূজা। কীভাবে সূচনা হল এই পূজার? কী রয়েছে এই পূজার বিশেষত্ব? জানুন বিস্তারিত......
তপন বর্মন, সংবাদ একলব্যঃ
মা ভান্ডানী দেবী দুর্গার আরেক রূপ। এই পূজা রাজবংশী সমাজের আদি ঐতিহ্য । উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালিত হয় মা ভান্ডানী পূজা। প্রাচীন কাল থেকেই এই পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং এক ঐতিহ্য, এক সাংস্কৃতিক উৎসব।
এই পূজা প্রচলনের নানান কাহিনী রয়েছে। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী,শারদীয়া দুর্গোৎসবের শেষে বিজয়া দশমীর দিন কৈলাসে ফেরার পথে দেবী দুর্গা হিমালয়ের পাদদেশে ঘন জঙ্গলে পথ হারান। সেই সময় তিনি সাধারণ গ্রামের মেয়ের রূপ ধারণ করে কাঁদতে থাকেন। স্থানীয় রাজবংশী মানুষ তাঁকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে আসে। পরে জানা যায়, তিনি আর কেউ নন—দেবী দুর্গা নিজেই। দেবী তখন ভক্তদের পূজার ইচ্ছা পূরণে একাদশী তিথিতে পূজার অনুমতি দেন। সেই থেকেই প্রচলন হয় মা ভান্ডানী পূজার।
অন্য এক মত অনুসারে, প্রাচীন কালে দুর্গাপূজা করতেন উচ্চবর্ণের মানুষজন। অর্থনৈতিক কারণে রাজবংশী সমাজ দুর্গাপূজা করতে পারত না। তাই তারা বিজয়া দশমীতে দেবীর কাছে পূজার দাবি জানায়। ভক্তদের অনুরোধে দেবী দুর্গা একাদশীর পূজার বিধান দেন। তখন থেকেই দেবী পূজিত হন “ভান্ডানী” নামে।
মা ভান্ডানী দেবীকে ধন-সম্পদ, বিদ্যা, শিক্ষা, জ্ঞান ও মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে মানা হয়। দেবীর বাহন বাঘ। দেবীর সঙ্গে পূজিত হন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ।
ঢাক, সানাই, শঙ্খ ও উলুধ্বনির মধ্যে ঘট আনা হয় মন্দিরে। পূজার সময় পশুবলির প্রথা প্রচলিত আছে—পাঠা, পারো (শূকর), হাঁস ইত্যাদি। অনেক ভক্ত মানত পূরণে এগুলি বলি দিয়ে থাকেন। উত্তর বঙ্গের বহু স্হানে এই পচস উপলক্ষে বড় বড় মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
স্থানীয়দের বিশ্বাস, মা ভান্ডানী পূজা করলে—
- সংসারে শান্তি আসে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি হয়
- বিদ্যা ও জ্ঞানলাভ হয় রোগ-ব্যাধি দূর হয়
- অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটে।
আজও উত্তরবঙ্গ, আসাম, নেপাল ও বাংলাদেশের রাজবংশী সমাজে পূজিত হন মা ভান্ডানী। কেবল ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, এই পূজা আজও রাজবংশী সমাজের সাংস্কৃতিক ঐক্যের প্রতীক।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊