হারিকেন মেলিসার তাণ্ডবে বিধ্বস্ত জামাইকা, কিউবা ও হাইতি: ক্যাটাগরি ৫ ঝড়ে মৃত্যু ও ধ্বংসের মিছিল
২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। হারিকেন মেলিসা, একটি ক্যাটাগরি ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়, প্রথম আঘাত হানে জামাইকায় এবং এরপর কিউবা ও হাইতিতে ধ্বংসের ছাপ রেখে যায়। এই ঝড়ের তীব্রতা, গতিবেগ এবং প্রভাব এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল যে পুরো দ্বীপপুঞ্জ যেন এক বিভীষিকাময় অধ্যায়ে প্রবেশ করে।
জামাইকায় ৪ঠা অক্টোবর রাতে হারিকেন মেলিসার প্রথম আঘাতে দ্বীপটির উপকূলীয় অঞ্চল, শহর ও গ্রাম বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ঘণ্টায় ২০০ কিমি-র বেশি গতিতে ধেয়ে আসা ঝড়ের ফলে গাড়ি, বাড়ি, পশু-পাখি সবই জলের তোড়ে ভেসে যায়। রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যায়। শহরের বিভিন্ন অংশে জল ঢুকে পড়ে, হাসপাতাল, স্কুল, বাজার সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
এই ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র এতটাই হৃদয়বিদারক যে সোশ্যাল মিডিয়ায় “Pray for Jamaica” হ্যাশট্যাগে ভরে ওঠে। বহু মানুষ চোখে জল নিয়ে ভিডিও ও ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় খেলনার মত গাড়ি ভেসে যাচ্ছে, বাড়ি ধসে পড়ছে, এবং মানুষজন আতঙ্কে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
জামাইকার পর হারিকেন মেলিসা কিউবায় প্রবেশ করে। ২৯শে অক্টোবর ভোরে সান্তিয়াগো দে কিউবায় ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হয়। প্রশাসন আগেই ৭ লক্ষের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়, কিন্তু তবুও বহু ঘরবাড়ি, কৃষি জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এবং জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হয়।
এরপর মেলিসা হাইতিতে প্রবেশ করে, যেখানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। হাইতির লা ডিগ নদীর বাঁধ ভেঙে যায়, যার ফলে আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। এখনও পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। বহু মানুষ নিখোঁজ, এবং উদ্ধারকাজ চলছে। হাইতির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলারের বেশি হতে পারে।
এই দুর্যোগের পর আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তার আহ্বান উঠেছে। জাতিসংঘ, রেডক্রস এবং অন্যান্য সংস্থা জামাইকা, কিউবা ও হাইতিতে ত্রাণ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধ এবং আশ্রয়স্থলের জন্য জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
হারিকেন মেলিসার এই তাণ্ডব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আরও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বাড়ানো।
এই মুহূর্তে জামাইকা, কিউবা ও হাইতির জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল পুনর্গঠন, পুনর্বাসন এবং মানুষের জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা। এই দুর্যোগের স্মৃতি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মনে রয়ে যাবে, কিন্তু একসঙ্গে কাজ করে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

 
 
 
 
 
 
.webp) 
 
 
 
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊