Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

NCERT-এর অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে শিবাজীর 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' ঘিরে বিতর্ক

NCERT-এর অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' ও মুঘল-মারাঠা বিতর্ক

NCERT, অষ্টম শ্রেণি, সমাজবিজ্ঞান, শিবাজী, মুঘল, বাবর, আকবর, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ইতিহাস, পাঠ্যপুস্তক, Class 8, Sociology, Shivaji, Mughals, Babur,
photo credit: social media



নয়াদিল্লি: ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (NCERT)-এর নতুন অষ্টম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকে (Social Science textbook) মারাঠাদের উত্থান (The Rise of the Marathas) শীর্ষক অধ্যায়ে শিবাজীর (Shivaji) মুঘল (Mughal) শত্রুদের শিবিরে রাতের অন্ধকারে চালানো অভিযানকে "আধুনিক দিনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক" (modern-day surgical strike) হিসেবে তুলনা করা হয়েছে। এই নতুন সংযোজন এবং মুঘল শাসকদের বর্ণনায় পরিবর্তনগুলি শিক্ষাবিদ ও ঐতিহাসিকদের মধ্যে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

নতুন বইটিতে মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শিবাজীকে একজন "কৌশলী ও প্রকৃত স্বপ্নদর্শী" (strategist and true visionary) হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, "তার জীবদ্দশাতেই তার বীরত্বপূর্ণ কাজ ভারতজুড়ে এবং এর বাইরেও কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিল।" বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিবাজী মাত্র কয়েকজন সৈন্য নিয়ে তার শত্রুর শিবিরে রাতে অভিযান চালিয়েছিলেন, যা "আধুনিক দিনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের" মতো। 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' শব্দটি বেগুনি রঙে হাইলাইট করা হয়েছে।

অন্যদিকে, মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরকে (Babur) "এক নৃশংস ও নির্মম বিজয়ী, যিনি শহরগুলির সমগ্র জনসংখ্যাকে হত্যা করেছিলেন" (brutal and ruthless conqueror, slaughtering entire populations of cities) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। 'ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র পুনর্গঠন' (Reshaping India’s Political Map) শীর্ষক অন্য একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বাবর যখন "সমরকন্দ (আধুনিক উজবেকিস্তান) থেকে বিতাড়িত" হওয়ার পর উপমহাদেশে প্রবেশ করেন, তখন তিনি "নারীদের দাস বানিয়েছিলেন" এবং "লুণ্ঠিত শহরগুলির নিহত মানুষের খুলি দিয়ে মিনার তৈরি করেছিলেন" (towers of skulls made from the slaughtered people of plundered cities)।

আকবরকে (Akbar), যাকে একসময় ইতিহাস বইয়ে 'আকবর দ্য গ্রেট' বলা হতো, তাকে "নৃশংসতা ও সহনশীলতার মিশ্রণ" (blend of brutality and tolerance) দিয়ে শাসনকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, "আকবরের বিভিন্ন ধর্মের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহনশীলতা সত্ত্বেও, প্রশাসনের উচ্চ পদে অমুসলিমদের সংখ্যালঘু রাখা হয়েছিল।"

প্রাথমিকভাবে, মুঘল এবং দিল্লি সুলতানাত (Delhi Sultanate) সপ্তম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমের অংশ ছিল। তবে, NCERT এখন সেই অধ্যায়গুলিকে মাগাধা রাজ্য (Magadha kingdom), মৌর্য (Mauryas), শুঙ্গ (Shungas) এবং সাতবাহনদের (Sātavāhanas) উপর নতুন অধ্যায় দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছে। এখন অষ্টম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক, যার নাম 'সমাজ অন্বেষণ: ভারত ও তার বাইরে' (Exploring Society: India and Beyond), দিল্লি সুলতানাত, মুঘল এবং মারাঠাদের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

NCERT একটি 'ইতিহাসের কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের উপর নোট' (Note on some darker periods in history) এবং একটি ডিসক্লেমার (disclaimer) যুক্ত করেছে। নোটে বলা হয়েছে, "নিষ্ঠুর সহিংসতা, অপশাসন বা ক্ষমতার ভুল উচ্চাকাঙ্ক্ষার ঐতিহাসিক উৎস বোঝা অতীতের ক্ষত নিরাময় এবং এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ার সেরা উপায়, যেখানে আশা করি, তাদের কোনো স্থান থাকবে না।" ডিসক্লেমারে বলা হয়েছে, "অতীতের ঘটনার জন্য আজ কাউকে দায়ী করা উচিত নয়।"

প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব (Irfan Habib) বলেছেন যে, ইতিহাস সম্পূর্ণরূপে তথ্যের উপর নির্ভরশীল, ধর্মের উপর নয়, এবং সিলেবাস থেকে অংশ বাদ দিয়ে অতীতকে পরিবর্তন করা যায় না। তিনি আরও বলেন, "রাজপুতরাও একইভাবে নিষ্ঠুর ছিলেন। এটিকে ধর্মের চশমা দিয়ে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই।" তিনি এই পরিবর্তনগুলিকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বলে অভিহিত করেছেন এবং ইতিহাসকে বিকৃত করাকে "ইতিহাসকে পৌরাণিক কাহিনীতে পরিণত করা" বলে মন্তব্য করেছেন।

জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jawaharlal Nehru University) অবসরপ্রাপ্ত ইতিহাস অধ্যাপক অরবিন্দ সিনহা (Arvind Sinha) বলেছেন যে, ইতিহাস একটি শৃঙ্খলা হিসেবে বস্তুনিষ্ঠতার উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, "পক্ষপাতিত্ব" কেবল তথ্যকে বিকৃত করে না, বরং তরুণ মনেও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। তিনি যোগ করেন, "আপনি বেছে বেছে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের মহিমান্বিত বা নিন্দিত করতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ, ঔরঙ্গজেব (Aurangzeb) সহ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্বীকার না করে শিবাজীকে বিচ্ছিন্নভাবে একজন নায়ক হিসেবে দেখা যায় না।" তিনি পাকিস্তানি পাঠ্যপুস্তক এবং তাদের "আদর্শগত চিত্রায়ন"-এর সাথে তুলনা করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনাকে সংকীর্ণ করে তোলে।

এই পরিবর্তনগুলি ভারতের ইতিহাস শিক্ষায় একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে ঐতিহাসিক সত্যতা এবং আদর্শগত প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code