আয়ুর্বেদ, যোগ ও হোমিওপ্যাথি—ভারতের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাচ্ছে!

Agreement between India and WHO



ভারত প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনন্য উদ্ভাবনের জন্য পরিচিত। আয়ুর্বেদ, যোগ, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি (সংক্ষেপে আয়ুষ)—এই পাঁচটি চিকিৎসা পদ্ধতি হাজার বছরের পুরনো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গঠিত। আধুনিক বিশ্বে যেখানে প্রাকৃতিক ও বিকল্প চিকিৎসার চাহিদা বাড়ছে, সেখানে আয়ুষ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।


আয়ুষ মন্ত্রক (আয়ুর্বেদ, যোগ, ইউনানী, সিদ্ধা এবং হোমিওপ্যাথি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মধ্যে একটি বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির অধীনে, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে এবং বৈজ্ঞানিকভাবে রেকর্ড করা হবে।


শনিবার, ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক এবং WHO-এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে, ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য WHO-এর 'আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপের শ্রেণীবিভাগ (ICHI)'-তে এখন একটি বিশেষ 'ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন মডিউল' যুক্ত করা হবে।


সরকারের ‘আয়ুষ মিশন’ এবং আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রচার বিশ্বজুড়ে মানুষের মাঝে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করেছে। আজ, বহু দেশ ভারতের আয়ুর্বেদিক ওষুধ ও প্রাকৃতিক থেরাপির দিকে ঝুঁকছে। ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ওষুধবিহীন চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আয়ুর্বেদকে গ্রহণ করছে।



মন কি বাতের ১২২তম পর্বে এই অর্জনের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন: "বন্ধুরা, আয়ুর্বেদের ক্ষেত্রেও এমন কিছু ঘটেছে, যা জেনে আপনারা খুব খুশি হবেন। গতকাল, অর্থাৎ ২৪শে মে, WHO-এর মহাপরিচালক এবং আমার বন্ধু তুলসী ভাইয়ের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপের শ্রেণীবিভাগের অধীনে একটি নিবেদিতপ্রাণ ঐতিহ্যবাহী ঔষধ মডিউলের কাজ শুরু হয়েছে। এই উদ্যোগটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষের কাছে আয়ুষকে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।"

ICHI, যা WHO-এর আন্তর্জাতিক রোগের শ্রেণীবিভাগ (ICD-11) এর পরিপূরক, কোন চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য হস্তক্ষেপ পরিচালিত হয় তা নথিভুক্ত করে। একটি ঐতিহ্যবাহী ঔষধ মডিউল অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে, আয়ুর্বেদ, যোগ, সিদ্ধ এবং ইউনানি পদ্ধতির থেরাপিগুলি - যেমন পঞ্চকর্ম, যোগ থেরাপি, ইউনানি পদ্ধতি এবং সিদ্ধ পদ্ধতি - এখন বিশ্বব্যাপী মানসম্মত পদে স্বীকৃত হবে।

এর ফলে একাধিক সুবিধা হবে:

● আয়ুষ পরিষেবার জন্য স্বচ্ছ বিলিং এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ।

● স্বাস্থ্য বীমা কভারেজে আয়ুষ চিকিৎসার মসৃণ একীকরণ।

● উন্নত হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্টেশন এবং স্বাস্থ্য গবেষণা।

● সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আয়ুষের হস্তক্ষেপের জন্য বিশ্বব্যাপী আরও বেশি সহজলভ্যতা।

এই উন্নয়ন ভারতের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগ এবং আন্তর্জাতিক মান দ্বারা সমর্থিত বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা মূলধারায় নিয়ে আসার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এখন ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসার গুরুত্ব স্বীকার করছে। আয়ুষ-এর গবেষণা ও উন্নয়নে একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও গবেষণা কেন্দ্র গঠিত হয়েছে। আয়ুর্বেদিক ঔষধ ও পদ্ধতির বৈজ্ঞানিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চলেছে।

এবার ভারতের আয়ুষ চিকিৎসা ব্যবস্থা শীঘ্রই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের সমাধান হিসেবে সামনে আসতে চলেছে। প্রাকৃতিক ওষুধ, যোগব্যায়াম ও হোমিওপ্যাথির সাহায্যে বহু রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে, আয়ুষ চিকিৎসা সহজলভ্য হবে এবং বিশ্বব্যাপী আরও জনপ্রিয়তা অর্জন করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে চুক্তির ফলে ভারতের ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন আর দেশের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্বমঞ্চেও তার শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিনের চুক্তির ফলে আয়ুষ চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাকৃতিক, কার্যকর এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পথে ভারত আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো।