কোচবিহার রাজবংশের প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে মদনমোহন ঠাকুর বাড়িতে
জগদীশ দাস, কোচবিহার:
বর্তমানে কোচবিহার শহরে শ্রীশ্রী মদনমোহন ঠাকুরবাড়িতে অবস্থিত কাঠামিয়া নাটমন্দিরে কোচবিহার রাজবাড়ির বছরের বিভিন্ন পুজো পার্বন অনুষ্ঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম কার্ত্তিক মাসের শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী পুজো। কোচবিহার রাজবংশের প্রথা মেনে ষষ্ঠী তিথিতে দেবীকে আঁশওয়ালা রুই - কাতলা মাছ দর্শন করিয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করা হয়।
কোচবিহার রাজবংশের দেবী জগদ্ধাত্রী পুজোর বৈশিষ্ট্য হলো , জগদ্ধাত্রী ঠাকুরাণী ত্রিনয়না, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। তার হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ; গলায় নাগযজ্ঞোপবীত। বাহন সিংহ করীন্দ্রাসুর অর্থাৎ হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। দেবীর গাত্রবর্ণ উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। দেবী জগদ্ধাত্রী এখানে লক্ষ্মী , সরস্বতী , গণেশ ও কার্তিক পরিবেষ্টিতা । বংশপরম্পরায় দেবী মূর্তি তৈরি করেন শহরের গুঞ্জবাড়ির মৃৎশিল্পী শৌভিক পাল ।
কোচবিহার রাজবংশের নিয়মানুসারে জগদ্ধাত্রী পুজো কার্ত্তিক মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী , অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিন পুজো হয় । দেবীর মহাস্নান এখানে দর্পণে নয় একটি প্রাচীন তরবারির ওপর করা হয়ে থাকে । এখানে পাঁঠা , কবুতর প্রভৃতি বলি দিয়ে দেবীর পুজো করা হয়ে থাকে । তবে নবমী তিথিতে দেবী জগদ্ধাত্রীর তিন বার বিশেষ পুজো ও হোম যজ্ঞ করেন পুরোহিত খগপতি মিশ্র । দশমীতে বিশেষ পুজোর পর যমুনা দীঘিতে দেবীর বিসর্জন হবে।
নদীয়ার কৃষ্ণনগরের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্যোক্তা বলা হয়ে থাকে যা আজো কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি এবং নদীয়া ও চন্দননগরের বিভিন্ন জায়গায় জাঁকজমক করে অনুষ্ঠিত হয় । কিন্ত কোচবিহার রাজপ্রাসাদে কবে থেকে এই পুজোর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এর কোনো সঠিক তথ্য নেই ।
তবে অনুমান করা হয় যে , তৎকালীন কুচবিহার রাজ্যের মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ শিক্ষালাভের জন্য ব্রিটিশ কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর তত্ত্বাবধানে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তি হন । সেই সময় সহপাঠী হিসেবে কৃষ্ণনগরের রাজকুমার সতীশচন্দ্রের সাথে প্রাসাদে বাস করবার সময় মহারাজা শ্রীশচন্দ্র রায়বাহাদুরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটে।
পরবর্তীকালে বাংলা ১২৬৬ সালের ৩০ শে শ্রাবণ মহারাজা নরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ নিজ রাজ্য কোচবিহারে ফিরে আসেন । অনুমান করা যায় যে , কৃষ্ণনগর রাজপরিবারে বিখ্যাত জগদ্ধাত্রী পুজোর অনুকরণে সেই বছরই কার্ত্তিক মাসে কোচবিহার রাজপ্রাসাদে এই পুজোর প্রচলন করেন তবে সবটাই অনুমান ভিত্তিক। কারণ কালের গর্ভে অনেক ইতিহাস হারিয়ে গেছে যাকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
0 মন্তব্যসমূহ
thanks