মনোনয়নপর্ব শেষ হতেই পঞ্চায়েতে ৬৭১, পঞ্চায়েত সমিতির ৭৬ আসন জয় তৃণমূলের 

East Burdwan tmc


সঞ্জিত কুড়ি,পূর্ব বর্ধমান:-

বৃহস্পতিবার ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোনয়নপর্ব শেষ হতেই দেখা গেল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪০১০ আসনের মধ্যে ৬৭১টি আসনে এবং ৬৪০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের মধ্যে ৭৬টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের মুখ দেখল রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। 




এমনকি কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে ১৯টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় বোর্ড গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এছাড়াও মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির ৪৫টির মধ্যে ২৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানেও তৃণমূলের বোর্ড গঠন শুধু সময়ের অপেক্ষা। 



জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের মোট ৬৬টি আসনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সিপিএম ৬৫টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ৪টি, বিজেপি ৭০টি, কংগ্রেস ৪৬টি, তৃণমূল কংগ্রেস ৬৯টি, নির্দল ও অন্যান্যরা ১০টিতে এবং বিএসপি ৮টি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। 



অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৬৪০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৫৪৬টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ৫টি, বিজেপি ৪০৯টি, কংগ্রেস ৮১টি, তৃণমূল কংগ্রেস ৬৮৪টি, নির্দল ও অন্যান্যরা ১৭টি এবং বিএসপি ১টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৪০১০ আসনের মধ্যে সিপিএম ৩০৩৯টি আসনে, ফরওয়ার্ড ব্লক ১৮টি আসনে, বিজেপি ১৯৩৪টি আসনে, কংগ্রেস ৩০১টি আসনে, তৃণমূল কংগ্রেস ৪৫৫০টি আসনে, নির্দল ও অন্যান্যরা ১৩৫টি আসনে এবং বিএসপি ২টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। 



এদিকে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসের এই জয় সম্পর্কে এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য এসটি সেলের সভাপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, এর থেকেই প্রমাণিত বাংলায় গণতন্ত্র আছে। বিরোধীদের অভিযোগ যে সম্পূর্ণ মিথ্যা তা বিরোধীদের মনোনয়ন দাখিল দেখলেই বোঝা যায়। তিনি জানিয়েছেন, বিরোধীরা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের গড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। অন‌্যদিকে, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা থেকে মনোনয়নপর্বের নির্ঘণ্ট সবেতেই রাজ্যের শাসকদল নির্ল্লজ্জ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বিরোধীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা না করেই ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই সঙ্গে মনোনয়নের জন্যও সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সময় কম দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে জাতিগত শংসাপত্র নিয়েও কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 



অপূর্ব জানিয়েছেন, বিডিও অফিসগুলিতে প্রথম দিন থেকেই তৃণমূল কংগ্রেস জমায়েত করে প্রার্থীদের ভয় দেখানো শুরু করে। বড়শুল, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম, রায়না, খণ্ডঘোষ সর্বত্রই একই চিত্র। ফলে সেই সমস্ত বাধাকে উপেক্ষা করে গড়ে ৭৫-৮০ শতাংশ আসনে তাঁদের প্রার্থীরা মনোনয়ন দাখিল করেছেন। আর জেতার ব্যাপারেও তাঁরা আশাবাদী। অপূর্ব জানিয়েছেন, ভোটের সন্ত্রাস নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁরাও অভিযোগ করেছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হলেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে দেওয়া হয় তবেই সুষ্ঠ ভোট সম্ভব। কিন্তু যদি জেলা প্রশাসন তাদের পরিচালনা করে তাহলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর আস্থা তাঁদের থাকবে না। তারপরেও তাঁরা বুক চিতিয়েই লড়াই করবেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, একদিনের মধ্যে তৃণমূলের সব আসনে প্রার্থী দেওয়াও রীতিমত সন্দেহজনক বিষয়। তাঁদের আশংকা বহু ফর্ম নির্দিষ্টভাবে পূরণ না করেই জমা নেওয়া হয়েছে। রাত জেগে সরকারী কর্মীরা তা পূরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। 



উল্লেখ্য, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে জেলা পুলিশ সুপারের বৈঠক প্রসঙ্গে অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এটা তাঁদের কাছে গা সওয়া হয়ে গেছে। নতুন কিছু নয়। তাঁরা অবাক হতেন এই ঘটনায় যদি পুলিশ সুপারের শাস্তি হত তাহলেই। কারণ তিনি আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। 



এদিকে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় সম্পর্কে এদিন বিজেপি জেলা যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ জানিয়েছেন, গত বিধানসভার আতংক এখনও তাড়া করছে বিজেপি কর্মীদের। পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে কাজ করেছে। তাঁরা চেষ্টা করেছিলেন সব আসনে প্রার্থী দিতে। কিন্তু ভয়ের পরিবেশের জন্যই অনেকে প্রার্থী হতে রাজী হননি। তিনিও জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তবে তাঁরা আশাবাদী যে সমস্ত আসনে প্রার্থী দিয়েছেন সব আসনেই তাঁরা জয়ী হবেন। তৃণমূলের আপাদমস্তক দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায় তাঁদের পক্ষেই যাবে। 



এব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সদস্য গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন সময় আরও বাড়ালে তাঁরা ১০০ শতাংশ আসনেই প্রার্থী দিতে পারতেন। তবুও তাঁরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রাজ্যের শাসকদল জায়গায় চোরা ভয়ের বাতাবরণ তৈরী করেছে। গৌরব জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে সিপিএমের সঙ্গে কিছু জায়গায় জোট হলেও সামগ্রিকভাবে কোনো জোট হয়নি।