বিস্ফোরক শুভেন্দু, নোটবন্দির সময়ে টাকা বদলের অভিযোগ



সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান :- 


নোট বন্দীর সময় রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁর স্ত্রীর নামের বিধাননগরের একটি একাউণ্ট থেকে ৪ কোটি টাকা বদল করেছিলেন। প্রাক্তন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি ১৫ কোটি মুকবেড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে বদল করেছিলেন। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। সময় এলেই তা দেখিয়ে দেবো। বর্ধমানে এক বারের মালিক, যিনি তোলামূল পার্টির যুব নেতা তার মাধ্যমেও ভাইপোর টাকা বদল করা হয়েছে। রবিবার বর্ধমানের স্বস্তিপল্লী মাঠে রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়ে আহুত সভায় বক্তব্য রাখতে এসে নোটবন্দী নিয়ে একথা বলে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। 




এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু ফের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন রাজ্যের শাসকদলকে। এদিনই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তৃণমূল দলের টাকার অংক প্রকাশিত হয়েছে। শুভেন্দু বলেন, ৫২৮ কোটি টাকা ইলেকশন বণ্ড থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে তৃণমূল। তিনি বলছেন, এই টাকার বেশিরভাগটাই এসেছে মদ্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তিনি বলেন, আইএফবি তো সরাসরিই জানিয়েছে তারা ৪২ কোটি টাকা দিয়েছে। এদিন হুংকার দিয়ে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন, সততা থাকলে তৃণমূল জানাক কোথা থেকে ৫২৮ কোটি টাকা এল? কারা সেই টাকা দিয়েছে? আর তৃণমূল যদি না পারে তাহলে তিনিই ফাঁস করবেন কারা কারা সেই টাকা দিয়েছে। 



এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, তৃণমূল দলের একটাই প্রকল্প টাকা।চুরি, পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে গুণ্ডারাজ কায়েম করাই লক্ষ্য। এদিন চাকরী দুর্নীতি নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, সবে মাত্র ৪ হাজার নাম বাতিল হয়েছে। অপেক্ষা করুন এই সংখ্যাটা ৩০-৪০ হাজারে পৌঁছে যাবে। শুভেন্দু এদিন বলেন, যাদের আয়ের কোনো হিসাব দেননা, আয়ের কোনো সংগতি নেই সেগুলি ধরার জন্য মোদিজী নোটবন্দী করেছিলেন। তিনি বলেন, বীরভূমের সিউড়ি সমবায় ব্যাঙ্কের ঘটনা ছোট্ট নমুনা। তৃণমূলের নেতারা তাদের বেআইনী টাকা বদল করেছেন। ভাইপো তার পিএকে দিয়ে এবং কিছু ক্যাডারকে দিয়ে টাকা বদল করেছেন। 



আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে শুভেন্দু এদিন বলেন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল তদন্ত করছে। তিনি ১৭টি জেলার কথা বলেছেন। তার ভিত্তিতে ১৪টি জেলায় আগামী সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল তদন্তে আসছে। আসছে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও । এখানেও আবাস যোজনার টাকায় তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরী হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও শুভেন্দু অধিকারীর সভা করার উদ্যোগ নিলেও তা ভেস্তে যায়। এদিন সেই প্রসঙ্গ তুলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু বলেন, একটা সভাকে নিয়ে কি আতংক। রাজনৈতিক আলোচনা, চারবার মাঠ বদলাতে হয়েছে। নিচের তলার পুলিশ খারাপ নয়। রেলের কাছে এন ও সি নিয়ে সভা করতে পারলাম। পোস্টার, ব্যানার সবেতে কলিগ্রাম লেখা আছে। এই ভাতারের কলিগ্রামেই সভা হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, মা অন্নপূর্ণার মাটিতে পৌষ সংক্রান্তিতে, বর্ধমানে এই সভা হচ্ছে। তাই শপথ নিন চোর ধরো জেল ভরো। এই জেলাতে সব থেকে বেশি অত্যাচার হয়েছে। শহরেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে অত্যাচার হয়েছে। মিথ্যা মামলা, শারীরিক আক্রমন হয়েছে। বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। জেলার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, পুরনো কর্মীরা সম্পদ। রাজ্যের সর্বত্র দুর্নীতি। পুলিশকে ব্যবহার করে গনতন্ত্রকে ধূলিস্যাত করা হচ্ছে। তৃণমূল দল নয় কোম্পানি। হাওড়ার এমএল গৌতম চ্যাটার্জি সেটা বলেছেন। সততার প্রতীক আর লেখে না। 




তিনি বলেন, ভাইপো কয়লা খায়, গরু খায়, মদের টাকা নেয় এটা সবাই জানেন। মেদিনীপুরের লোক মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়ে দিয়েছে। তাই তিনি এখন রেগুলার মুখ্যমন্ত্রী নন। কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী। শুভেন্দু এদিন বলেন, দেড় বছরে ৫৮ হাজার চাকরি বিক্রি করা হয়েছে। মোটা পার্থর দোকান ছিল। ৭০ এর বেশি বয়স। বাচ্চা মেয়েদের বন্ধু বানিয়েছেন। গোটা রাজ্য জুড়ে তার বান্ধবীদের চাকরি দিয়েছে। তাই ক্যারেক্টার লেস তৃণমূলকে ভোট দেবেন না পঞ্চায়েতে। তিনি বলেন, রাজ্যে একটাও শিল্প হয়নি। গাঁজার মামলায় জেলে আছে তৃনমূলেরা। তিহার জেলে যাবে কেষ্ট। নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী এদিন বর্ধমানের এক নেতা সম্পর্কে বলেন, এখানকার বড় নেতা পোস্ট পোল ভায়োলেন্সে দুর্গাপুরে সিবিআই ঘুরে এসেছে। কোনও চিন্তা নেই। তিনিও জেলে যাবেন। তিনি বলেন, অস্থায়ী হোমগার্ড নিয়োগ নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী এদিন ফের বলেন, এই জেলা থেকে বালির টাকা যাচ্ছে কালীঘাটে। বর্ধমানের জেলাশাসকের স্বামী শিলিগুড়িতে থাকে। সে এসে টাকা নিয়ে যায়। টেন্ডার করার ঘাট থেকে বেশি ঘাট রয়েছে দামোদরে। নদীখাত নষ্ট করে দিয়েছে। রাইস মিলের মালিকরা ভুয়ো একাউন্ট খুলে টাকা চুরি করেছে। সারের কালোবাজারি হচ্ছে। আলুর দাম নেই। বন্ড কিনে রেখেছে তৃণমূলের নেতারা। বড় চোরদের আমার উপর ছেড়ে দিন। আপনারা একজোট হোন, প্রতিবাদ করুন।