বীরভূমে ৩৫টি, পূর্ব বর্ধমানে ২৫টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বন্ধ করার চক্রান্ত করছে কেন্দ্র অভিযোগ বাম নেতাদের






সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান, ৫ নভেম্বর – কেন্দ্রীয় সরকার রেল সহ বিএসএনএলের সম্পত্তিকেও বিক্রি করে দিচ্ছে। কিন্তু বিক্রিত সেই অর্থ কোথায় যাচ্ছে তা নিয়ে তাঁদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। বর্ধমান টাউন হলে অল ইণ্ডিয়া বিএসএনএল – ডিওটি পেনশনার্স এ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের ৫ম দ্বি-বার্ষিক প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। 




এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের সারা ভারতের সভাপতি অনিমেষ মিত্র এবং রাজ্য সম্পাদক পীযূষ চক্রবর্তীরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রেল, টেলিফোন সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থাকে বিক্রি করার চক্রান্ত চলছে। ইতিমধ্যেই বিএসএনএলের বিভিন্ন জায়গায় থাকা ভবনকে হয় বিক্রি নতুবা ভাড়া হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। 



অনিমেষবাবুরা জানিয়েছেন, সরকারী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা তীব্র আপত্তি এবং ক্ষোভ রয়েছে। যদি বিএসএনএলের সম্পত্তি বিক্রি করে বিএসএনএলেরই উন্নয়ন খাতে তা ব্যবহার করা হত তাহলে তাঁদের আপত্তি থাকত না। কিন্তু তা হচ্ছে না। এই টাকা কোথায় যাচ্ছে তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। 



পীযূষ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ক্রমশই বেসরকারীকরণের দিকে সব কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, কেবলমাত্র বিএসএনএলে গত মে মাসেই ৫ লক্ষ এবং জুন মাসে ১৩ লক্ষ গ্রাহক বিএসএনএলকে ত্যাগ করেছেন। কেন্দ্রের "ন্যাশানাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন" পলিসি সরকারি দপ্তরের সম্পত্তিগুলি বিক্রি করা। এই তালিকায় বি এস এন এল-ও আছে। বি এস এন এল নিজেরটা নিজে বিক্রি করে নিজের উন্নতির কাজে লাগাতে পারলে আপত্তি নেই। কিন্তু এখানে বিক্রি করবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তর। আমরা এর বিরোধীতা করছি। এখনকার বি এস এন এল-এর টাওয়ার কোনও বেসরকারী কোম্পানী কিনে বি এস এন এল-কেই ভাড়া দেবে। বেসরকারী সংস্থার লাভ বাড়ানোর জন্যই এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এদিন পীযূষবাবুরা। 



তাঁরা জানিয়েছেন, গোটা দেশে ২ লক্ষ ৭৩ হাজারের মধ্যে বর্তমানে ৬২ হাজার কর্মী আছেন। গোটা দেশে ঠিকা কর্মী ৫৯ হাজারের মধ্যে বর্তমানে ৯ হাজার আছেন। অনিমেষবাবুরা এদিন আশংকা ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, বীরভূম জেলায় ৩৫ টা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কর্মী নেই, গ্রাহক নেই এই অজুহাতেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একই কারণে পূর্ব বর্ধমানেও প্রায় ২২-২৫ টা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বন্ধ হতে পারে। সেই রকমই পরিকল্পনা চলছে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেছেন। 



অনিমেষবাবু জানিয়েছেন, এখন দেশে মোবাইল গ্রাহক ১২ কোটি। মাঝখানে গ্রাহক কমছিলো। কিন্তু শেষ ২-৩ বছর আবার বাড়ছিলো। কিন্তু এখনও বিএসএনএল ফোর জি চালু করতে না পারায় ফের কমতে শুরু করেছে। মে-জুন এই দুমাসেই গ্রাহক কমেছে ১৮ লক্ষ। তিনি জানিয়েছেন, ফোর জি চালু হলে গ্রাহক কমবে না। কিন্তু বেসরকারী সংস্থাগুলি যখন ৫ জি পাবে তখন বিএসএনএল ৪ জি চালু করবে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই। 



প্রসঙ্গত তিনি জানিয়েছেন, গোটা দেশে ৭৩ লক্ষ বি এস এন এল ল্যান্ডলাইন গ্রাহক আছে। ল্যান্ডলাইনগুলি ফাইবারে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এই সম্মেলন উপলক্ষ্যে শনিবার সকালে বর্ধমান শহরে পদযাত্রা করা হয়। শনি ও রবিবার বর্ধমান টাউন হলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সম্মেলন। সংগঠনের পূর্ব বর্ধমান জেলা সহ-সভাপতি বাঞ্ছারাম ঘোষ এবং অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক শ্যামাপদ রায় জানিয়েছেন, ২ দিনের এই সম্মেলনে প্রতি জেলায় সি.জি.এইচ.এস. ওয়েলনেস সেন্টার চালু, ঠিকা শ্রমিকদের মাসে ২৬ দিনের কাজ চালু, মূল বেতনের ১৫ শতাংশ ফিটমেন্ট দিয়ে পেনশন সংশোধন, ঠিকা কর্মীদের ২ বছরের বন্ধ বেতন চালু, স্থায়ীভাবে মাসে ৩০০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা চালু, অস্থায়ী কর্মীদের সমকাজে সমবেতন চালু, শূন্যপদ পূরণ-সহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা করা হবে। দুদিনের এই সম্মেলনে জেলাগুলি থেকে প্রায় চারশো জন প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন বাঞ্ছারাম ঘোষ।