বিষমদ কাণ্ডে সরকারী মদে বিষ তত্ত্বই জোড়ালো হচ্ছে

Tarama Hotel



সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান। :-

সরকারী মদে বিষ তত্ত্বই জোড়ালো হচ্ছে। মদ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পরই অন্ধত্ব গ্রাস করেছিল মৃতদের, দাবী পরিবারের।




বর্ধমানের মদকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় এবার ক্রমশই জোড়ালো হয়ে উঠছে ' বিষমদ ' তত্ত্ব। এখনও পর্যন্ত যে ৯জন মারা গেছেন, তাঁদের মধ্যে ২টি পরিবারের পক্ষ থেকে সরাসরি জানানো হয়েছে মদ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার পর যে উপসর্গগুলি দেখা দিয়েছিল তা বিষমদের উপসর্গের মতই।




রবিবার বর্ধমানের খাগড়াগড় পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মীর মেহবুব ওরফে বাপ্পা মারা গেছেন। তাঁর বোন নেহা খাতুন জানিয়েছেন, ৭ জুলাই রাত্রি প্রায় ৮টা নাগাদ লক্ষ্মীপুর মাঠের হোটেল তারামা থেকে ক্যাপ্টেন মদ খেয়েছিলেন তাঁর দাদা। মদ খেয়ে বাড়িতে আসার পরই অসুস্থ হতে শুরু করেন। পরের দিন সকালে তীব্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসা। পেটে তীব্র জ্বালা শুরু হয়। কিছু খেতে চাইলেও কোনো খাবার খেতে পারেনি। আস্তে আস্তে কথাও বন্ধ হয়ে যায়। নেহা জানিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান দাদাকে। হাসপাতালে তাঁকে প্রথমে একটা ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তারপর অক্সিজেন দেওয়া হয় শ্বাসকষ্টের জন্য। এরপর তাকে আইসিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।




নেহা জানিয়েছেন, এই সময় দাদা জানান, তিনি কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ক্রমশ তাঁর চোখ বন্ধ হয়ে যায়। নেহা জানিয়েছেন, আইসিসিইউতে ভর্তির পর চিকিত্সকদের জিজ্ঞাসা করা হলে নেহার দাবী, সেই সময় চিকিত্সকরা তাঁদের জানান, মদ খাওয়ার জন্যই গোটা শরীরটা ড্যামেজ হয়ে গেছে। এরপরই তাঁর দাদা মারা যান।




অন্যদিকে, বর্ধমানের মদকাণ্ডে প্রথম যে ৪জনের মৃত্যু হয় তার মধ‌্যে ছিল বাহির সর্বমঙ্গলাপাড়ার হালিম সেখ। মৃত হালিম সেখের দাদা সেখ ডালিম জানিয়েছেন, হোটেল তারামা থেকে মদ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাড়ার ছেলেরাই তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁদের খবর দেন। তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, হালিমের সেই সময় মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে। দুটি চোখ পাথরের মত স্থির। গোটা শরীর নিস্তেজ। চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে নিউ বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাবার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সেখ হালিম।




এরই পাশাপাশি মৃতদের মধ্যে কেশবগঞ্জ চটির বাসিন্দা শম্ভু শর্মার ছেলে নীরজ শর্মা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা প্রায়ই কলেজ মোড়ের ওই হোটেল তারামা থেকে মদ খেতেন। যথারীতি তিনি ৮ জুলাই মদ খেয়ে বাড়ি আসেন। এরপরই শারীরিক অস্বস্তি শুরু হয়। জ্ঞান হারান। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারী দপ্তরের সুপার এনায়েত রাব্বি জানিয়েছিলেন, বিষমদে মৃত্যু হলে তার প্রথম উপসর্গ হবে অন্ধত্ব বা চোখের দৃষ্টি চলে যাওয়া। একইসঙ্গে শরীরের নার্ভাস সিস্টেমও অকেজো হয়ে পড়বে। ফলত, বর্ধমানে এখনও পর্যন্ত যে ৯জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে তার মধ্যে সরাসরি দুটি পরিবারের পক্ষে থেকেই জানানো হয়েছে অসুস্থ হওয়ার পরই তাদের অন্ধত্ব গ্রাস করে। আর এই দাবী সামনে আসতেই এবার কার্যত সরকারী মদ 'ক্যাপ্টেন'কে ঘিরে বিষমদের তত্ত্বই জোড়ালো হয়ে উঠল।




এদিন জেলা যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আবগারী দপ্তরের সামনে বিষমদ কাণ্ডের ঘটনায় বিক্ষোভও দেখানো হয়েছে। জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি গৌরব সমাদ্দারও জানিয়েছেন, সরকারী ক্যাপ্টেন মদেই যে বিষ ছিল মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই তা প্রমাণ করে গেছেন মদ্যপায়ীরা। কিন্তু সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে গোটা বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে। এদিন ক্যাপ্টেন মদের ফাঁকা বোতল গলায় ঝুলিয়ে যুব কংগ্রেস কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। দুয়ারে মদ প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল করে আবগারী দপ্তরের সামনে তাঁরা হাজির হন।




গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, গোটা সরকারটা চলছে এই ক্যাপ্টেনের টাকায়। চালাচ্ছেন আর এক ক্যাপ্টেন। স্বাভাবিকভাবেই ন্যায় বিচার পাওয়া সম্ভব নয়। এদিন বর্ধমানের এই মদকাণ্ডে নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও দাবী জানিয়েছেন তিনি। 



অন্যান্যদের মধ্যে এদিন এই বিক্ষোভ কর্মসূচীতে হাজির ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সদস্য অভিজিত ভট্টাচার্য, উজ্জ্বল সোম, নাজির হোসেন প্রমুখ কংগ্রেস নেতারাও।