মা লক্ষ্মীর আরাধানায় উপযুক্ত নিয়মাবলী ও কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়

-নিকিতা আচার্য্য 


maa laxmi




কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা । মতান্তরে, নবান্ন পূর্ণিমা বা শরৎ পূর্ণিমা বা কৌমদী পূর্ণিমা, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত এই পূর্ণিমা। 


বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ অথবা অবিভক্ত বাংলায় এই পূর্ণিমা প্রধানত কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা নামে খ্যাত। কোজাগরী অর্থাৎ কো-জাগতিক। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমা,  আর এই পূর্ণিমাকে ঘিরে ওইদিন ঘরে ঘরে বিশেষ করে বাংলার প্রতিটি ঘরে ধনসম্পদের দেবী মা লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও আবার এই পূর্ণিমায় কৃষকেরা তাদের চাষবাসের সুফল শস্যলাভের আশায় এই পুজো করে থাকে। অনেকে  ওইদিনটিতে মা লক্ষ্মীর জন্মতিথী হিসেবে ধরে পূজো করে থাকেন ।

পুরাণে কথিত, মা লক্ষ্মী ঐদিন সুর্যাস্তের পর প্রদোষকালে বাহন পেঁচাকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবীর চারদিক প্রদক্ষিণে বেরোয় মর্ত্যবাসীদের দুঃখ-দৈন্য-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করতে । তাই প্রধানত এই পুজো সন্ধ্যের পর হয়ে থাকে। 

তবে স্থান বিশেষে এই ব্রতের আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে । 

যেমন- পুর্ববঙ্গের লোকেদের মধ্যে এই ব্রত প্রধানত এঁয়ো স্ত্রীদের মধ্যে বহুলভাবে ভাবে প্রচলিত । সারাদিনের প্রচলিত নিয়মনিষ্ঠার সহিত এই ব্রত পালন করে শেষে প্রদোষ লগ্নে পাঁচালী পড়ে এই পূজা পর্বের শেষ করা হয়, তারপর দিনশেষে এঁয়ো স্ত্রীরা প্রধানত খাদ্য হিসেবে মাছ ভক্ষণের মাধ্যমে এই ব্রতের পরিসমাপ্তি ঘটায়। উল্টোদিকে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দারা পুরোপুরি নিরামিষ আহারের মাধ্যমেই এই ব্রত পালন করে থাকেন।

তবে অবিভক্ত বাংলা অথবা পুর্ববঙ্গের লোকেদের মধ্যে এই নিয়ম জেলা বিশেষে পরিবর্তিত । বিভিন্ন জেলায় তা বিভিন্ন নিয়মে তা পালন হয়ে থাকে । বর্তমান ভারতের উড়িষ্যায় এই ব্রত প্রধানত কুমারী মেয়েদের মধ্যে প্রচলিত।


পুরাণে কথিত এই দিন মা লক্ষ্মীর সাথে সাথে দেবরাজ ইন্দ্রেরও পূজো হয়ে থাকে, শুধু তাই নয় তাঁর সঙ্গে ঐরাবতেরও পূজো করা হয় । যেমন করে দেবাদিদেব মহাদেবের সাথে পার্বতী ও নন্দীকে পূজো করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ভক্তরা দিনশেষে চাঁদের উদ্দেশ্যে পূজো নিবেদন করার পর চালের পায়েস আহারের মাধ্যমেই ব্রত সম্পূর্ণরূপে পালন করে থাকেন। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বর্ণনা ব্রহ্ম পুরাণ , স্কন্দ পুরাণ ও লিঙ্গ পুরাণে পাওয়া যায়।

মা লক্ষ্মী খুব অল্পেতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু লক্ষ্মীর আরাধানায় উপযুক্ত নিয়মাবলী ও কিছু বিধিনিষেধ মেনে দেবীকে আহ্বান জানাতে হয়। 


জলচৌঁকির ওপর খড়ি মাটি ও আতব চালের মিশ্রণের তৈরী আল্পনা দিয়ে আঁকা পদ্মফুলের ওপর পদ্মপাতা বসিয়ে তার ওপর মাটির তৈরী মায়ের প্রতিমা, পেতলের মূর্তি অথবা পটচিত্র ( যেখানে যেমন ভাবে প্রচলিত ) বসিয়ে প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ যেমন- লাল চেলি, পদ্মফুল, ধানের ছড়া, কাঠের গাছকৌটো, লাল সিঁদুর, কলার ডুলি তাতে ভর্তি করে রাখা ধান-চাল ইত্যাদি সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করে প্রথমে ভগবান নারায়ণকে আহ্বান জানিয়ে পূজো শুরু করা হয়। শেষে নারকেলের নাড়ু, মোয়া, মুড়কি ও অনেকে খিচুড়ি ভোগ নিবেদন করে পাঁচালী পড়ে শাঁখ বাজিয়ে এই পুজোর পরিসমাপ্তি ঘটায়।

এভাবেই মা আসুক । প্রতিবছর আসুক। মর্ত্যবাসীর দুঃখ, দৈন্য-দুর্দশা দূর করতে আসুক। পৃথিবীর সমস্ত অতিমারী-দারিদ্রতা দূর করতে মা প্রতিবছর আসুক। প্রতিটি ঘর ভরে উঠুক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও ধনসম্পদে।