শুধু সাহিত্যে নয় খাদ্য তালিকাতেও তালের গুরুত্ব অপরিসীম


তাল





তালগাছের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পরে সে বিখ্যাত ছড়াটির কথা-

"তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
সব গাছ ছাড়িয়ে
উঁকি মারে আকাশে।" - এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ, তালপাতার নীচে বাবুই পাখীর বাস-এ এক অনিন্দ্য সুন্দর ছবি। শুধু সাহিত্যে নয় খাদ্য তালিকাতেও তালের গুরুত্ব অপরিসীম।

তালে রয়েছে একাধিক ভিটামিন, ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। এর সঙ্গে আরও আছে অ্যান্টি-অক্সিজেন ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান।


পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছে খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি .১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন .০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন .৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।

একনজরে দেখে নেই পাকা তালের উপকারিতা
  • তাল ভিটামিন বি-এর আধার। তাই ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে।

  • তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল ভূমিকা রাখে। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

  • তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক।

  • কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভালো ভূমিকা রাখে।

আসুন এখন যেনে নেই এতো পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ তাল কীভাবে খাবেন-

তাল খাওয়ার নানা উপায় আছে। তবে পাকা তালের ক্বাথ জ্বাল দিয়ে ঘন করে তালের চাছি খেয়ে থাকেন অনেকে। এর সঙ্গে নারকেল, দুধ, চিনি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে আরও নানা স্বাদের খাবার তৈরি করা হয়।


তালসত্ত্ব বা তালমিছরিঃ দুলালের তালমিছরির বিজ্ঞাপন তো শুনেছেন। না বিজ্ঞাপন দিচ্ছি না। এই যে তালমিছরি তা কিন্তু তৈরি হয় খাঁটি তালের রস থেকেই। এই তাল মিছরি অনেক উপকারী গুণে সমৃদ্ধ। যেমন- আনিমিয়া, হাড়ের সমস্যা, সর্দি কাশির উপশম, চোখের দৃষ্টি বাড়ানো, কিডনি স্টোন, পেটে ব্যথা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের আলসার, কন্সটিপেশন, গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ, ডায়রিয়া, শিশুদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট, আর্থারাইটিস, শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যা, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ও তালমিছরি খুব উপকারী।


তালের জুস: তালের ক্বাথ, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তাল যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকে, সেই সময়ের গরমে এই জুস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।


তালের বড়া: তালের ঘন নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং কখনো নারিকেল দিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর সুবাস রয়েছে।



তালের চাছিঃ তালের রসকে জ্বাল দিয়ে চাছি বানানো হয়। অনেকসময় দুধ জ্বাল দিয়ে খির বানিয়ে তাঁর সাথে তালের রসের ঘন অংশ মিশিয়ে তালের চাছি বানানো হয়, যা বেশ সুস্বাদু।