ডিজিটাল যুগে জৌলুস হারাচ্ছে গ্ৰামবাংলার কাদাখেলা

ডিজিটাল যুগে জৌলুস হারাচ্ছে গ্ৰামবাংলার কাদাখেলা

কাদাখেলা


মধুসূদন রায়,ময়নাগুড়িঃ ডিজিটাল যুগের ভিড়ে সাবেকিয়ানা ঝেড়ে ফেলে মানুষ ক্রমশ‌ই এগিয়েছে সময়ে সময়ে। আর এই আধুনিকতার জীবন-যাপনে গ্রামবাংলা থেকে মুছে যাচ্ছে পুরাতন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মুন্সিয়ানা। যার অন্যতম উদাহরণ জন্মাষ্টমীকে কেন্দ্র করে বহুদিন থেকে হয়ে আসা গ্ৰামবাংলার কাদাখেলা। যা রাজবংশী সমাজে কাদোখেলা নামেও পরিচিত। গ্রামের উঠতি প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ফলে ধীরে ধীরে অস্তিত্ব সংকটের মুখে গ্রামবাংলার কাদা খেলা। 


বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবে প্রতিবছর ভাদ্র মাসে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গ্ৰামবাংলায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে কাদাখেলা। উল্লেখ্য, প্রভু শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথি ভাদ্র মাস। আর এই ভাদ্র মাসে প্রভু শ্রী কৃষ্ণের জন্মতিথিকে কেন্দ্র করে বহু প্রাচীনকাল হতে পালিত হয়ে আসছে জন্মাষ্টমী। প্রভু শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব তিথিতে প্রতিবছর মেতে ওঠেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী গ্ৰামবাংলার বহু মানুষ। আর এই পুরাতন সংস্কৃতির আবহ দীর্ঘদিন ধরে কালের স্রোতে এগিয়ে চলছে এভাবেই। 


ভাদ্র মাসের এই তিথিতে গ্ৰামের বেশকিছু বাড়িতে পূজার্চনা দেখা যায়। জন্মাষ্টমী  তিথিতে আগের দিন সেই বাড়িগুলিতে রাত জেগে বসে যজ্ঞের আসর। সারারাত ব্যাপী কৃষ্ণ নাম ও পূজার্চনায় বাড়ির প্রবীণরা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। খোল করতাল ও হারমোনিয়ামের সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে বহু বাড়ির মন্দির চত্বর। সারারাত ব্যাপী ছোট বড়ো সকলেই গলা মেলান কৃষ্ণ নামে। 

কাদাখেলা


উৎসবের ঘনঘটা আর কলরবে আট থেকে আশি সকলেই মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন খুশিতে। পরদিন সকালবেলা ধুম পড়ে যায় কাদা খেলার প্রস্তুতি নিয়ে। মন্দিরের পাশের কোন এক যায়গায় জল কাদা করে সেখানে প্রথমে পুজো দেওয়া হয়। এরপর নারিকেল সহ বিভিন্ন ফল নিয়ে কাদা খেলায় মেতে ওঠেন নবীন-প্রবিন সকলেই। একজন একজনের প্রতিপক্ষ হয়ে তীব্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে চলে এই খেলা। একজনের পরাজয় না হ‌ওয়া অবধি চলতে থাকে খেলা। ব্যান্ড পার্টির তীব্র বাজনার তালে লড়াই যেন হয়ে ওঠে রাজকীয়। খেলায় উপস্থিত আমজনতার হাততালি আর উৎসাহ যেন বরাবরই তাতিয়ে দেয় খেলোয়াড়দের। জয়ের খিদে নিয়ে শেষ শক্তি দিয়ে নাছোড়বান্দা প্রতিপক্ষ উভয় খেলোয়াড়। কিন্তু পরিস্থিতি আর শক্তির পরাজয়ে অবশেষে হার মানে কোন একজন। 


এভাবেই কালক্রমে পুরনো সেই দিন থেকে আজ অবধি জন্মাষ্টমীর কাদা খেলার রেওয়াজ অব্যাহত গ্ৰামগুলিতে। তবে আধুনিকতা ও মুঠোফোনে বন্দী জীবন আজ আত্মকেন্দ্রিক। তাই ক্রমেই যুবসমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পুরাতন এই ঐতিহ্যগুলি থেকে। ব্যস্ততা আর যন্ত্রনির্ভর জীবনে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ফ্রি ফায়ার, ইউটিউব-এর মতো বহু প্লাটফর্ম গ্ৰাস করেছে মোক্ষম বহু সময়। যার পরিপ্রেক্ষিতে রীতি আয়োজন হলেও ডিজিটাল যুগে রঙ হারিয়ে ফেলেছে এক সময়ের জনপ্রিয় কাদা খেলা। রীতি রেওয়াজকে ধরে রাখতে বিভিন্ন যায়গায় পুজো হয় আজ‌ও তবে প্রাধান্য হারিয়ে কাদা খেলা এখন শুধু কচিকাঁচাদের কাছেই সীমাবদ্ধ।


Post a Comment

thanks