কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই

কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই


rabindra nath



রবীন্দ্রনাথের বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভায় স্তম্ভিত শরৎচন্দ্র বলেছিলেন—

"কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নেই।"  

এই সীমাহীন বিস্ময়ের কারন খুঁজতে গিয়ে কালোত্তীর্ণ সেই মহামানবের সঠিক অবস্থানটি চিহ্নিত করতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু অবলীলায় বলেছেন,"একজনের বেশী রবীন্দ্রনাথ সম্ভব নয়। স্বদেশ ও বিশ্বের কল্যানে দিব্যদৃষ্টিতে তিনি যা বলেছেন,যে কর্মতন্ত্র রচনা করেছেন, তার উপযোগিতা ও ব্যবহার্যতা ক্রমপ্রসারিত হয়ে জগতের সকল মানুষের জীবনে প্রমানিত হয়ে চলেছে প্রতিদিন। "

জীবন ও সাহিত্যের সামগ্রিতাকে তিনি সুনিপুনভাবে তাঁর লেখার শরীরে ধারণ করেছেন। এমন কোন মানবীয় অনুভূতি নেই যা তাঁর লেখায় উঠে আসেনি। এই বহুমাত্রিকতার পাশাপাশি জীবনবোধের গভীরতা ও ভাষার পরিপূর্ণতায় তার লেখা হয়ে উঠেছে কালজয়ী। বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বাংলা সাহিত্য আজ যে অবস্থানে অবস্থান করছে, পৃথিবীর মানুষকে বাংলা সাহিত্য স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে তা মূলত রবীন্দ্রনাথের অক্লান্ত চেষ্টা ও সার্থকতার ফসল। ভারতবর্ষের র্চিন্তনে, মননে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে, সাহিত্যে, শিল্পে, চিত্রে, নৃত্যে, গীতে রবীন্দ্রনাথ জড়িয়ে আছেন পরতে পরতে। একক কোন অভিধায় তাঁকে চিহ্নিত করা যায় না।



আজও রবীন্দ্রনাথ কেন প্রাসঙ্গিক? তার বোধহয় একটি বড় কারণ রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ। রবীন্দ্রনাথ আজীবন ধর্মীয় উন্মাদনার বিরোধিতা করে এসেছেন। যে ধর্ম মানুষে মানুষে ঘৃনার বীজ রোপন করে, যে ধর্ম আমাদের সামাজিক ঐক্যকে খন্ড বিখন্ড করে, রবীন্দ্রনাথ বারবার সেই ধর্মের বিরোধিতা করে এসেছেন। তাঁর এই দর্শন এক অখন্ড মানবতাবাদের নিদর্শন। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথই সেই অনন্য প্রতিভা। যার জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়ে সমগ্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। তাকে নিয়ে যত বই যত প্রবন্ধ লেখা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি সম্ভারের আয়তন হয়তো ততখানি নয়।



আজ চারিদিকে যখন মানবতা বিরোধী আন্দোলন, সেই বিপন্ন সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার সাক্ষি থাকতে হয়, সেই সময়ে মুক্তির পথ কী? রবীন্দ্রনাথ। হ্যাঁ,এককথায় রবীন্দ্রনাথ-শেষ কথায় রবীন্দ্রনাথ।



শুধু ধর্ম আলাদা বলে যারা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘর, বাড়ি, মানুষ, পুড়িয়ে মারে, রবীন্দ্রনাথের এই মানবতাবাদের কনামাত্রও যদি তাদের মধ্যে বর্ষিত হত, তাহলে হয়তো আমরা একটি অন্য ভারতবর্ষকে পেতাম। 

তবু স্বপ্ন দেখি রাতের অন্ধকার কেটে যাবে, ভোরের আলোর মত রবীন্দ্রনাথ মানুষের কাছে আরো আরো বেশি বেশি করে আশ্র‍য় হয়ে উঠবে- হয়ে উঠবে বাঁচার রসদ।


Post a Comment

thanks