সড়ক পথের ধারে থাকা লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্যের গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে




সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান 


অর্থ আত্মসাৎতের উদ্দেশ্যে বেআইনি ভাবে গাছের পর গাছ কেটে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠলো গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।এই ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে ।



গাছ কাটার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়ে সোমবার পঞ্চায়েত সদস্যর একাংশ  ব্লকের বিডিও,পঞ্চায়েত প্রধান সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি জমা পাঠান ।মঙ্গলবার অনিয়ম ও স্বজনপোষনের অভিযোগ এনে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ডেপুটেশন জমা দেয় বিক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত সদস্যরা । অভিযোগ পাওয়ার পরেই নড়ে চড়ে বসেছেন প্রশাসনের কর্তারা ।


জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের চারজন সদস্য প্রশাসনিক দপ্তরে এদিন জানান , তাদের পঞ্চায়েত এলাকায় দামোদরের উপরে রয়েছে ’হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু’।জামালপুরের দিক থেকে সেই সেতু পেরিয়ে কালাড়াঘাট হয়ে রায়না যাওয়ার জন্যে রয়েছে পূর্ত দপ্তরের সড়কপথ।সেই সড়কপথে কালাড়াঘাটের একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের পর থেকে উচিতপুরের আগের সেতু এলাকা পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে অনেক প্রকাণ্ড গাছ রয়েছে ।সেই সব গাছ কাটার জন্যে বন দপ্তর ও পূর্ত দপ্তরের কাছ থেকে লিখিত কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি। গাছ কেটে বিক্রি সংক্রান্ত কোন টেন্ডারও পঞ্চায়েত করে নি ।অথচ বিগত ৪- ৫ দিনে পূর্ত দপ্তরের সড়ক পথের দুই ধারে থাকা প্রকাণ্ড ও মূল্যবান প্রায় ৪০ টি গাছ কেটে পাচার করে দেওয়া হয়েছে । গাছের মূল্য অর্থ আত্মসাৎতের উদ্দেশ্যে জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পরিচালনাধীনে অবাধে গাছ কেটে পাচার করেদেওয়া হচ্ছে বলে পঞ্চায়েত সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিও প্রশাসনের কাছে জানিয়েছেন জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের সদস্যরা ।



পঞ্চায়েত সদস্য হারাধন পাত্র ও সঞ্চয়িতা বাগ এদিন বলেন ,“বিগত ২০- ২৫ দিনের মধ্যে বজ্রপাতে জামালপুর ব্লকের ৭ জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে ।বিশেষজ্ঞরা বলছেন , বৃক্ষ ঘাটতি ও দূষণ বৃদ্ধি মূলত কোনও এলাকায় বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম একটা কারণ । এইসব জানার পরেও খোদ পঞ্চায়েত কর্তাদের পরিচালনাধীনে বেআইনি ভাবে ’বৃক্ষ নিধন’ হচ্ছে। এই অপরাধ যারা করছেন তাঁদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত“ ।



জামালপুরের শুড়েকালনা নিবাসী তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা নেতা প্রদীপ পাল বলেন ,পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগ যুক্তি সংগত ।এই বিষয়ে প্রদীপ পাল বলেন ,পূর্ত দপ্তরের সড়ক পথের ধারে থাকা গাছ কাটার ব্যাপারে জামালপুর ২ পঞ্চায়েত কোন নিয়ম কানুন মানার তোয়াক্কা করে নি ।গাছের লক্ষ লক্ষ টাকা মূল্য-অর্থ আত্মসাৎতের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে বড় বড় গাছ দেদার কেটে পাচার করেদেওয়া হয়েছে ।যারা এই কাজে যুক্ত রয়েছে তাদের সবার শাস্তি হওয়া দরকার। প্রদীপ পাল আরও বলেন ,“সরকার স্বচ্ছ ভাবে পঞ্চায়েত চালানোর কথা বলেলেও জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে ।নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য না হওয়া কয়েকজন ব্যক্তি এখন পঞ্চায়েতের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে হয়েছেন। ওইসব স্বার্থান্বেশীদের অঙ্গুলি হেলনেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অন্ধকারে রেখে পঞ্চায়েতের পরিচালনাধীনে বেআইনি কাজ কর্ম হচ্ছে বলে প্রদীপ পাল মন্তব্য করেন । 


গাছ কাটা সহ আরও নানা কাজে অনিয়ম ও স্বজনপোষনের অভিযোগ এনে এদিন পঞ্চায়েত অফিসে ডেপুটেশন দেন বিক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত সদস্যরা।বিক্ষোভ ডেপুটেশন ঘিরে উত্তপ্ত হয় পঞ্চায়েত অফিস । পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় ।


সদস্যদের আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান উদয় দাস বলেন ,“পঞ্চায়েতের ওই এলাকায় ৩৪ টি গাছ কাটার ব্যাপারে চলতি ’জুন’ মাসের ১১ তারিখে একটি ’রেজোলিউশন’ হয়। কিন্তু গাছকাটা সংক্রান্ত সব ’প্রসিডিওর’ মানতে না পারার কারনে সেই ব্যাপারে আর এগুনো হয়নি ।তবে ওই গাছ গুলির পাহারাদার অর্থাৎ পাট্টাদার নিমাই মালিক নিজে দায়িত্ব নিয়ে গাছগুলি সম্প্রতি কেটেছেন ।গাছ কেটে বিক্রি করে নিমাই বাবু ৩৫ হাজার টাকা এদিন পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিয়ে গিয়েছেন বলে উদয় দাস জানান। 

কিন্তু পঞ্চায়েত সহ অন্য সমস্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লিখিত অনুমতি না নিয়ে একজন পাহাারাদার কিভাবে পূর্ত দপ্তরের সড়কপথের ধারে থাকা গাছগুলি কেটে বিক্রী করলেন তার কোনও উত্তর উপ- প্রধান এদিন দিতে পারেন নি । বেআইনি ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করার অর্থ পঞ্চায়েত কেন গ্রহন করলো ? এর উত্তরে উপ -প্রধান বলেন,তিনি পঞ্চায়েতের নিয়ম কানুনের ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানেন না “। 


বিজেপির জামালপুর বিধানসভার আহ্বায়ক জীতেন ডকাল বলেন ,“ যেসব গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে তার মূল্য বেশ কয়েক লক্ষ টাকা হবে । অথচ বলা হচ্ছে ওই সব গাছের মূল্য নাকি মাত্র ৩৫ হাজার টাকা । আসলে পুরোটাই একটা ’ঘোটালা’ । ঘোটালায় মদত না থাকলে বেআইনি ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করার অর্থ পঞ্চায়েত গ্রহন করতো না। আর এখন উপ- প্রধান বলছেন তিনি নাকি কিছুই জানেন না ।জীতেন বাবু এই প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন ,’উপ-প্রধানের কথা মতো এটা যেন ’চোরে-চোরে’ ভাগ বাটোয়ার মতোই ব্যাপার “।


জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,“তিনি অভিযোগ পত্র পেয়েছেন । অভিযোগের তদন্ত করার জন্যে পুলিশকে বলা হয়েছে । গাছ কাটার বিষয়ে কোন অনিয়ম থাকলে আইন মাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে“ ।